প্রত্যয় নিউজ ডেস্ক: মিনিয়াপোলিস পুলিশ হেফাজতে কৃষ্ণাঙ্গ জর্জ ফ্লয়েড হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে রবিবারও যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন শহরে বিক্ষোভ অব্যাহত রয়েছে। এই নিয়ে টানা ছয় দিন বিক্ষোভ চলছে। অন্তত ৪০টি শহরে কারফিউ জারি করা হয়েছে। ওয়াশিংটন ডিসিসহ ১৫টি অঙ্গরাজ্যে সেনাবাহিনীকে সক্রিয় করা হয়েছে। মিনিয়াপোলিস ও মিনেসোটার সেন্ট পল এলাকায় আন্তঃঅঙ্গরাজ্য মহাসড়কে কয়েক হাজার মানুষ শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন। নিউ ইয়র্কে পুলিশের মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছে প্রতিবাদকারীরা। বিক্ষোভকারীদের দাবি, ফ্লয়েড হত্যায় জড়িত চার পুলিশ কর্মকর্তার বিচার। যুক্তরাষ্ট্র ছাড়িয়ে ইউরোপের কয়েকটি দেশেও বিক্ষোভ হয়েছে।
ফ্লয়েডের মৃত্যুর ঘটনায় মিনিয়াপোলিস পুলিশ বিভাগ তাদের চার কর্মকর্তাকে তাৎক্ষণিকভাবে বরখাস্ত করে। এদের মধ্যে ফ্লয়েডের ঘাড়ে হাঁটু তুলে দেওয়া ৪৪ বছর বয়সী ডেরেক চৌবিনও আছেন। গ্রেফতারের পর ডেরেকের বিরুদ্ধে ফ্লয়েডকে হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে। রবিবার সন্ধ্যায় মিনেসোটার রাজধানী সেন্ট পল-এ বিক্ষোভকারীরা জড়ো হন এবং মিছিল করেন। সন্ধ্যার শেষ দিকে কয়েক হাজার বিক্ষোভকারী কালো পোশাক পরে আরেকটি মহাসড়ক অবরোধ করে। এসময় তারা স্লোগান দেন ‘ব্ল্যাক লাইভ ম্যাটার’ ও ‘জর্জের জন্য ন্যায়বিচার’। মহাসড়কেই হাঁটু গেড়ে বসে বিক্ষোভকারীরা কিছুক্ষণ নীরবতা পালন করে।
জেসমিন হওয়েল নামের ২৭ বছরের এক বিক্ষোভকারী বলেন, এটি শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ। নীরবতাও শক্তিশালী হতে পারে। ঐক্য, ক্ষমতা ও সংগঠনের পাশাপাশি এই একটি বার্তাও আমরা ছড়িয়ে দিতে চাচ্ছি। তিনি জানান, সবাইকে শান্ত মনে হচ্ছে এবং এটি খুব ভালো সময়। শেষ পর্যন্ত এমন পরিস্থিতি থাকার বিষয়ে আশাবাদী তিনি। মিনিয়াপোলিসের বিক্ষোভ ধীরে ধীর কম সহিংসতার দিকে গড়ালেও অন্যান্য শহরে তা বাড়ছে। রবিবার রাতে বেশ কয়েকটি শহরে কারফিউ জারি করা হয়েছে। সেনাবাহিনী ন্যাশনাল গার্ডের সদস্যরা বিক্ষোভ অবলোকন ও টহল দিয়েছে।
ওয়াশিংটন ডিসিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাসভবন ও কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ হয়েছে। এখানে সড়কে আগুন লাগিয়ে বিক্ষোভ করেন প্রতিবাদকারীরা। মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন’র সরাসরি প্রচারিত ফুটেজে দেখা গেছে, নিউ ইয়র্ক সিটিতে পুলিশ বিপুল সংখ্যক বিক্ষোভকারীকে জোর করে সরানোর চেষ্টা করছে। বিক্ষোভকারীরা পুলিশের সঙ্গে উত্তেজনাকর মুহূর্তের ছবি ও ভিডিও প্রকাশ করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বেশি শ্বেতাঙ্গ অধ্যুষিত অঙ্গরাজ্যে পোর্টল্যান্ডের মাইন শহরে প্রায় ৩০০ মানুষ বিক্ষোভ করেছেন। এখানে সব বর্ণের বিক্ষোভকারী অংশ নেন। একটি সড়ক অবরোধ ও পুলিশের সদর দফতরে ভাঙচুর করার ঘটনা ঘটেছে।ফিলাডেলফিয়াতে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ টিয়ার গ্যাস নিক্ষেপ করেছে। অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে পুলিশের গাড়িতে। শহরের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বেশ কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তা আহত হয়েছেন ইটের আঘাতে। লস অ্যাঞ্জেলসের সড়কে সেনাবাহিনী মোতায়েন রয়েছে।
রাত ৮টার দিকে কারফিউ প্রত্যাহার হলে বিভিন্ন শহরে রাস্তায় নামেন বিক্ষোভকারীরা। হান্টিংটন বিচ, সান্তা মোনিকায় লুটপাঠের খবর জানিয়েছে এনবিসি লস অ্যাঞ্জেলস। এর আগে শনিবার রাতে এখানে বিক্ষোভকারী বেশ কয়েকটি বাস দখল, অনেক প্রাইভেট কারে অগ্নিসংযোগ ও বেশ কিছু দোকানের কাঁচের জানালা ভেঙে ফেলে।শিকাগোর বেশ কয়েকটি সড়ক ও ট্রানজিট রুট রবিবার বন্ধ ছিল।
পুলিশ ও সেনাবাহিনী বড় ধরনের বিক্ষোভের আশঙ্কা করছে। রবিবারও কারফিউ জারি থাকা শহরগুলোর মধ্যে রয়েছে সান ফ্রান্সিসকো, মিয়ামি, ইন্ডিয়ানাপোলিস, ক্লিভল্যান্ড, ফিলাডেলপিয়া, পিটসবুর্গ, সান আন্তোনিও, সিয়াটলসহ আরও কয়েকটি। যুক্তরাজ্যের লন্ডনেও ফ্লয়েড হত্যার প্রতিবাদে বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই সপ্তাহে আরও তিনটি বিক্ষোভের পরিকল্পনা রয়েছে লন্ডনে। এর মধ্যে একটি মার্কিন দূতাবাসের কাছে অনুষ্ঠিত হবে। শনিবার জার্মানির বার্লিন শহরে মার্কিন দূতাবাসের কাছে কয়েক হাজার বিক্ষোভকারী জড়ো হন। তাদের হাতে প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল, জর্জ ফ্লয়েডের জন্য ন্যায়বিচার, আমি নিঃশ্বাস নিতে পারছি না।
২৫ মে মিনেসোটা অঙ্গরাজ্যের বৃহত্তম শহর মিনিয়াপলিসে পুলিশ জর্জ ফ্লয়েড নামের এক ব্যক্তিকে হত্যা করলে এই বিক্ষোভের সূত্রপাত হয়। ফ্লয়েডের গাড়িতে জাল নোট থাকার খবর পেয়ে তাকে আটক করতে গিয়েছিল পুলিশ। একজন প্রত্যক্ষদর্শীর ধারণ করা ১০ মিনিটের ভিডিওতে দেখা গেছে, হাঁটু দিয়ে তার গলা চেপে ধরে তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেছে এক শ্বেতাঙ্গ পুলিশ সদস্য। নিহত ফ্লয়েড নিরস্ত্র ছিলেন। নিঃশ্বাস নিতে না পেরে তাকে কাতরাতে দেখা যায়। কৃষ্ণাঙ্গদের দাবি, বর্ণবিদ্বেষের বলি হয়েছেন ফ্লয়েড।
শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে ট্রাম্পের বৈঠক: দেশজুড়ে তুমুল বিক্ষোভ চলার মধ্যেই জরুরি বৈঠক ডেকেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, সোমবার প্রথমে ওভাল অফিসে অ্যাটর্নি জেনারেল বিল বার-এর সঙ্গে বৈঠক করবেন ট্রাম্প। এরপর রাতে গভর্নর, আইন প্রয়োগকারী বাহিনীর সদস্য ও জাতীয় নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন তিনি।
পরিস্থিতি মোকাবিলায় এখন পর্যন্ত ট্রাম্পকে সরকারিভাবে কোনও বিবৃতি দিতে দেখা যায়নি। শুধু একের পর এক টুইট করেছেন তিনি। ট্রাম্পের দাবি, যারা কৃষ্ণাঙ্গ জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যু নিয়ে প্রতিবাদ করছেন, তারা নৈরাজ্যবাদী। তার অভিযোগ, বর্ণবৈষম্যের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলতে গিয়ে দেশের প্রগতিশীল বামপন্থী শক্তিগুলি দেশের মধ্যে নৈরাজ্য চালাচ্ছে। সমালোচকদের অভিযোগ, ট্রাম্প পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার পরিবর্তে তা আরও উত্তপ্ত করে তুলছেন।