মঙ্গলবার, ০৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৫:০৫ পূর্বাহ্ন
ওয়েব ডেস্ক: মেয়াদ শেষ হওয়ার পথে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের । কিন্তু এখনো চূড়ান্ত হয়নি সংস্কারের জুলাই সনদ। এই সনদ চূড়ান্ত হলে এর বাস্তবায়ন কীভাবে হবে, এ নিয়েও বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপিসহ রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতপার্থক্য প্রকাশ্যে এসেছে।
প্রশ্ন উঠছে, সংস্কার প্রশ্নে জুলাই সনদ চূড়ান্ত করা যাচ্ছে না কেন, সংকটটা কোথায়?
তবে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন বলছে, সনদ চূড়ান্ত করা ও এর বাস্তবায়ন পদ্ধতি ঠিক করতে তারা আবারও আলোচনা শুরু করবে আগামী সপ্তাহে।
সর্বশেষ গত ২৮শে জুলাই সনদের খসড়া পাঠানো হয় দলগুলোর কাছে। দলগুলোও তার জবাব দিয়েছে। তবে আগামী দুই একদিনের মাঝে দলগুলোর কাছে ফের সনদের পূর্ণাঙ্গ খসড়া পাঠানো হবে বলে জানিয়েছেন কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ ।
এদিকে চলতি বছরের ১৫ই ফেব্রুয়ারি থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে ছয় মাসের জন্য কাজ শুরু করে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। তাই, স্বভাবতই কমিশনের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ১৫ই আগস্ট।
যেহেতু ঐকমত্য কমিশনের সময়সীমা প্রায় শেষের দিকে, সেক্ষেত্রে এই সময়ের মাঝে যদি দলগুলো চূড়ান্ত সনদের বিষয়ে একমত না হয়, তাহলে কী হবে?
জুলাই সনদ নিয়ে বিএনপি-জামায়াত-এনসিপির মতপার্থক্য কোথায়?জুলাই সনদ নিয়ে বিএনপি-জামায়াত-এনসিপির মতপার্থক্য কোথায়?
প্রশ্নোত্তরে জামায়াত নেতা আকন্দ বলেন যে, এখানে সরকারের বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখতে হবে।
‘জুলাই সনদ কোনো একক দলের বিষয় নয়’ উল্লেখ করে তিনি বলেন আগামী সপ্তাহে কমিশন দলগুলোকে ডাকলেও সব বিষয়ে একমত হওয়া নিয়ে ‘এখনও সংশয় আছে।’
‘যদি একমত হওয়া না যায়, কাদের জন্য একমত হওয়া গেল না, সেগুলোও সনদে উল্লেখ থাকবে। এই সনদ দ্রুত স্বাক্ষর করে ঘোষণা দিয়ে এর ভিত্তিতে নির্বাচন হতে হবে’ বলেন আকন্দ।
এখানে জামায়াতের দিক থেকে কোনো ছাড় দেওয়ার বিষয় আছে? উত্তরে তিনি বলেন, ‘আমরা এমন কোনো বিষয় ধরি নাই, যেখানে জামায়াতের স্বার্থ জড়িত। সবকিছু জাতীয় স্বার্থে বলেছি। এখানে জামায়াতের ছাড় দেওয়ার কোনো বিষয় নাই।’
‘যেমন, আমরা বলেছি যে একই ব্যক্তি একই সময়ে প্রধানমন্ত্রী ও সরকার প্রধান থাকতে পারবেন না। এখানে একটি জাতীয় দল একমত হচ্ছে না। তাহলে কী করা যাবে? সরকারকে এখানে সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে দিতে হবে। জনগণের সমর্থন আদায়ে প্রয়োজনে গণভোট নিতে হবে। এই উদ্যোগ যদি সরকার না নেয়, তাহলে এটা সরকারের ব্যর্থতা’ বলেন জামায়াত নেতা আকন্দ।
এদিকে এনসিপি নেতা আরিফুল ইসলাম আদীব জানান, পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন, দলীয় পদে প্রধানমন্ত্রীর না থাকা, দুই সংসদের নির্বাচিত প্রার্থীদের গোপন ভোটে রাষ্ট্রপতির নির্বাচনের মতো কিছু বিষয়ে একমতে আসা না গেলে এনসিপি জুলাই সনদে স্বাক্ষর করবে না।
বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমদ জানিয়েছেন, তারা সবসময় জুলাই সনদ নিয়ে আলাপ-আলোচনার জন্য রাজি। তবে কমিশন চূড়ান্ত জুলাই সনদ পাঠালে ‘আলোচনা অনুযায়ী সবকিছু ঠিকঠাক থাকলেই’ বিএনপি তাতে স্বাক্ষর করবে।
‘যেকোনো সাংবিধানিক ও আইনি প্রক্রিয়ায় বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে আমাদের সম্মতি আছে। এর বাইরেও যদি কোনো প্রক্রিয়া কেউ প্রস্তাব করে, সে বিষয়ে আলোচনা হতে পারে। আমরা নিশ্চয়ই আলোচনায় অংশগ্রহণ করবো’ জানান এই বিএনপি নেতা।
একদিকে ঐকমত্য কমিশনের মেয়াদ প্রায় শেষের দিকে, অপরদিকে এখনও দলগুলো একমতে আসতে পারছে না। তাহলে এই সনদ শেষ পর্যন্ত বাস্তবায়ন হবে কীভাবে?
এ প্রসঙ্গে কমিশনের সহ-সভাপতি আলী রীয়াজ বলেন, কমিশনের পরবর্তী কাজ জুলাই সনদ বাস্তবায়নের পদ্ধতি নির্ধারণ করা। তবে দলগুলোকেই বাস্তবায়নের পথ খুঁজে বের করতে হবে। ঐকমত্য কমিশন অনুঘটকের কাজ করতে পারে।
‘সনদে যেসমস্ত জায়গায় ঐকমত্য হওয়ার, তা হয়েছে। এরপর আর এটা নিয়ে নতুন কিছু করার আমরা চেষ্টা করছি না। যেগুলো নোট অব ডিসেন্ট আছে। ওগুলো নিয়েই সনদ হবে, জানান তিনি এবং আরও বলেন, ‘সব বিষয় নিয়ে ঐকমত্য তৈরি করতে গেলে তো বছরের পর বছর লেগে যাবে। এগুলো পরামর্শ হিসাবে থাকলো। পরবর্তী নির্বাচিত সরকার এসে এগুলো দেখবে ও তার ভিত্তিতে সরকার পরিচালনা করবে বলে আমরা আশা করছি’ বলেন আলী রীয়াজ।
তবে স্বাক্ষর কবে নাগাদ হবে, তা সুনির্দিষ্ট করে বলেননি তিনি। ‘এটি নির্ভর করছে, চূড়ান্ত খসড়া ও দলগুলোর প্রতিক্রিয়ার ওপর। আমরা চাই দ্রুততার সাথে করতে, বলেন তিনি।
কিন্তু কমিশনের মেয়াদ শেষের দিকে। এর মাঝে যদি দলগুলো ঐকমত্য না হয়, তখন কী হবে?
উত্তরে আলী রীয়াজ বলেন, ‘আমি ইতিবাচকভাবে দেখতে চাই। ১৫ তারিখ আসুক। দেখা যাক।’