বৃহস্পতিবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৫, ০৬:৫৩ অপরাহ্ন
ওয়েব ডেস্ক: শেখ হাসিনার পতনের দিন চব্বিশের ৫ আগস্ট রাজধানীর চানখারপুলে ছয়জনকে হত্যার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাফাই সাক্ষীর জবানবন্দি নেওয়ার আবেদন করেছেন শাহবাগ থানার তৎকালীন ওসি (অপারেশন) মো. আরশাদ হোসেন। আইনজীবীর মাধ্যমে আবেদন করেন তিনি। তবে এ বিষয়ে শুনানির জন্য আগামী রোববার দিন ধার্য করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
আজ (বৃহস্পতিবার) ট্রাইব্যুনাল-১ এর সদস্য অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরীর একক বেঞ্চ এই তারিখ নির্ধারণ করেন।
এ মামলায় ডিএমপির সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমানসহ আট আসামির বিরুদ্ধে আজ মূল তদন্ত কর্মকর্তাসহ ২৬ সাক্ষীর সাক্ষ্য ও জেরা শেষ হয়। পরে সাফাই সাক্ষীর আবেদন নিয়ে শুনানির জন্য সময় চান আরশাদের আইনজীবী সাদ্দাম হোসেন অভি। এরই মধ্যে তিনজন সাফাই সাক্ষীর নাম জমা দিয়েছেন তিনি। তবে তাদের সাক্ষ্য নেওয়া হবে কি না তা জানা যাবে শুনানির পর। নয়তো মামলাটি যুক্তিতর্কের ধাপে এগোবে বলে জানিয়েছে প্রসিকিউশন।
ট্রাইব্যুনালে আজ প্রসিকিউশনের পক্ষে শুনানি করেন প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম। সঙ্গে ছিলেন প্রসিকিউটর ফারুক আহাম্মদ, প্রসিকিউটর মঈনুল করিম, তারেক আবদুল্লাহ, সাইমুম রেজা তালুকদারসহ অন্যরা।
সাফাই সাক্ষী নিয়ে আরশাদের আইনজীবী অভি বলেন, আমরা তিনজনের নাম জমা দিয়েছি। আমার ক্লায়েন্টের (আরশাদ) পক্ষে সাফাই সাক্ষ্য নেওয়ার আবেদনের ওপর শুনানির জন্য সময় চেয়েছি। এ নিয়ে আগামী রোববার আমাদের শুনবেন বলে জানিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। ওই দিনই মূলত জানা যাবে এ মামলায় সাফাই সাক্ষ্য নেওয়া হবে কি না।
এ মামলার গ্রেপ্তার চার আসামি হলেন— শাহবাগ থানার সাবেক ওসি (অপারেশন) মো. আরশাদ হোসেন, কনস্টেবল মো. সুজন মিয়া, মো. ইমাজ হোসেন ইমন ও মো. নাসিরুল ইসলাম।
পলাতক আসামিরা হলেন— সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান, ডিএমপির সাবেক যুগ্ম কমিশনার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী, রমনা অঞ্চলের সাবেক অতিরিক্ত উপকমিশনার শাহ আলম মো. আখতারুল ইসলাম ও রমনা অঞ্চলের সাবেক সহকারী কমিশনার মোহাম্মদ ইমরুল।
গত ১৯ নভেম্বর মামলার মূল তদন্ত কর্মকর্তা মো. মনিরুল ইসলামের টানা তৃতীয় দিনের সাক্ষ্য সম্পন্ন হয়। ১২ নভেম্বর শুরু হয় তার জবানবন্দি। সাক্ষ্যে গত বছরের ৫ আগস্ট চানখারপুলে ছয়জনকে হত্যার পেছনে নিজের করা তদন্তের আদ্যোপান্ত উপস্থাপন করেন তিনি। জব্দকৃত সব তথ্যপ্রমাণাদি নিয়েও বর্ণনা দেন। এরপর জেরা শুরু করেন স্টেট ডিফেন্স ও আসামিপক্ষের আইনজীবীরা। টানা তিনদিনের জেরা শেষ হয় আজ। সবমিলিয়ে ২৩ কার্যদিবসে ২৬ সাক্ষীর সাক্ষ্য-জেরা সম্পন্ন হয়।
প্রসিকিউশন জানায়, জুলাই গণঅভ্যুত্থান চলাকালে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ছাত্র-জনতার ওপর যে মারণাস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী, এর ফলশ্রুতিতে ৫ আগস্ট চানখারপুল এলাকায় ছয়জন নিহত হন। এ ছাড়া তদন্তকালে তদন্ত সংস্থা যে প্রতিবেদন দিয়েছিল, এতে দেখা গেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রায় ৫০-এর বেশি সদস্য নিয়োজিত ছিলেন। তাদের বেশিরভাগই গুলি বর্ষণ করেছিলেন। এর মধ্যে এ মামলায় মাত্র তিনজনকে আসামি করা হয়েছে। কারণ তারা লেথাল ওয়েপন ব্যবহার করেছেন।
গত ১৪ জুলাই চানখারপুলের মামলাটির পলাতক চার আসামিসহ আটজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল।
উল্লেখ্য, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট চানখারপুল এলাকায় শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে গুলি চালায় পুলিশ। এতে বহু হতাহতের ঘটনার পাশাপাশি শাহরিয়ার খান আনাস, শেখ জুনায়েদ, মো. ইয়াকুব, মো. রাকিব হাওলাদার, মো. ইসমামুল হক ও মানিক মিয়া শাহরিক নিহত হন।