জসিম তালুকদার (চট্টগ্রাম): অবশেষে করোনা চিকিৎসায় বিশেষ অবদান রাখা চট্টগ্রামের ৫২৯ জন চিকিৎসকসহ সর্বমোট ৯১৯ জন পাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত বিশেষ প্রণোদনা। চট্টগ্রামের সরকারি পাঁচ হাসপাতালের এসব স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রায় পৌনে ৬ কোটি টাকার এ প্রণোদনা দেয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে চট্টগ্রামের কোভিড ডেডিকেটেট চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে প্রণোদনার অর্থ বিতরণ কার্যক্রম শেষও করেছেন কর্তৃপক্ষ। বাকি হাসপাতালগুলোতে কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চট্টগ্রামের পাঁচ হাসপাতালের ৫২৯ জন চিকিৎসক ও ২২০ জন নার্স এবং ১৭০ জন স্বাস্থ্যকর্মীসহ সর্বমোট ৯১৯ জনের জন্য সর্বমোট ৫ কোটি ৭২ লাখ ৬৬ হাজার ৫৩০ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়।
তবে গ্রামের পল্লী চিকিৎসক সহ বেসরকারি ভাবে কেউই এর আওতায় নেই।
বাদ পড়েছেন সরকারি হাসপাতালের আলোচ্য এ তিন ক্যাটাগরির তথা চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মী ছাড়া অন্য কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
তথ্য অনুসারে, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের ৩১৮ জন চিকিৎসক এবং ৪৮ জন স্বাস্থ্যকর্মীকে প্রণোদনা দেয়ার জন্য অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে চিঠি দেয়া হয়েছে। যেখানে এ দুই পদের সর্বমোট ৩৬৬ জনকে ২ কোটি ৮২ লাখ ৮৮ হাজার ৩১০ টাকা প্রস্তাবিত সম্মানি নির্ধারণ করা হয়েছে। যদিও এ তালিকায় বাদ পড়েছেন নার্সরা।
এছাড়া, চট্টগ্রাম প্রথম কোভিড ডেডিকেটেট হিসেবে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালও ইতোপূর্বে প্রণোদনার অর্থ ছাড় পেয়েছেন। যেখানে হাসপাতালটির ১৩৩ জন চিকিৎসক, ১৮২ জন নার্স এবং ৬৬ জন স্বাস্থ্যকর্মীকে তালিকায় যুক্ত করা হয়। সবমিলিয়ে হাসপাতালটির সর্বমোট ৩৮১ জনের জন্য বরাদ্দ দেয়া হয় ১ কোটি ৯৯ লাখ ৭৫ হাজার ২০ টাকা। আর বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অফ ট্রপিক্যাল এন্ড ইনফেকশাস ডিজিজেস (বিআইটিআইডি) হাসপাতালের ৫৪ জন চিকিৎসক, ২৭ জন নার্স এবং ২৬ জন স্বাস্থ্যকর্মীসহ সর্বমোট ১০৭ জনের জন্য বরাদ্দ দেয়া হয় ৬২ লাখ ১ হাজার ৭৮০ টাকা।
চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের আওতাধীন ১০০ শয্যার রেলওয়ে কোভিড-১৯ আইসোলেশন হাসপাতালে কাজ করা চিকিৎসক-নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীসহ সর্বমোট ৩৩ জনের জন্য বরাদ্দ এসেছে ১৩ লাখ ৯ হাজার ৮৮০ টাকা। এরমধ্যে ১১ জন চিকিৎসক, ৯ জন নার্স এবং ১৩ জন স্বাস্থ্যকর্মী রয়েছেন। বরাদ্দ পেয়েছে বন্দর স্বাস্থ্য কর্মকর্তার কার্যালয়ের নামেও। সেখানে ৩২ জনের জন্য বরাদ্দ দেয়া হয় ১৪ লাখ ৯১ হাজার ৫৪০ টাকা। যেখানে ১৩ জন চিকিৎসক, ২ জন নার্স এবং ১৭ জন স্বাস্থ্যকর্মীর জন্য বরাদ্দ এ অর্থ।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত মার্চ মাসের শেষ দিকে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল, বিআইটিআইডি, রেলওয়ে ও বন্দর হাসপাতালের জন্য বরাদ্দ পাওয়া যায়। ইতোমধ্যে জেনারেল হাসপাতাল ও বিআইটিআইডি হাসপাতালে বিতরণ কাজ শেষ করা হয়েছে। তবে কার্যক্রম চলমান আছে রেলওয়ে ও বন্দর হাসপাতালের পাওয়া বরাদ্দ। যা শীঘ্রই সংশ্লিষ্টদের মধ্যে বিতরণ করা হবে।
এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ও জেলা সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি বলেন, জেনারেল হাসপাতালে যখনই প্রণোদনার অর্থ পাওয়া গেছে, এরপরই তা বিতরণ করা হয়ে গেছে। রেলওয়ে হাসপাতালের যে অর্থ তা এখন প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। বরাদ্দ এসেছে, তবে সামান্য কিছু অফিসিয়াল কাজ শেষ হওয়ার বাকি। আশা করছি সেটাও দ্রুত সময়ের মধ্যে বিতরণ করা হবে। এদিকে, জেনারেল হাসপাতালসহ চট্টগ্রামের চারটি হাসপাতালের বরাদ্দ আরও তিন মাস আগে পেলেও এখনও অর্থ ছাড় পায়নি সবচেয়ে বেশি রোগী সম্বলিত চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতাল। শুধুমাত্র গেল ১৩ জুন অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে প্রণোদনার সম্ভাব্য পরিমাণ ও নির্দেশনা দিয়ে চিঠি দেয়া হয়েছে। যদিও ইতোমধ্যে কাজ শুরু করে দিয়েছে হাসপাতালের সংশ্লিষ্ট বিভাগ।
এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এস এম হুমায়ুন কবীর বলেন, ‘মন্ত্রণালয় থেকে এ সংক্রান্ত বিষয়ে একটি চিঠি এসেছে। তবে এখন পর্যন্ত কোন অর্থ পাওয়া যায়নি। আশা করছি শীঘ্রই অর্থ পাওয়া যাবে। এ সংক্রান্ত কাজ চলমান রয়েছে’।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, করোনা ভাইরাসে আক্রান্তদের সেবায় নিয়োজিত চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মী এ প্রণোদনা পাবেন। তবে আউটসোর্সিং বা অন্য কোনোভাবে নিয়োজিত চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের এ প্রণোদনা দেওয়া হবে না। এছাড়া প্রশাসনিক কর্মকর্তা, পরিসংখ্যান কর্মকর্তা, টেলিফোন অপারেটর, অফিস সহকারী, কম্পিউটার অপারেটর, হিসাবরক্ষক, গাড়িচালক, ইলেকট্রিশিয়ান, মুয়াজ্জিন, মেকানিক, স্টেনোটাইপিস্ট, স্টোরকিপার, মালি, অফিস সহায়কেরা এই প্রণোদনা পাবেন না বলেও উল্লেখ করা হয়।
উল্লেখ্য, করোনাভাইরাস সংক্রমণের শুরু থেকেই জীবন ঝুঁকি নিয়ে চিকিৎসা সেবা দেয়া চিকিৎসক-নার্সসহ স্বাস্থ্যকর্মীদের উৎসাহ ও উদ্দীপনা যোগাতে ২০২০ সালের ৭ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশেষ প্রণোদনা দেওয়ার ঘোষণা দেন। এর এক বছর পর ধাপে ধাপে দুই মাসের বিশেষ প্রণোদনা বরাদ্দ দিয়েছে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের বাজেট শাখা। যা ইতোমধ্যে বিতরণ কার্যক্রম শুরু হয়েছে।