এস এম রাফাত হোসেন বাঁধন,রংপুর:
বর্তমানে বাংলাদেশের চিকিৎসকরা মানবসেবার উন্নয়ন ও রোগমুক্ত দেশের জন্য জীবন দিয়ে লড়ে যাচ্ছেন। এরই ধারাবাহিকতায় সামান্য অংশ হিসেবে তরুণ একদল চিকিৎসক হাসপাতাল সেবার পাশাপাশি অনলাইনেও সাধারণ মানুষের সেবা নিশ্চিতকরণে কাজ করছেন । যা সম্পূর্ণ ফ্রি এবং সহজলভ্য।
বর্তমানে এদেশের মানুষ অদৃশ্য এক শক্তির সাথে লড়ছেন। সেই শক্তি এতই শক্তিশালী যে পুরো পৃথিবীটাকেই গৃহবন্দী করে ফেলেছে। এ যুদ্ধের সম্মুখ যোদ্ধা হিসেবে মানুষের জীবন বাঁচানোর জন্য এগিয়ে দিতে হচ্ছে স্থেথোস্কোপ গলায় ঝুলানো ডাক্তারদের, ইঞ্জেকশনের সিরিজ হাতে ছুটাছুটি করা নার্সদের, রুগীর সেবার নিয়োজিত অন্য স্বাস্থ্যকর্মীদের। গত ১০ই(এপ্রিল)পর্যন্ত এ ভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছেন ৩০০ জনের বেশী আর চিকিৎসক আক্রান্ত হয়েছেন ২২ জন, কোয়ারান্টাইনে আছেন ৮৮ জন চিকিৎসক। এভাবে যদি চিসিৎসক আর স্বাস্থ্যকর্মীরা আক্রান্ত হতে থাকেন একসময় ডাক্তার সংকটে পড়ে যাবে। ফলে হোম লকডাউনের পাশাপাশি চিকিৎসক লকডাউন হতে পারে। তাহলে চিকিৎসা সেবাপ্রদান করবে কে? রোগের কারণে চিকিৎসার অভাবে মারা যাবে মানুষ। সুতরাং সচেতন হয়ে পূর্বেই আমাদের চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মীদের রক্ষা করতে হবে, তাদের সুরক্ষা দিতে হবে?
একজন করোনা আক্রান্ত রোগী যিনি নিজে বুঝতে পারছেন না যে তিনি করোনায় আক্রান্ত ঙহতে পারেন,তিনি হসপিটালে যাচ্ছেন। সেখানে তিনি সাধারণ রোগী, ডাক্তার এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের সংক্রমিত করছেন। এভাবেই করোনার বিস্তার আরো বাড়ছে ক্রমেই।
তাছাড়া আমাদের হাসপাতাল গুলোতে রুগীর চাপ এমনিই অনেক বেশী,কারন রোগীর তুলনায় ডাক্তার সংকট,ভবিষ্যৎতে রোগীর সংখ্যা আরো বাড়বে। এজন্য এই মুহূর্তে হাসপাতালের চিকিৎসকদের উপর কাজের চাপ একটু হলেও কম হোক। সাধারণ রোগীদের ভোগান্তি কম হোক। এই সংকটকালীন সময়ে সাধারণ রোগগুলোর চিকিৎসা এবং জটিল রোগের প্রাথমিক চিকিৎসা টেলিমেডিসিনের মাধ্যেমেই দেওয়া সম্ভব। সেই সাথে সম্ভব জরুরী রুগীদের জন্য সুপরামর্শ।যাতে তারা আরও বেশি ভোগান্তিতে না পড়েন।
দূর্যোগ মোকাবেলায় সাধারণত জণগনকে একত্রিত হতে হয়।কিন্তু এ এমন এক দূর্যোগ যা প্রতিরোধে সবাইকে শারিরিকভাবে আলাদা হতে হচ্ছে। সবাইকে ঘরে বন্দী থাকতে হচ্ছে এবং হবেই। এই মূহুর্তে আপনি ঘরে আছেন মানে আপনি সুনাগরিক। নিজে রক্ষা পেলেন, এবং অপরকেও রক্ষা করলেন। ঘরে থাকলেও। নিত্যদিনের স্বাস্থ্য সমস্যা আমাদের পিছু ছাড়বে না। যেমন- সাধারণ জ্বর, সর্দি, কাশি, গর্ভবতী মায়ের নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা, শিশুদের নানাবিধ সমস্যা। এরকম অনেক সমস্যার জন্য এই ভয়ংকর সময়ে ছুটাছুটি না করে ঘরে বসেই টেলিমেডিসিনের মাধ্যমে পেতে পারেন চিকিৎসা সেবা । এমনি কি! কারো শরীরে যদি কোভিড -১৯ এর লক্ষণ প্রাথমিকভাবে মনে হয় তিনিও সুপরামর্শ নিতে পারেন। যাতে তিনি পরবর্তীতে কি করা উচিত বুঝতে পারেন, এবং আশেপাশের মানুষকে সংক্রমিত না করেন।
এসব কিছু বিষয় ও নানাবিধ দিক বিবেচনায় রেখে চিকিৎসকদের নিয়ে একটি ভার্চুয়াল টীম প্রস্তুত করা হয়েছে। এখানে বিভিন্ন বিষয়ের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক(যেমন- গাইনী অবস,মেডিসিন,সার্জারী),নিয়মিত চিকিৎসক, দন্ত চিকিৎসক এমনকি পুষ্টিবিদও কাজ করছেন।
এই সেবা ২৪ ঘন্টা চালু রয়েছে। দিন রাতের যে কোন সময় যে কোন প্রয়োজনে যে কেউ স্বাস্থ্য সেবা নিতে পারবেন এবং সার্ভিসটি সম্পূর্ণ ফ্রি।
এখানে চিকিৎসকরা বিভিন্ন স্কাইপ আইডিতে যুক্ত থাকবেন। সেবা নিতে হলে রুগীকে স্কাইপের মাধ্যমে অডিও কিংবা ভিডিও কলে যুক্ত হতে পারবেন। রোগীর লক্ষণ শুনে সম্মানিত চিকিৎসকগণ প্রয়োজন হলে ভিডিও কলে যুক্ত করে নিবেন। এরপর চিকিৎসক প্রেসক্রিবশনের ছবি রুগী বা সেবাগ্রহীতার স্কাইপ আইডিতে প্রেরণ করবেন। ক্ষেত্র বিশেষে সুপরামর্শ প্রদান করবেন। উল্লেখ্য যে এই সেবা সরাসরি ডাক্তারকে দেখানোর পরিপূরক নয়, তবে সংকটকালীন মুহুর্তে এটাই সর্বোত্তম পন্থা।
সেবাটি টেকনিক্যালি স্বার্থক করতে পাশে আছেন একদল মেধাবী ইঞ্জিনিয়ার এবং আরো অনেক তরুণ মেধাবী দল। আমরা চাই আমাদের দেশ অতিদ্রুত সংকট মুক্ত হোক।এরপর আমরা সবাই বিজয়ের গান গাইব- যদি লক্ষ্য থাকে অটুট বিশ্বাস হৃদয়ে, দেখা হবেই দেখা,দেখা হবে বিজয়ে।
এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ দেখুন..