ওয়েব ডেস্ক: দেশে একের পর এক ধর্ষণের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন বলেছেন, ‘আমাদের সামাজিক পরিস্থিতি খুব খারাপ। যেকোনো বয়সের নারী ও শিশু ধর্ষণের শিকার হচ্ছে। এটা ভাবিয়ে তোলার মতো, দুশ্চিন্তায় ফেলার মতো।’
মঙ্গলবার (৮ জুন) ২২ বছর আগে নেত্রকোনোর মদন উপজেলায় পাঁচ বছরের এক শিশু ধর্ষণের মামলায় একজন আসামির যাবজ্জীবন সাজা বাতিল করে মৃত্যুদণ্ড দিতে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের ওপর শুনানিকালে তিনি এসব কথা বলেন।
মাহমুদ হোসেন বলেন, ‘সবচেয়ে মুখ্য বিষয় হলো, কোনো অপরাধ সংঘটিত হওয়ার পর তার বিচার হওয়া। অপরাধ সংঘটনের পর অপরাধীর বিচার হবে না, এরকম পরিস্থিতি যেন সৃষ্টি না হয়। সেজন্য যেকোনো অপরাধের বিচারটাকেই বড় করে দেখা হয়। বিচারহীনতা যেন না থাকে।’
আদালতে এ দিন রাষ্ট্র পক্ষে করা আবেদনের শুনানিতে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিশ্বজিৎ দেবনাথ। তিনি জানান, ১৯৯৯ সালের জুলাই মাসে মদনে পাঁচ বছরের এক শিশু ধর্ষণ মামলায় আসামি হুমায়ুন কবির রজতকে ২০০২ সালে মৃত্যুদণ্ড দেন নেত্রকোনার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালত। ওই রায়ের পর আসামির মৃত্যুদণ্ড নিশ্চিতকরণে ডেথ রেফারেন্স (মুত্যুদণ্ড অনুমোদনের জন্যে) হাইকোর্টে পাঠানো হয়।
ওই ডেথরেফারেন্স শুনানি শেষে ২০০৪ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট বয়স বিবেচনায় আসামির সাজা মৃত্যুদণ্ডের পরিবর্তে যাবজ্জীবন করে রায় দেন। এই রায়ের বিরুদ্ধে ২০০৬ সালে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় আপিল আবেদন করেন রাষ্ট্রপক্ষ। আপিলের আবেদনে আসামির মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখার আর্জি জানানো হয়।
শুনানিতে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিশ্বজিৎ দেবনাথ বলেন, পাঁচ বছরের একটি শিশুকে ধর্ষণ করেছেন এই আসামি। এর চেয়ে জঘন্য আর কী হতে পারে!
আদালত বলেন, ‘ঘটনার সময় আসামির বয়স তো দেখছি ২৪০২৫ বছর। বয়স কম হলে এবং পূর্ববর্তী কোনো অপরাধের রেকর্ড না থাকলে সেক্ষেত্রে সাজা কমানোর বিষয়ে আপিল বিভাগের বেশকিছু রায় রয়েছে।’
বিশ্বজিৎ দেবনাথ বলেন, সমাজে ধর্ষণের ঘটনা বেড়ে গেছে। সাজা হ্রাসের বিষয়টি নিয়ে এখন নতুন করে চিন্তা-ভাবনার সময় এসেছে।
এ সময় প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘যেকোনো অপরাধে বিচার হতেই হবে। বিচারহীনতার সৃষ্টি যেন না হয়। এই আসামির দোষী সাব্যস্তকরণ নিয়ে আমাদের কোনো দ্বিমত নেই। শুধু সাজা আরোপ নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।’
এরপরই আপিল বিভাগের সব বিচারপতি রাষ্ট্রপক্ষের সাজা বৃদ্ধির আপিল খারিজ করে দেন। শিশু ধর্ষণ মামলার ওই আসামি হুমায়ুন কবির রজত পলাতক রয়েছেন।