ময়মনসিংহ প্রতিনিধি: ত্রিশালের পার্শ্ববর্তী ফুলবাড়িয়া উপজেলার দেওখোলা ইউনিয়নের চর কালীবাজাইল গ্রামের কৃষক গিয়াস উদ্দিনের বসতঘরে পিডিবির কোনো মিটার বা বিদ্যুতের সংযোগ না থাকলেও তার নামে যাচ্ছে বিলের কাগজ। সমস্যা সমাধানে ভুক্তভোগী ওই কৃষক বেশ কয়েকবার যোগাযোগ করেছেন জেলা ও ত্রিশাল বিদ্যুৎ সরবরাহ কেন্দ্রে। কিন্তু এ বিষয়ে সংশ্নিষ্ট কর্মকর্তাদের কোনো তৎপরতা না থাকায় প্রায় অর্ধলাখ টাকার বিদ্যুৎ বিলের প্রতিকার চেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ করেছেন ভোক্তভোগী কৃষক।
ত্রিশালের পার্শ্ববর্তী ফুলবাড়িয়া উপজেলার দেওখোলা ইউনিয়নের চর কালীবাজাইল গ্রাম। আগে ওই গ্রামে বিউবোর বিদ্যুৎ ময়মনসিংহ জোন থেকে সরবরাহ হলেও তা ত্রিশাল বিদ্যুৎ সরবরাহ কেন্দ্রের অধীনে। ওই গ্রামের কৃষক গিয়াস উদ্দিন সাড়ে ৫ বছর আগে তার বসতঘরে বিদ্যুতের সংযোগ পেতে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ ত্রিশাল উপজেলার ধানীখোলা ইউনিয়নের লটিয়ারপাড় গ্রামের বাসিন্দা খোকন নামে এক দালালের মাধ্যমে আবেদন করেছিলেন।
কাগজপত্রের সঙ্গে কৃষক গিয়াস উদ্দিনের কাছ থেকে ৭ হাজার টাকা নেন দালাল খোকন। মিটার বা বিদ্যুতের সংযোগ না পেলেও আবেদনের প্রায় এক বছর পর অর্থাৎ ২০১৬ সালের ডিসেম্বর মাসে ওই কৃষকের হাতে পৌঁছে একটি বিলের কাগজ। বিদ্যুৎ ব্যবহার না করেও বিল পেয়ে এ বিষয়ে অভিযোগ করতে ময়মনসিংহ জেলা বিদ্যুৎ অফিসে গেলে এক কর্মকর্তা তাকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়ে তিনি ওই কৃষককে বাড়িতে পাঠিয়ে দেন। দালালের পেছনে ঘুরতে ঘুরতে ক্লান্ত হয়ে অবশেষে পল্লী বিদ্যুৎ অফিসে আবেদন করেন। বছর খানেক আগে পল্লী বিদ্যুতের সংযোগ পান কৃষক গিয়াস উদ্দিন। হঠাৎ আবারও এ বছরের জুন মাসে পিডিবির ত্রিশাল কার্যালয় থেকে প্রায় অর্ধলাখ টাকার আরও একটি বিদ্যুৎ বিল যায় তার হাতে। বিলটি নিয়ে তিনি যোগাযোগ করেন ত্রিশাল বিদ্যুৎ সরবরাহ কেন্দ্রে। কিন্তু সংশ্নিষ্ট কর্মকর্তারা গত তিন মাসেও কোনো সুরাহা বা সমাধান না দেওয়ায় অর্ধলাখ টাকার বিদ্যুৎ বিলের প্রতিকার চেয়ে ত্রিশাল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমানের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী কৃষক গিয়াস উদ্দিন।
সরেজমিনে গিয়াস উদ্দিনের বাড়িতে গিয়ে তার বসতঘরে পিডিবির বিদ্যুৎ সংযোগের কোনো অস্তিত্ব চোখে পড়েনি। শুধু গিয়াস উদ্দিনই নন, বিদ্যুতের সংযোগ দেওয়ার কথা বলে ওই গ্রামের নজরুল ইসলাম, দেলোয়ার হোসেন, মকবুল হোসেন, আবুল হোসেন, আলী হোসেন, আবদুর রহীম, ইসমাইল হোসেন, আবু খায়ের, হাজি মুনসুর আলী, দোলোয়ার হোসেনসহ ১২ জনের কাছ থেকে আরও লক্ষাধিক টাকা হাতিয়ে নেন ওই দালাল। ভুক্তভোগীরা বিদ্যুৎ সংযোগের নামে টাকা হাতিয়ে নেওয়া দালাল খোকনকে খুঁজতে তার গ্রামে গিয়েও পাননি। অনেকের টাকা-পয়সা আত্মসাৎ করে খোকন গা-ঢাকা দিয়েছেন।
ওই এলাকার মিটার রিডার সুমন বলেন, গিয়াস উদ্দিনের বসতঘরে পিডিবির কোনো সংযোগ না থাকার বিষয়টি আমি অফিসকে অবগত করেছি। পিডিবি থেকে লাইন না পেয়ে গিয়াস উদ্দিন পল্লী বিদ্যুতের সংযোগ ব্যবহার করছেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান জানান, ওই কৃষকের লিখিত অভিযোগের পর এ ব্যাপারে ত্রিশাল বিদ্যুৎ সরবরাহ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলীকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বলেছি। ত্রিশাল উপজেলা বিদ্যুৎ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী ফারুক হোসেন জানান, বিষয়টি অবগত হওয়ার পর নথিপত্র ঘেঁটে জানা যায়, তার নামে একটি মিটার ও হিসাব এন্ট্রি করা আছে এবং তার নামে অনেক আগেই বিল করা হয়েছে। তবে যাচাই করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।