কলকাতা সংবাদদাতা:
হুগলির তেলিনিপাড়ায় ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরি করার জন্য জেলাশাসককে নির্দেশ দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ক্ষতিগ্রস্তদের সরকার সাহায্য করবে বলেও জানিয়ে দিয়েছেন তিনি। তবে মুখ্যমন্ত্রীর এ কথা ঘোষণার পরই অনেকেই দাবি করেছেন, আগে দুষ্কৃতীদের গ্রেফতার করুন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু এই ঘটনা নিয়ে কেউ যাতে উস্কানি দিতে না পারে, সে দিকেও মুখ্যমন্ত্রী কড়া নজর রাখার জন্য প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছেন। অন্যদিকে, হুগলি ও মালদহে শান্তি ও শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য সাধারণ মানুষের কাছে আবেদন জানিয়েছেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়।
এই ঘটনায় রাজ্য সরকারের সমালোচনায় মুখর হয়ে উঠেছে বিজেপি। তারা সেখানে কেন্দ্রীয় বাহিনী নামানোর দাবি করেছে। বিজেপি নেতা রাহুল সিনহা জানিয়েছেন, রাজ্য জুড়ে লকডাউন চলছে। অথচ তেলিনিপাড়ায় ধর্মীয় লড়াই শুরু হয়ে গিয়েছে। সব এলাকায় মুড়ি–মুড়কির মতো বোমা পড়ছে। তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, ‘কোথায় রয়েছে রাজ্যের পুলিশ বাহিনী?’ তিনি দাবি করেন, ‘পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গিয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে অবিলম্বে সেখানে কেন্দ্রীয় বাহিনী নামানো হোক।’ তিনি তেলিনিপাড়ার ঘটনায় দোষীদের শাস্তির দাবিও জানান।
যদিও ঘটনার জন্য বিজেপির দিকে আঙুল তুলেছে তৃণমূল। দলের সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় অভিযোগ করেছেন, ‘বিজেপি সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায় এখানে এসে দায়িত্বজ্ঞানহীন মন্তব্য করায় উত্তেজনা তৈরি হয়।’ কিন্তু বিজেপি সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায় পাল্টা অভিযোগ করেছেন, ‘বাইরে থেকে দুষ্কৃতীরা গিয়ে ভদ্রেশ্বরে বোমাবাজি করছে। সাধারণ নিরীহ মানুষের বাড়িঘরে আগুন লাগিয়ে দিচ্ছে। লুঠপাট করছে।’ এই সঙ্ঘর্ষের ঘটনায় রাজ্য সরকার ও পুলিশকে কাঠগড়ায় তুলেছেন অপর বিজেপি সাংসদ অর্জুন সিং। তিনি অভিযোগ করেছেন, ‘পুলিশের মদতে বাইরে থেকে দুষ্কৃতী আনিয়ে গোলমাল চালানো হচ্ছে।’ হিংসা বন্ধ করার জন্য রাজভবনে রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করে স্মারকলিপিও জমা দিয়েছে বিজেপির একটি প্রতিনিধি দল। সেই দলে ছিলেন মুকুল রায়, প্রতাপ বন্দ্যোপাধ্যায়, লকেট চট্টোপাধ্যায়, অর্জুন সিং, সব্যসাচী দত্ত প্রমুখ।
রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়ও হুগলির তেলিনিপাড়া ও মালদহের চণ্ডীপুরে শান্তি ফেরানোর জন্য রাজ্য সরকারকে উদ্যোগী হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। উল্লেখ্য, রবিবার সন্ধে থেকে দুষ্কৃতী তাণ্ডবে তপ্ত হয়ে রয়েছে হুগলির বিস্তীর্ণ অঞ্চল। তার পর থেকেই দফায় দফায় সেখানে সঙ্ঘর্ষ চলে। পরে সেই সঙ্ঘর্ষ ধর্মীয় হিংসায় পর্যবসিত হয়। অনেক বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়। লুঠপাটেরও অভিযোগ উঠেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সেখানে কড়া অবস্থান নিয়েছে প্রশাসন। হিংসা যাতে ছড়িয়ে না পড়ে, সে কথা বিবেচনা করে হুগলি জেলা প্রশাসন গোটা জেলায় ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করে দিয়েছে।