নিজস্ব প্রতিবেদকঃ যানবাহনে চলাচলে নিত্যনৈমিত্তিক ঘটছে হিজড়াদের চাঁদাবাজির উপদ্রব। ইদানিং টঙ্গী থেকে মহাখালী পর্যন্ত বাসযাত্রায় এই হিজড়াদের চাঁদা আদায়ের উপদ্রব বেশি দেখতে পাওয়া যায়। একজন ছাত্র যখন বাসে যাতায়াত করে তখন তার কাছে টাকা না থাকাটা অসম্ভব কিছু নয়। কিন্তু টাকা না দিলে হিজড়ারা হেনস্তা করার ব্যাপারটা খুবই জঘন্য। আর তারা কেন এমন চাঁদাবাজি করবে। বর্তমান সরকার হিজড়াদের জন্য ভাতা দেওয়া থেকে শুরু করে নানারকম সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করেছে। এমতাবস্থায়ও এরূপ চাঁদাবাজি জনভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। হিজড়াদের চাঁদাবাজি বন্ধে প্রসাশনের নীরব ভূমিকা রহস্যজনক!
ট্রাফিক সংকেতে যানবাহন থামার পর হিজড়ারা সামনে এসে দাঁড়ালে যাত্রীদের কিছু করার থাকে না। তাদের সঙ্গে তর্ক করলে যাত্রীদের আরও বিব্রতকর পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হয়। রবিবার (২১ জানুয়ারি) দেখা যায়, হিজড়াদের একটি দল মহাখালী রেলক্রসিংয়ে সিগন্যাল পড়লেই দৌড়ে বাসে উঠে যাত্রীদের কাছে টাকা দাবি করছে, না দিলে যাত্রীদের অশ্লীল ভাষায় গালাগাল দিচ্ছে।
এক ভুক্তভোগী অভিযোগ করেন, টঙ্গী থেকে মহাখালী বাসে যাতায়াতকালে হিজড়াদের উপস্থিতি আশংকাজনকভাবে বেড়েছে। তারা ট্রাফিক সিগন্যালে আটকে পড়া যানবাহনে কিংবা যাত্রী ওঠা নামা করার সময় গাড়িতে উঠে যাত্রীদের কাছ থেকে একপ্রকার জোর করেই টাকা আদায় করছে। বিশেষ করে বাসে মহিলা যাত্রী থাকলে টাকা না দিলে হিজড়ারা কাপড় খুলে অশ্লীলতা করে। তখন লজ্জায় পড়ে বাধ্য হয়ে তাদের টাকা দিতে হয়।
বনানী নেভি হেডকোয়ার্টার সিগন্যালে বাস থামলে দেখা যায়, দুজন হিজড়া বাসে উঠে প্রতিবেদকের পাশের সিটের ছেলের কাছে টাকা চায়। ছেলেটির কাছে পর্যাপ্ত টাকা ছিল না বলে সে টাকা দিতে অসম্মতি জানায়। কিন্তু পরিতাপের বিষয় হলো- সেই ছেলেটি টাকা দিতে না চাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সেই হিজড়াদের একজন তার শরীরের কাপড় খুলে ছেলেটির সঙ্গে অশ্লীল গালিগালাজ শুরু করে। বাসভর্তি মহিলা যাত্রী থাকায় অন্য আরেকজন সেই ছেলেটির হয়ে টাকা দিয়ে হিজড়াদের বিদায় করে।
সূত্রমতে, দেশে হিজড়াদের টাকা তোলা নতুন কিছু নয়। আগে মানুষ যা দিত, তা নিয়েই খুশি থাকত হিজড়ারা। কিন্তু ইদানীং তাদের আচরণ বদলে গেছে। রাস্তাঘাট, বাসাবাড়ি, দোকানপাট যেখানে-সেখানে টাকার জন্য মানুষকে নাজেহাল করছে তারা। বিভিন্ন পয়েন্টে একাধিক হিজড়া তালিকা করে একেক সার্ভিসে চাঁদা উঠিয়ে থাকে। প্রশাসন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে না বলে তারা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।
এছাড়া বিয়ে বাড়ি অথবা শিশু জন্ম নিলে বিভিন্ন বাসাবাড়িতে হাজির হয় হিজড়ারা। এসময় তারা মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করে। টাকা না দিলে বিয়ে বাড়িতে মেহমানদের সামনে কাপড় খুলে অশ্লীলতা করে। শিশু জন্ম নিলে সে বাসায় টাকা না পেলে বাচ্চা ছিনিয়ে নিতে দেখা যায় হিজড়াদের। এসব ক্ষেত্রে নানারকম সোর্সের সহায়তা নেয় হিজড়ারা। ট্রেনেও ব্যাপকহারে চাঁদাবাজি করতে দেখা যায় হিজড়াদের। অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি, শরীরের বিভিন্ন স্পর্শকাতর স্থানে হাত দেওয়া ও গালমন্দ করাসহ নানাভাবে উত্ত্যক্ত করে যাত্রীদের।
কেন হিজড়াদের বাসে তুলে যাত্রীদের বিব্রতকর অবস্থায় রাখেন এ বিষয়ে জানতে চাইলে আলম এশিয়া বাসের কন্ট্রাকটার সুমন মিয়া বলেন, ‘ভাই আমরাও নিরুপায়। বাসে না উঠতে দিলে গ্লাস ভাঙতে চায়।’
মহাখালী-গুলশান পথে চলাচলকারী আলিফ পরিবহনের একটি বাসে উঠে পড়ে দুজন হিজড়া। প্রত্যেক যাত্রীর কাছে গিয়ে টাকা চাইতে থাকে। কেউ দিতে অপারগতা প্রকাশ করলেই গায়ে হাত দিচ্ছিল, আজেবাজে কথা বলছিল। তারা বাস থেকে নেমে যেতেই একাধিক যাত্রী বললেন, হিজড়াদের টাকা আদায় এখন রীতিমতো উৎপাতে পরিণত হয়েছে। হিজড়াদের পুনর্বাসনের জন্য সরকারের এখনই ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।