প্রত্যয় ডেস্ক, বদরুল ইসলাম বিপ্লব, ঠাকুরগাঁওঃ ঠাকুরগাঁও পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতাধীন টাঙ্গন ব্যারেজের গেট খুলে দেওয়ায় শুরু হয়েছে মাছ ধরা উৎসব। বিভিন্ন জেলা হতে আগত হাজার হাজার মাছ শিকারী এসেছেন কেউবা মাছ ধরতে আর কেউবা এসেছেন নদীর মাছ কিনে নিয়ে যেতে।এ সময়টি মাছ শিকারী ও ক্রেতা বিক্রেতাদের মিলন মেলায় পরিনত হয়।
ঠাকুরগাঁও শহর থেকে ২০ কিলোমিটার উত্তরে সদর উপজেলার রাজাগাঁও ইউনিয়নের চাপাতি গ্রামে অবস্থিত টাঙ্গন ব্যারেজ। এটি মূলতঃ শুস্ক মওসুমে জমিতে সেচ প্রদানের সুবিধার্থে পানি উন্নয়ন বোর্ড নির্মান করে। প্রতি বছর ভরা মওসুমে মৎস্য বিভাগের আওতায় এখানকার প্লাবন ভূমিতে সরকারিভাবে মাছ অবমুক্ত করা হয়। ৩ মাস পর মাছ বড় হলে ব্যারেজের গেট খুলে দিলে এখানে শুরু হয় ৫ দিন ব্যাপী মাছ ধরা উৎসব।
এদিকে বুধবার রাতে প্রতি বছরের ন্যায় টাঙ্গন ব্যারেজের গেট খুলে দেওয়া হয় এবং সর্ব সাধারণের জন্য মাছ ধরার জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। ব্যারেজের গেট খুলে দেওয়ায় সদর উপজেলার চাপাতি, আটোয়ারী উপজেলার সাতপাখি গ্রামের বিস্তির্ন এলাকার পানি নেমে গেলে কম পানিতে চলে মাছ শিকারের মহোৎসব।
ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়, দিনাজপুর সহ নীলফামারী জেলার মাছ শিকারীরা এখানে এসে তাবু গেঁড়েছে করছে মাছ শিকার করার জন্য। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত শিকারীরা দেশীয় তৈরী ফিকা ও লাফি জাল সহ বিভিন্ন বাহারী জাতের জাল দিয়ে করছে মাছ শিকার । এজন্য কেউবা কলাগাছের ভেলা তৈরী করে বিস্তির্ন এলাকায় মাছ শিকার করছে।
মাছ ধরা উৎসবে প্রতিদিন এখানে হাজার হাজার মানুষের সমাগম হচ্ছে। এ সমাগম চলবে আগামী রোববার পর্যন্ত ।
এদিকে শহরের চাইতে এখানকার মাছের দাম বেশি বলে জানালেন বেশিরভাগ ক্রেতা। তারা জানান, এখানে প্রতি কেজি টেংরা, গচি , শিং , টনা মাছ প্রতি কেজি ৩/৪শ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। আর শোল ও রুই কাতল মাছ চাওয়া হচ্ছে ৪/৫শ টাকা।প্রতিকেজি পুটি মাছ ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
পঞ্চগড়ের বোদা এলাকা হতে মাছ ধরতে আসা একাধিক মাছ শিকারী জানান, এ বছর মাছের পরিমান কম। গতকাল বিকেল থেকে থেকে এখন পর্যন্ত মাছ ধরেছি মাত্র ২ কেজি। তাও বড় আকারের মাছ ধরতে পারিনি। স্থানীয়রা কারেন্ট জাল ব্যবহার করে আগেই সব মাছ দরে খেয়ে ফেলেছে।
শরিফুল ইসলাম নামে একজন ক্রেতা জানান, এখানে বাজারের চাইতে মাছের দাম বেশি। শহরে যে মাছ ৩শ টাকায় পাওয়া যায়, সেই মাছ এখানে বিক্রি হচ্ছে ৪-থেকে ৫শ টাকা কেজি দরে।
অভিযোগ রয়েছে, এখানে মাছ শিকারের সুযোগে ২/১ জন ব্যবসায়ী ঠাকুরগাঁও রোডের আড়ৎ থেকে মাছ নিয়ে এসে এখানে বেশিদামে বিক্রি করে ক্রেতাদের সঙ্গে প্রতারনা করে আসছে।
এ ব্যাপারে মাছ বিক্রেতা হায়দার আলী জানান, মাছ শিকারীদের বেশিরভাগই মাছ ধরার পরপরই বিক্রি করে দেয়। আমরা কেজি প্রতি ৫০-১শ টাকা কম দামে কিনলেও ৫০-১০০ টাকা লাভ করে ক্রেতাদের নিকট বিক্রি করি।
টাংগন ব্যারেজ পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক ইউপি চেয়ারম্যান মোশারুল ইসলাম জানান, এ ব্যারেজে প্রতি বছর কমপক্ষে ৫০ মণ দেশী মাছ ধরা পড়ে।
উল্লেখ্য, ১৯৯০ সালে ঠাকুরগাঁও ও পঞ্চগড় জেলার ৪৪ দশমিক ৫০ হেক্টর জমিতে শুস্ক মৌসুমে গম, বোরো, সরিষা ও আলু সম্পুরক সেচ প্রদানের উদ্দেশ্যে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের অর্থায়নে ১৪ কোটি ৮২ লাখ ৭৭ হাজার টাকা ব্যয়ে পাউবো ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার চাপাতি গ্রামে টাংগন নদীর ওপর এই ব্যারেজ স্থাপন করে। ঠাকুরগাঁও পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্তাবধানে প্রকল্পটির উদ্বোধন করেন তৎকালীন রাষ্ট্রপ্রতি হুসাইন মুহাম্মদ এরশাদ।
১৯৮৪-৮৫ অর্থ বছরে প্রকল্পটির বাস্তাবায়ন কাজ শুরু হয়ে ১৯৯২- ৯৩ অর্থ বছরে নির্মাণ কাজ শেষ হয়। এখানে ১টি ব্যারেজ, ৫টি রেডিয়াল গেট, ৯৮টি ব্রীজ কালভার্ট, ২টি প্রধান রেগুলেটর গাইড বাঁধ ও সাড়ে ৩ কিঃ মিঃ বিতরণ খাল খনন করা হয়। তাছাড়া সেকেন্ডারী খাল ৪১ কিঃ মিঃ, টারসিয়ারী খাল ২.১ কিঃ মিঃ নির্মাণ করা হয়।