বদরুল ইসলাম বিপ্লব, ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি: ঠাকুরগাঁওয়ে লিচুর গ্রামখ্যাত মুন্সিরহাটে জমে উঠেছে লিচু বেচাকেনা। বাগানে কাজ করে প্রাপ্ত লিচু রাস্তার পাশে পসরা সাজিয়ে বিক্রি করছেন বিভিন্ন বয়সী নারী, শিশুরা। শুক্রবার সকালে সেখানে গিয়ে এমন দৃশ্য চোখে পড়ে।
ঠাকুরগাঁও জেলা শহরের মুন্সিরহাট এলাকায় রাজা, বাদশাসহ বেশ কয়েকটি লিচুর বাগান রয়েছে। বাগানগুলো চাঁপাইনবাবগঞ্জের মৌসুমি ফল ব্যবসায়ীরা চুক্তিভিত্তিক কিনেছেন। এরমধ্যে ব্যবসায়ী আজহারুল ইসলাম ১১টি বাগান কিনেছেন। বর্তমানে গোলাপী, চায়না-৩, মাদ্রাজি ও বোম্বে জাতের লিচু গাছ থেকে লিচু পাড়া শুরু হয়েছে। আর বাগানের চারপাশের এলাকার মানুষেরা বাগানে গিয়ে লিচু তুলে দিয়ে ও কুড়িয়ে ৫০০ থেকে -৭০০ লিচু সংগ্রহ করছেন প্রতিদিন। সেগুলো বাড়ির পাশেই মহাসড়কের এক ধারে বিক্রি করছেন বিভিন্ন দামে। এতে নারী, শিশু, যুবক, বৃদ্ধরা লিচুর মৌসুমি ব্যবসা করে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন।
লিচু বিক্রি করতে আসা মুন্সিরহাট গ্রামের শিশু হৃদয় বলে, বাগানে লিচু ভেঙে দিয়ে ৫০০ লিচু পেয়েছি। সেগুলো এখানে বিক্রি করছি। লিচু কিনতে আসা পৌর শহরের টিকাপাড়া মহল্লার বাসিন্দা হুসনেয়ারা বলেন, এ সময়টাতে প্রতিবছর এখানে আসি। প্রতি ১০০ লিচু ১৫ টাকা থেকে শুরু করে ২০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। চাহিদা অনুযায়ী খুব স্বল্পদামে ভালো লিচু পাওয়া যাওয়ায় এখানে কিনতে এসেছি।
এছাড়াও পৌর শহরের বিভিন্ন স্থান ও জেলার বিভিন্ন উপজেলায় ইতোমধ্যে বাজারে উঠতে শুরু করেছে লিচু। এরমধ্যে পৌর শহরের কালীবাড়ী বাজার, বাসস্ট্যান্ড, ঠাকুরগাঁও রোড, মুন্সিরহাট, গোধুরী বাজারসহ জেলার অন্যান্য বাজারে গোলাপী, চায়না-৩, বোম্বে, মাদ্রাজি জাতের লিচু বিক্রি করতে দেখা যায়। প্রতি ১০০ গোলাপী জাতের লিচু বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে দেড়শ টাকায়। এক হাজার লিচু বিক্রি হচ্ছে ৭০০ থেকে ৮০০ টাকায়। এগুলোর মধ্যে চায়না-৩ জাতের লিচুর চাহিদা থাকে সবচেয়ে বেশি। এই লিচু খেতে যেমন স্বুস্বাদু তেমনি ছোট আঁটি ও মাংসে পরিপূর্ণ থাকায় বিক্রিও হয় প্রচুর।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, এ বছর জেলায় ৮৯৯ হাজার হেক্টর জমিতে লিচুর ফলন হয়েছে। এতে প্রতি হেক্টরে ৪ দশমিক ০৫ মেট্রিক টন উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে গোলাপী, মাদ্রাজি, চায়না-৩ জাতের লিচু বাজারে বিক্রি হতে শুরু করলেও আর কয়েকদিনের মধ্যেই অন্যান্য জাতের লিচুও বাজারে উঠবে।
ঠাকুরগাঁও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো. আবু হোসেন জানান, এ বছর লিচুর ফলন ভালো হয়েছে। জেলার লিচু বাগান মালিকদের কৃষি বিভাগ থেকে বিভিন্ন ধরনের পরামর্শ ও সুযোগ-সুবিধা প্রদান করা হয়েছে। লিচুতে এ বছর পোকামাকড় তেমন একটা নেই। করোনা পরিস্থিতির কারনে পরিবহনে কিছুটা সমস্যা থাকলেও ধীরে ধীরে তা স্বাভাকি হওয়ায় কৃষকরা লিচুর ভালো দাম পাবেন বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।