বিশেষ প্রতিবেদন:
গরিব উপভোক্তাদের হাতে সরাসরি সামাজিক প্রকল্পের টাকা দেওয়ার জন্য প্রশাসনের আধিকারিকদের নির্দেশ দিলেন পশ্চিমবাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শনিবার কাকদ্বীপে মহকুমা শাসকের দফতরে প্রশাসনিক বৈঠকে তিনি বলেন, ‘এই টাকা নিয়ে কোনও রকম দুর্নীতি আমি বরদাস্ত করব না। জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বা পঞ্চায়েত সমিতি, কাউকে টাকা দেওয়া যাবে না। যাঁর টাকা, তাঁকেই দিতে হবে।’ পাশাপাশি এ কথাও জানিয়ে দেন, এখন খুব কঠিন পরিস্থিতি। এই সময় অর্থের কোনও রকম অপচয় করা যাবে না।
এদিকে, শুক্রবারই আমফানে বিপর্যস্ত বাংলার চেহারা দেখে গিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সেই সঙ্গে প্রতিশ্রুতি দিয়ে গিয়েছিলেন এক হাজার কোটি টাকা অনুদানের। তার পর ২৪ ঘণ্টা কাটার আগেই কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রক ভারতের রিজার্ভ ব্যাঙ্ককে নির্দেশ দিয়েছে, অবিলম্বে পশ্চিমবাংলার অ্যাকাউন্টে যেন এক হাজার কোটি টাকা পাঠিয়ে দেওয়া হয়। ওই নির্দেশের কথা এদিন টুইট করে জানান কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন। তিনি জানান, পশ্চিমবাংলার জন্য এক হাজার কোটি এবং ওডিশার জন্য ৫০০ কোটি টাকা রিলিজ করে দেওয়া হয়েছে।
এদিকে, মুখ্যমন্ত্রীর প্রশাসনিক বৈঠকে যোগ দিতে বেরিয়েও যেতে পারলেন না ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ তথা মুখ্যমন্ত্রীর ভাইপো অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। বিদ্যুৎ ও পানীয় জলের দাবিতে এদিন দক্ষিণবাংলার বিভিন্ন জায়গায় স্থানীয়রা তুমুল বিক্ষোভ দেখান। কাকদ্বীপে রওনা হয়েও তেমনই প্রবল বিক্ষোভের মাঝে পড়ে গাড়ি ঘুরিয়ে ফিরে আসতে হয় সাংসদ অভিষেককে। পুলিশ ও প্রশাসনের তরফে বিক্ষোভকারীদের কাছে সাংসদের হয়ে আর্জি জানানো হলেও তাঁরা শোনেননি বলে অভিযোগ। বিষয়টি নিয়ে রাস্তা থেকেই ফোন করে মুখ্যমন্ত্রীকে ঘটনার কথা জানান অভিষেক। মুখ্যমন্ত্রীই তাঁকে ফিরে যেতে নির্দেশ দেন।
কাকদ্বীপে মুখ্যমন্ত্রীও ঘটনার কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘আমিই ওকে ফিরে যেতে বলেছি। ওর এলাকায় ক্ষয়ক্ষতি কতটা হয়েছে, সব আমাকে জানিয়েছে।’ পরে তিনি বিজেপি–কে ইঙ্গিত করে বলেন, ‘এখন রাজনীতি করার সময় নয়। রাজনীতি করবেন না।’ পাশাপাশি প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়ে বলেন, ‘এখন যতখানি পারুন শান্ত থাকুন। বিক্ষোভ দেখালে আরও মন দিয়ে কাজ করুন।’ বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুৎ সমস্যার জন্য তিনি সিইএসসি–কেই দায়ী করেন তিনি। বলেন, ‘সিপিএম আমল থেকে সিইএসসি কলকাতা ও সন্নিহিত অঞ্চলে বিদ্যুৎ দিয়ে আসছে। সিপিএমই ওই বেসরকারি সংস্থাকে বিদ্যুতের দায়িত্ব দিয়েছে। বিদ্যুৎ সমস্যার জন্য সরকার দায়ী নয়।’ তবে, তাৎপর্যপূর্ণ হল, মুখ্যমন্ত্রীর সমালোচনার পরই সিইএসসি–র তরফে মানুষের দুর্ভোগের জন্য ক্ষমা চাওয়া হয়। জানানো হয়, আগামী মঙ্গলবারের মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যাবে বলে তারা আশাবাদী।
অন্যদিকে, মুখ্যমন্ত্রীর প্রশাসনিক বৈঠকে যোগ দিতে যাওয়ার পথে বিক্ষোভের মুখে পড়ে সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের আটকে যাওয়া প্রসঙ্গে মুখ খুলেছে বিজেপি। তারা জানিয়েছে, ত্রাণ নিয়ে যাওয়ার পথে দলের রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষকে আটকে দিয়েছিল পুলিশ, তারই জবাব পেয়েছে সরকার। এবার অভিষেককে আটকে দিয়েছে জনতাই। উল্লেখ্য, আমফানের তাণ্ডবে বিপর্যস্ত মানুষের হাতে ত্রাণ দিতে বাসন্তী এবং ক্যানিংয়ে রওনা হয়েছিলেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। কিন্তু গড়িয়ার কাছে ব্যারিকেড করে পুলিশ তাঁকে আটকে দেয়।
আটকানোর কারণ হিসেবে পুলিশের বক্তব্য ছিল, লকডাউন এবং আমফানে বিপর্যয়ের সময় এক জেলা থেকে অন্য জেলায় যাওয়া নিরাপদ নয়। কিন্তু পুলিশের বক্তব্য উড়িয়ে দিয়েছেন দিলীপ ঘোষ। তিনি বলেছেন, ‘তৃণমূলের নেতারা ত্রাণের নামে রাজনীতি করতে গেলে পুলিশ তাঁদের পাহারা দিয়ে নিয়ে যায়। কিন্তু বিজেপি নেতারা গেলে সেই পুলিশই আটকে দেয়। তৃণমূলের হয়ে কাজ করাটাই এখন পুলিশের রুটিন হয়ে গিয়েছে।’