বিকেল রান্না করছি মোবাইলে ইমারজেন্সি এলার্ট বেজেই চলছে। প্রথমে মাথায় আসলো গাড়ি চুরি, তা না হলে বাচ্চা কিডন্যাপ বা ভাবছিলাম আবহাওয়ার কোনো জরুরি অবস্থা কি? হাতের কাজ শেষ করে মোবাইল ফোনে চোখ দিতেই অসহায় লাগতে লাগলো, নিজের জন্য নিউ ইয়র্কের মানুষগুলোর জন্য। চেয়ে দেখি নিউইয়র্ক সিটি হেলথ থেকে ইমার্জেন্সি বেসিসে লাইসেন্সধারী ডাক্তার, নার্স , সেচ্ছাসেবী সব ধরণের স্বাস্থ্যকর্মীর জন্য সাহায্য চাইছে।
সারাবিশ্বে করোনা ভাইরাসের আক্রান্তের সংখ্যা ১০,৯৮৮৪৮ । মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের কেন্দ্রস্থল হয়ে দাঁড়িয়েছে এবং এতে ২,৭৭৪৬৭ এরও বেশি লোক আক্রান্ত হয়েছে এবং ৭৪০০জনেরও বেশি মারা গেছে।
আমেরিকার মধ্যে নিউ ইয়র্কের অবস্থা সবচাইতে খারাপ।১০৩৪৭৬ জন পজেটিভ কেস রয়েছে।তার মধ্যে মৃত্যুর সংখ্যাও ৩০১৮ জন।
নিউইয়র্ক গভর্নর পুরো আমেরিকার থেকে নিউইয়র্কের হাসপাতালগুলোর জন্য জরুরি ভিত্তিতে স্বাস্থ্যকর্মীর চেয়ে রেড এলার্ট জারি করে সবার ফোনে ইমার্জেন্সি এলার্ট দিয়ে মেসেজ দিয়েছেন। এতে কেউ যদি ভলানটেরিও করতে চায় এ সময়ে তা করতে পারবে।বা কোনো অর্গানাজেশন চাইলে তারা তাদের কর্মী দিয়ে সাহায্য করতে পারেন।
হাসপাতালগুলোর চাইতে রুগীর সংখ্যা বেশি হবার কারণে হিমশিম খাচ্ছে হাসপাতালের ডাক্তার নার্সরা।
নির্দিষ্ট ঘন্টার চাইতেও অনেক বেশি সময় কাজ করতে হচ্ছে তাদের। দিন দিন ডাক্তার আর নার্সদের মধ্যেও এই ভাইরাস সংক্রমিত হলে হাসপাতাল গুলোতে ডাক্তার নার্সের সংকটও দেখা যাচ্ছে।
সোজা কথায় নিউইয়র্কের স্বাস্থ্যসেবার কাঠামো হারাচ্ছে। হাসপাতালগুলোতে ঠিকমতো রোগী রাখার জায়গা নেই। এমনকি রোগীরা ঘন্টার পর ঘন্টা লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন ডাক্তার দেখাবার জন্য। হাসপাতালের বেড শেষ হয়ে তাদের চিকিৎসা করা হচ্ছে চেয়ারে রেখে। কোনো কোনো হাসপাতালের মেঝেতে রোগী রাখতে দেখা গিয়েছে। ভেনটিলেটর তো দূরের কথা পর্যাপ্ত মাস্ক গ্লাভসও এখন নেই। হাসপাতালে ঘন্টারও কম সময়ে রুগী মারা যাচ্ছে। একজন নার্স বল্লো তার বারো ঘন্টার ডিউটিতে তের জন রোগী মারা গিয়েছে । কাজ শেষ করে বাড়ি ফিরে রাতে তারা ঘুমাতেও পারছে না, চোখ বন্ধ করলে রোগীদের অসহায় চেহারা ভেসে উঠছে। যারা মারা যাচ্ছে তাদেরও চেহারা ভেসে উঠছে। ভয়ে বার বার তাদের ঘুম ভেঙে যাচ্ছে। কোনো কোনো ডাক্তার নার্সরা ষোল ঘন্টা কেউ কাজ করছে আঠারো ঘন্টা।তারা যেখানে চেয়ার পাচ্ছে বা মেঝেতে বসে রেস্ট নিচ্ছে। এখন নিউ ইয়র্কের প্রায় সবগুলো হাসপাতালে করোনা রুগী ভর্তি।
করোনা মহামারির সময়ে বর্তমানে ২২ হাজার ডাক্তার নার্স সরকারি হাসপাতালে কাজ করছেন। নিউইয়র্ক স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, বর্তমানে ৫৫ হাজার স্বাস্থ্যকর্মীর প্রয়োজন।
মেয়র ডি ব্ল্যাসিও বলেছেন, “সকল আমেরিকানের সত্য জানার অধিকার আছে। পরিস্থিতি ক্রমাগত খারাপ হচ্ছে এবং আসল কথা হচ্ছে এপ্রিল ও মে মাসে অবস্থা আরো খারাপ হবে।”
চিকিৎসা সামগ্রীর অভাবে যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কে করোনাভাইরাস মহামারি আরো খারাপ রূপ নেবে বলে সতর্ক করে দিয়েছেন নিউ ইয়র্ক শহরের মেয়র।
প্রয়জনের তুলনায় দিন দিন কমে আসছে চিকিৎসার সামগ্রী। এইভাবে চিকিৎসার প্রয়জনীয় জিনিস কমতে থাকলে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়তে থাকবে।
মেয়র ডি ব্ল্যাসিও ট্রাম্প প্রশাসনের সমালোচনা করে বলেছেন, ভাইরাসটি মোকাবেলায় যেসব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে তা যথেষ্ট নয়।
মহামারী কতোটা ভয়াবহ হতে পারে প্রশাসন সঠিক অনুমান করতে পারেনি। এবং প্রয়োজন অনুযায়ী ব্যবস্থা করতে সক্ষম হয়নি। এর পরিনাম ভোগ করছে সমস্ত নিউইয়র্কবাসী।
লেখক: রোকেয়া দীপা