রোজ মাউন্টেন
—————রাবিয়া হ্যাপী
আমার দেখা পৃথিবীর ভয়ংকর সুন্দরতম জায়গা রোজ মাউন্টেন!! আমার চারপাশে একেক রঙের গোলাপ ফুলে সজ্জিত ছোট ছোট অসংখ্য পাহাড় কিন্তু আশ্চর্যের ব্যাপার হলো অসংখ্য গোলাপের মাঝে একটা গোলাপ ও ফোটেনি তবে মনে হচ্ছে এখনি বোধহয় ফুটবে!!
গোধুলীর অদ্ভুত সুন্দর হলুদ আলোয় গোটা চরাচর ভেসে যাচ্ছে এক মায়াময় সৌন্দর্যে।আমার চারপাশে অসংখ্য বিদেশি যুগল মেতে আছে তাদের ভালোবাসা-বাসিতে।সবার হাতেই এক একটা গোলাপ তবে সেগুলো ফুটে আছে!
আমি মুগ্ধ চোখে শুধু তাদের ভালোবাসায় মাখা মুখ গুলোর দিকে অপলক দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ তাকালাম। তাদেরকে দেখে আমার ও খুব ইচ্ছে হলো একটা ফুল হাতে নেই নিয়ে দেখি আমার হাতে গোলাপটা ফোটে কিনা।
ভাবতে ভাবতে আমিও ছিড়ে নিলাম একটা হালকা বেগুনি রঙের গোলাপ। আমি হাতে নিতেই আমাকে চমকে দিয়ে ফোটে উঠলো গোলাপটা,অদ্ভুত এক আনন্দের অনুভূতি ঘিরে ধরলো আমায় !!!
এদিকে ধীরে ধীরে সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছে পাহাড়ের গায়ে।
অপরুপ সৌন্দর্যের ঢালি সাজিয়ে অদূরে দাঁড়ানো রেস্টুরেন্টের দিকে চোখ পড়লে আমি এগিয়ে যাই সেদিকে।
সচ্ছ কাঁচের দেয়াল ঘেরা এই রেস্টুরেন্ট ও আমায় মুগ্ধ করলো আজ!
অনেক লোকজনের কোলাহল এড়িয়ে আমি গোলাপটা হাতে নিয়ে বসলাম রেস্টুরেন্টের এক কোনের একটা টেবিলে।
মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে রইলাম কাচের দেয়ালের বাইরে।
হঠাৎ চোখ পড়লো এক বিদেশি যুগলের দিকে,হাতে একটা ফুটন্ত নীল রঙের গোলাপ ধরে আছে ছেলেটি,প্রেম যেন ঠিকরে পড়ছে তাদের চোখ মুখ বেয়ে।তারা এসে ঢুকলো এই কাঁচ ঘেরা রেস্টুরেন্টে। আমি শুধু অবাক হয়ে তারা কি করে তাই দেখছিলাম।
রেস্টুরেন্টের ভেতরে আগে ঢুকে পড়লো মেয়েটা, তার মুখ দেখে বুঝা যাচ্ছে আজ সে খুব খুশি। পিছনে পিছনে ঢুকলো ছেলেটা,এসে দাঁড়ালো রুমের ঠিক মাঝখানটায়। মেয়েটার সামনে হাঁটু গেড়ে বসে নীল গোলাপটা মেয়েটা উদ্দেশ্যে তুলে ধরে তার ভালোবাসা নিবেদন করলো,মেয়েটার চোখ বেয়ে তখন ঝরছিল আনন্দ অশ্রু কিন্তু দুষ্টুমি মাখা মুখে মেয়ে টা বলে বসলো আমি তোমায় একটুও ভালেবাসি না!!
সাথে সাথে আমি সহ রেস্টুরেন্টের সবাই অবাক হয়ে লক্ষ্য করলাম –ছেলেটার হাতে ধরা ফুল টায় হঠাৎ আগুন জ্বলে উঠলো! ছাই হয়ে ভেসে গেলো বাতাসে!!
সেই সাথে ছেলেটার গায়ে ও আগুন ধরে গেলো,মূহুর্তে ছাই হয়ে গেলো সে-ও!মেয়েটা তখন গলা ফাটিয়ে চেচিয়ে বলছে — আমি সত্যি তোমাকে ভালোবাসি, আমি তো মজা করছিলাম তোমার সাথে, বলতে বলতে ছাই হয়ে বাতাসে ভেসে গেলো মেয়েটাও!!
আমার সামনে অবাক হয়ে দাড়িয়ে থাকা ওয়েটার কে আমি জিজ্ঞেস করলাম –এটা কি হলো?
ভয়ার্ত স্বরে ছেলেটা আমায় বললো- যা হওয়ার তাই হয়েছে! এই বাগানের ফুল ছিড়লে তা সূর্য ডুবার আগেই এমন কাউকে দিয়ে প্রেম নিবেদন করতে হয় যে তোমাকে ভালবাসে! আর সে যদি তোমার ভালবাসা মুখে প্রত্যাখ্যান করে তাহলে সাথে সাথে ই তুমি ও তোমাকে প্রত্যাখ্যাত মানুষটা এভাবেই জ্বলে পুড়ে ছাই হয়ে ভেসে যাবে বাতাসে!!!
সাথে সাথে ই আমার মনে হলো আমিও তো একটা ফুল হাতে নিয়ে বসে আছি!
আতংকে জমে গেলাম আমি, আমার এ ফুল এখন আমি কাকে দেবো? আমি তো এখানে কাউকেই চিনি না!! এক লাফে রেস্টুরেন্ট থেকে বের হয়ে এলাম আমি, ছুটতে শুরু করলাম দিগবিদিক। আমার চোখ পাগলের মতো খুজতে লাগলো এমন কাউকে যে আমায় ভালবাসে!!
প্রচন্ড তৃষ্ণায় আমার বুকটা ফেটে যাওয়ার উপক্রম তাও আমি একা ছোটাছুটি করছি সেই রোজ মাউন্টেন জুড়ে!
এদিকে সূর্য প্রায় ডুবে ডুবে…..!!!!
সারা শরীর জুড়ে অজানা এক অবসন্নতা ঘিরে ধরেছে।
আমি বোধহয় মারা যাবো এখুনি! আমার ভালবাসার হালকা বেগুনি গোলাপ টা হয়তো আর কাউকে দেয়া হবে না আমার!! আজই প্রথম খুব মায়া হলো নিজের জন্য, বুঝতে পারলাম আমি আমাকে কতটা ভালোবাসি!
হঠাৎ বিদুৎ খেলে গেলো মাথায়, আমি আমাকে অবাক করে দিয়ে আমার আমিকে ফুলটা দিয়ে নিজের কাছে নিজের ভালবাসা নিবেদন করে বসলাম!!
অপার্থিব এক ভালো লাগা কাজ করলো আমার মাঝে!!
সেই ভালোলাগাটা বড্ড অচেনা ঠেকলো আমার কাছে!!!
পাখিদের কিচিরমিচির শব্দ শুনে ঘুম ভেঙে গেলো আমার। হোকনা স্বপ্নে তার পরও নিজের প্রতি নিজের ভালবাসাটা উপলব্ধি করতে পারলাম আজ।
লেখিকা:রাবিয়া হ্যাপী,সিলেট।