কোভিড-১৯ নাম শুনেনি এমন কেউ আছে কি? এর পাশাপাশি জিনোম সিকওয়েন্সিং বা ডিএনএর ক্রমবিন্যাসও আজ ঘরে ঘরে পরিচিত শব্দের মধ্যে একটি। কেমন হতো যদি ডিএনএ সম্পর্কে আমাদের কোন ধারণাই না থাকতো? তাহলে কি আজকের বিশ্বে চিকিৎসা বিজ্ঞানের এত উন্নতি সম্ভব হতো? তুমি যদি কখনো জীববিজ্ঞান পড়ে থাকো বা জুরাসিক পার্ক মুভিটি দেখে থাক তাহলে নিশ্চই শুনে থাকবে ডিএনএ জীবের ব্লু-প্রিন্ট হিসেবে কাজ করে। কিন্তু কিভাবে?
এর উত্তর জানার জন্য আগে জানতে হবে প্রোটিন সম্পর্কে।অসংখ্য এমিনো-এমাইনো এসিড এর সমন্বয়ে গঠিত প্রোটিন জীবদেহের বিল্ডিং ব্লক হিসেবে কাজ করে। এমিনো এসিড সিকোয়েন্সে যদি বিন্দুমাত্র গড়মিল হয় তাহলে প্রোটিনের গঠনে ব্যাঘাত ঘটে যার ফলে বিবিধ রোগব্যাধি হয়ে থাকে। এমিনো এসিড কিভাবে প্রোটিন গঠন করবে তার সম্পুর্ণ দিকনির্দেশনা দিয়ে থাকে ডিএনএ, যার ফলে এটি জীবের ব্লু-প্রিন্ট নামে পরিচিত।
জীবদেহের গঠন ও ক্রিয়াকলাপ নিয়ন্ত্রণের জিনগত নির্দেশ ধারণকারী নিউক্লিক এসিড ডিএনএ আবিষ্কার করেন জেমস ওয়াটসন এবং ফ্রান্সিস ক্রিক নামের দুইজন বিজ্ঞানী। ১৯৫৩ সালে আবিষ্কৃত ডিএনএর গঠন ওয়াটসন এন্ড ক্রিক মডেল নামে অধিক পরিচিত।রঞ্জনরশ্মির সাহায্যে ডিএনএর সর্পিলাকার গঠন পর্যবেক্ষণ করেন বিজ্ঞানী রোজালিন্ড ফ্রাঙ্কলিন। এই আবিষ্কারের জন্য ১৯৬২ সালে তাঁরা নোবেল পুরষ্কার প্রাপ্ত হন।
ওয়াটসন ও ক্রিক মডেলটি সর্বাধুনিক এবং সঠিক মডেল হিসেবে সর্বজন গৃহীত ও স্বীকৃত। তাঁদের প্রদত্ত মডেল অনুযায়ী ডি.এন.এ দ্বিসূত্রক, ঘুরানো সিড়ির ন্যায়। সিঁড়ির দুদিকের ফ্রেম তৈরি হয় স্যুগার ও ফসফেটের পর্যায়ক্রমিক সংযুক্তির মাধ্যমে।দু’দিকের ফ্রেমের মাঝখানের প্রতিটি ফ্রেম তৈরি হয় একজোড়া নাইট্রোজিনাস বেস দিয়ে (A=T, G=C)। দুটি বেস হাইড্রোজেন বন্ড দিয়ে যুক্ত হয়।
কাজেই সিড়ির বাইরের দিকে থাকে ফসফেট এবং ভেতরের দিকে থাকে নাইট্রোজিনাস বেস।সিড়ির দু’পাশের ফ্রেম পরস্পর উল্টোভাবে অবস্থান করে। এ ধরনের বিন্যাসকে অ্যান্টিপ্যারালেল বিন্যাস বলে।
এক ফ্রেমের গুয়ানিন অপর পাশের ফ্রেমের সাইটোসিনের সাথে তিনটি হাইড্রোজেন বন্ড দিয়ে যুক্ত হয় (G=C)। এক ফ্রেমের অ্যাডিনিন অপর পাশের ফ্রেমের থাইমিনের সাথে দুটি হাইড্রোজেন বন্ড দিয়ে সংযুক্ত থাকে (A=T)।
অসংখ্য নিউক্লিওটাইড দ্বারা গঠিত ডিএনএ সাধারণত সূত্রাকার কিন্তু আদি কোষ,মাইটোকন্ড্রিয়া ও ক্লোরােপ্লাস্টে এর আকার বৃত্তের ন্যায়।
ডিএনএ নিয়ে কিছু মজার তথ্যঃ
️মানুষের শরীরে ৫-৮% ভাইরাল ডিএনএ রয়েছে। ️মানুষ এবং শিম্পাঞ্জি,গরিলার ডিএনএর মাঝে পার্থক্য মাত্র ১%। ️সমস্ত মানুষের মধ্যে প্রায় ৯৯.৯৯% ডিএনএ অভিন্ন।
আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে একটি অমরত্ব ড্রাইভ রয়েছে যাতে বিশিষ্ট ব্যাক্তিদের ডিএনএ রয়েছে।
ডিএনএ নিজেই নিজের প্রতিলিপি তৈরি করতে পারে এবং নিজেই নিজেকে নকল করতে পারে যার কারণেই মানব অস্তিত্ব টিকে আছে।
১৯৫৩ সালে ডিএনএ আবিষ্কারের পর থেকে বিজ্ঞানীদের কৌতুহল আরো বেড়ে যায়। তাঁরা চেষ্টা করলেন মানুষের জীবনের অজানা সব রহস্য উদ্ভাবনের। এরই প্রেক্ষিতে প্রায় ১৩ বছর গবেষণার পর ২০০৩ সালের ২৫ এপ্রিল প্রকাশিত হয় মানবকোষে থাকা সকল ডিএনএর নকশা অর্থাৎ হিউম্যান জিনোম সিকুয়েন্স। এ দিনটিকে স্মরণ করতে ২০১৩ সাল থেকে ‘২৫ এপ্রিল’ সারা বিশ্বে পালিত হচ্ছে ডিএনএ ডে হিসেবে।
[-ডা.জসিম তালুকদার,
চিকিৎসক, মানবাধিকার সংগঠক ও সংবাদপ্রতিনিধি।]
আরও পড়ুন :হেফাজতের নায়েবে আমির আবদুল কাদের ৫ দিনের রিমান্ডে