1. abrajib1980@gmail.com : মো: আবুল বাশার রাজীব : মো: আবুল বাশার রাজীব
  2. abrajib1980@yahoo.com : মো: আবুল বাশার : মো: আবুল বাশার
  3. farhana.boby87@icloud.com : Farhana Boby : Farhana Boby
  4. mdforhad121212@yahoo.com : মোহাম্মদ ফরহাদ : মোহাম্মদ ফরহাদ
  5. shanto.hasan000@gmail.com : রাকিবুল হাসান শান্ত : রাকিবুল হাসান শান্ত
  6. masum.shikder@icloud.com : Masum Shikder : Masum Shikder
  7. shikder81@gmail.com : Masum shikder : Masum Shikder
  8. riyadabc@gmail.com : Muhibul Haque :

ছোট গল্প “স্বপ্নেরা যতো” দ্বিতীয় ও শেষ পর্ব : সাবিরা রেজা নুপুর

  • Update Time : মঙ্গলবার, ২৩ জুন, ২০২০
  • ৫৭২ Time View

মিথিলার মামা খুব অস্বস্তিবোধ করলেন জাহানারার কথা শুনে।
তারপর আপন মনে বলে যেতে লাগলেন।
মিথিলার মা যখন মারা যায় তার কিছুদিন পর ওর বাবা আবার বিয়ে করেন।শুরু শুরু নতুন মা খুব আদর
করলেও মিথিলার বাবা বাইরে চলে গেলে চলতো নিরব নির্যাতন।
অন্ধকার ঘরে প্রায়ই আটকে রেখে দিতেন আর সেখান একটা কালো বিড়াল থাকতো।


ছয় কি সাত বছর বয়স তখন মিথিলার।শিশু মনে এতোই প্রভাব পরে যে সে স্বাভাবিক অবস্থায় ও বিড়াল দেখা শুরু করে।

মিথিলার মামা সিরাজ সাহেব একদিন ভাগনি কে দেখতে গিয়ে বুঝতে পারেন যে মেয়ের চোখে মুখে এক ধরনের অস্বাভাবিকতা।
উনি ভাগনি কে নিজের কাছে নিয়ে আসেন।
মামা মামীর ভালোবাসা স্নেহ মমতা পেয়ে কিছু টা
স্বাভাবিক হলেও বিড়ালের ভয় পুরোপুরি মন থেকে দূর হয়নি।
গর্ভবতী হওয়ার পর সেটা চরম আকার ধারন করেছে।
সন্তান হারিয়ে এখন মিথিলা খুব চুপ হয়ে গেছে।
সিরাজ সাহেব সঙ্গে করে নিয়ে যেতে চাইলেন ভাগনি কে।

জাহানারা যেতে বললেও মিথিলা রাজি হলো না মামার
সঙ্গে যেতে।
এখন দিনেও অল্প ঘুমায়,বাচ্চার কান্না শুনতে পায় মাঝে মাঝে।মিথিলা জাহানারাকে সব খুলে বলে।
জাহানারা পরম মমতায় মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়।
এই মেয়েটাকে এতো ভালোবাসাকে উনি নিজেও জানে না।
রাহিন ইদানিং সময় দিচ্ছে মিথিলাকে তবুও মন খারাপ করে থাকে ও।

জাহানারা দুজনকে জোর করে তিন দিনের জন্য কক্সবাজার পাঠিয়ে দিলেন।
কক্সবাজার এর আগে ও বেশ কয়েকবার আসলেও
এবার রাহিন চেষ্টা মিথিলার মন ভালো করার সব চেষ্টা করছে।
বাচ্চাটা হারিয়ে রাহিন ও কম কষ্ট পায়নি কিন্তু সেটা মিথিলাকে বুঝতে দেয়নি কিছুতেই।

সাগরের লোনা জলের সঙ্গে নিজের চোখের জল যেন মিশে যেতে লাগলো।
একটু একটু করে মিথিলা রাহিনের কাছাকাছি আসলো
ঠিক আগের মতো।
নিজেকে উজার করে দিয়ে সব কষ্ট ভুলে যেতে চাইলো মিথিলা।
কিছুটা কষ্ট যেন কমেও আসলো।নব বিবাহিতদের মতো কাটিয়ে দিলো এই তিন দিন।

ঢাকায় ফিরে মিথিলা পরে পরে ঘুমায় রাতে বিড়ালের স্বপ্ন আর দেখছে না কয় রাত।
রাহিন স্বস্তির নিশ্বাস নিয়ে নিজের কাজে মন দিলো।
জাহানারা আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করেন সারা দিন রাত।
আল্লাহর রহমতে জাহানারর দোয়া কবুল হয়ে গেলো।
মিথিলা আবার মা হতে যাচ্ছে।
দুই মাসের প্রেগনেন্ট মিথিলা।

মিথিলা ঘুমায় না সারা ঘর পায়চারি করে।জরিনা
জাহানারা আগের মতোই যত্নের কোনো ত্রুটি করে না।
কিন্তু ঘুরে ফিরে গাছ ভর্তি বিড়ালের স্বপ্ন দেখতে লাগলো।ঘুমের মাঝে ফুঁপিয়ে কাদে।সজাগ থাকলে ও কাদে।
এবার জাহানারা অস্থির হয়ে আছে।কি করবে বুঝতে পারে না।

কোনো সান্ত্বনা কোনো কথা মিথিলার ভয়কে দূর করতে
পারে না।
রাহিন কে জড়িয়ে ধরে কাঁদে।এতোটা অসহায় লাগে
রাহিনের ও মিথিলার মতো কাঁদতে ও পারে না।
মাথায় হাত বুলিয়ে দেয় শিশুদের মতো কাদে যখন মিথিলা।

শরীর খারাপ হতে থাকে মিথিলার।ওর ডাক্তার মিথিলা কে একজন মনোরোগ বিশেষজ্ঞকে দেখানোর জন্য
পরামর্শ দেয়।
জাহানারা সহ সেই ডাক্তারের কাছে যায় মিথিলা।
মধ্যবয়স্ক হাসিখুশি একজন মহিলা।
মিথিলাকে শুরুতে ই মা বলে ডেকে কথা শুরু করেন।

মা আপনি কেন ভয় পান এগুলো নিয়ে আমরা আজকে আলাপ করবো না।আমরা আলোচনা করবো আপনার
গর্ভে ছোট্ট একটা শিশু যে ধীরে ধীরে বড় হচ্ছে তাকে নিয়ে।
মা বলুন তো গাছ যদি আলো বাতাস পানি না পায় তাহলে সে কি বড় হবে?
তেমনি আপনি যদি না ঘুমান ঠিক মতো না খান তাহলে সে কি সঠিকভাবে বড় হবে?
আর আরেকটা কথা মা বিড়াল কখনো কোনো মানুষকে কোনো বড় ক্ষতি করেছে তেমন ঘটনা বিড়ল।
একজন মানুষ বিড়ালের ভয়ে কাতর হবে কেন বলুন?

আজ থেকে আপনি চিন্তা করবেন বিড়াল আমার কোনো কিছু করতে পারবে না।
সঠিক সময়ে খাবার খাবেন,গোসল করবেন প্রার্থনা করুন ঘুম এমনি চলে আসবে।দেখবেন সব ঠিক হয়ে
যাবে।
শিশু কালের ভয় আপনার অনাগত সন্তানের জন্য কেন ক্ষতির কারন হবে বিষয় টা চিন্তা করুন।
আশা করি আপনার কোনো ঔষধ লাগবে না।

মিথিলার দুচোখে অঝোর ধারা।মন অনেক টা হালকা
লাগছে।
সত্যিই তো ও কেন এতো দূর্বল চিত্রের মেয়ে।একজন
মা কেন বিড়ালের ভয়ে কাবু হবে?

ডাক্তারের পরামর্শ মতো সব করতে লাগলো মিথিলা।
আর দশজনের মতো ঘুম তার কিছুতেই হলো না।কিন্তু
মনের জোর যেন হাজার গুন বেড়ে গেছে।
এখন আর কাঁদে না মিথিলা।প্রতি রাতেই বিড়াল স্বপ্ন দেখলেও ঘুমের ঘুরিয়ে হাত নেড়ে বিড়াল তাড়ায়।
পেটে থাকা শিশুটা তার অবস্থান জানান দেয়।
বয়স অনুযায়ী ওজন সামান্য কম হলেও মিথিলার ওজন বেশ বেড়েছে।
নাড়াচাড়া এখন কারো সাহায্য ছাড়া করতে পারে না
তেমন।

রাহিন ধরে ধরে হাটায় মাঝে মাঝে জরিনা ও ধরে।
মিথিলার দুদিন খুব শ্বাস কষ্ট জাহানারা সহ্য করতে
পারে না।ডাক্তার ডেট যাদিয়েছে হিসাবে এখনো মাসখানেক বাকি থাকতেই মিথিলার ব্যাথা শুরু হয়ে যায়।
রাহিন জাহানারাকে ডাকে মিথিলার অবস্থা দেখে।
জাহানারা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য মিথিলাকে
তৈরি করে রাত তখন ১২ বাজে।

খুব ভয় পেলেও জাহানারা মিথিলাকে সাহস দিয়ে যাচ্ছে।মিথিলার অস্থিরতায় রাহিন ও ভয় পেয়ে গেছে।
সবাই আল্লাহ কে ডাকতে লাগলো।
মিথিলা রাহিনের হাত ধরে আছে কিছুতেই সে হাত ছাড়ছে না।
জাহানারা সাহস দিয়ে যাচ্ছেন রাস্তায় যেতে যেতে।

রাহিন বিয়ের পর থেকে কখনও তোমাকে শান্তি দিতে পারিনি আমি।আমার কিছু হলে তুমি ক্ষমা করে দিবে তো?
মা আপনি আমার মায়ের চেয়ে ও বেশি করেছেন।
আমাকে মাফ করে দিবেন।
মিথিলার কথা শুনে জাহানারা নিজেকে ধরে রাখতে
পারছেন না।
রাহিন ও নিরবে কাঁদছে।
মিথিলা কে নিয়ে হাসপাতালে আসতে আসতে আধা ঘন্টা সময় যেন অন্তকাল ধরে চলছে।
রাহিন খুব দ্রুত ওকে এডমিট করে যাবতীয় ব্যবস্থা
করে মায়ের কাছে এসে বসলো।জাহানারা ছেলের অবস্থা অনুমান করতে পেরে ছেলের মাথায় হাত রাখলেন।
ভয় করিস না দেখবি সৃস্টিকর্তা সব ঠিক করে দিবেন।

মিথিলার অবস্থা খুব খারাপ জাহানারা হাত ধরে আছেন।এখন আর মিথিলা কান্না করছে না।ওর শ্বাস কষ্ট হচ্ছে।অক্সিজেন লাগানো হয়েছে।
ব্যাথা তীব্র না হলেও থেমে থেমে উঠছে ব্যাথা।
ভোর হয়ে আসছে ডাক্তার সিজারের জন্য পরামর্শ দিলেন কারন ওর পানি ভাঙ্গা শুরু হয়েছে অনেক আগেই।বাচ্চা শুকনোতে পরবে এজন্য সিজার করার কথা বলছেন।
মিথিলাকেও বলা হয়েছে শ্বাস কষ্ট কমে এসেছে অনেকটাই।

জাহানারাকে ওটিতে সঙ্গে রাখতে চাইছে মিথিলা।
অনেক অনুরোধের পর ডাক্তার অনুমতি দিলেন।
মিথিলার ফুটফুটে একটা ছেলে হয়েছে।মিথিলার চোখ
দিয়ে পানি পরছে।
হঠাত মিথিলার শরীর আরো খারাপ করেছে জাহানারা
কান্না করছেন আল্লাহ কে ডাকছেন।
এই শিশুটির জন্য হলেও ওকে হায়াত দাও।
রাহিন কান্না করছে শিশুটি কোলে নিয়ে আর ফরিয়াদ করে যাচ্ছে মিথিলার জন্য।

জাহানারা মিথিলার কোলের কাছে বাচ্চাটিকে শুইয়ে
দিলো।
বাচ্চার দিকে তাকিয়ে হাসছে মিথিলা।
আল্লাহ এতো সুন্দর একটা বাচ্চার জন্য কি আমাকে
বাঁচিয়ে রাখতে পারো না তুমি???

শেষ পর্ব

লেখিকা:সাবিরা রেজা নুপুর

Please Share This Post in Your Social Media

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ দেখুন..