প্রত্যয় ডেস্ক: রাজশাহীর বাঘা উপজেলার দক্ষিণ প্রান্ত দিয়ে বয়ে চলেছে ২৬ কিলোমিটার এলাকা পদ্মা নদী। পদ্মার পানি কমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে চরে শুরু হয়েছে সবজি চাষ। জেগে ওঠা চরের জমিতে ও বাড়ির আঙিনায় এই সবজি চাষ করা হচ্ছে। এই সবজি স্থানীয়ভাবে চাহিদা পূরণের পাশাপাশি পাঠানো হচ্ছে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। জানা যায়, পদ্মার মাঝেই চকরাজাপুর ইউনিয়ন। এই ইউনিয়নের ১৫টি চরে স্থায়ীভাবে সাড়ে তিন হাজার পরিবার বসবাস করে। লোক সংখ্যা প্রায় ২০ হাজার। এবারের বন্যা ও নদীভাঙনের সময় তারা এক চর থেকে আরেক চরে চলে যায়।
পুনরায় পানি কমে গেলে অনেকেই নতুন করে ঘরবাড়ি নির্মাণ করে বসবাস শুরু করে। এই চরের মধ্যে চকরাজাপুর, পলাশী ফতেপুর, দাদপুর, কালীদাসখালী, কলিগ্রাম, টিকটিকিপাড়া, করারি নওসারা, সরেরহাট, চাঁদপুর, চৌমাদিয়া চরে আলু, বেগুন, টমেটো, কফি, লাউ, মিষ্টি কুমড়া, সিম, করলা, পুঁই ও লালশাকসহ বিভিন্ন ধরনের সবজি বাড়ির আঙিনার পাশাপাশি জেগে ওঠা চরে চাষ হয়। পেঁয়াজ, রসুন, গম, ছোলা, মসুর, আখ, সরিষা ও বাদাম ব্যাপকভাবে চাষ হয়।
চকরাজাপুর চরের আম্বিয়া বেগম বলেন, আমার ভিটা ছাড়া কোনো জমি নেই। বন্যায় বাড়িতে পানি উঠেছিল। পানি নেমে যাওয়ার পর বাড়ির পাশ দিয়ে কাঠা দুয়েক জমির ওপর লাউ চাষ করেছি। ইতিমধ্যে তিন হাজার টাকার লাউ বিক্রি করেছি। আরও যে পরিমাণ লাউ আছে, দেড়-দুই হাজার টাকায় বিক্রি হবে। সপ্তাহে দুই থেকে তিন দিন লাউ বিক্রি করতে হয়। বিক্রি করতে কোনো অসুবিধা হয় না। পাশে চকরাজাপুর বাজার। আবার কোনো কোনো সময়ে বাড়ি থেকে কিনে নিয়ে যান ক্রেতারা।
দাদপুর চরের সাবেক ইউনিয়ন মেম্বর রেজাউল করিম জানান, পদ্মার চরের জমিতে রোপণ করা হচ্ছে গম, ছোলা, মসুর, আখ ও বাদাম। চাষিরা বর্তমানে লাঙলের পরিবর্তে আধুনিক পদ্ধতিতে ট্রাক্টর দিয়ে চাষ করে আবাদ করে। ফলে চাষাবাদের খরচ কমেছে। তবে চাষের খরচ ও শ্রমিক কম লাগার কারণে চরের জমিতে উৎপাদন ব্যয় তুলনামূলক কম। ফলে চাষ করে লাভবান হচ্ছেন চাষিরা।
চকরাজাপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক গোলাম মোস্তফা বলেন, আমি শিক্ষকতার পাশাপাশি পানি কমে যাওয়ার পর এ বছর ছয় বিঘা জমিতে পেঁয়াজ, তিন বিঘা জমিতে রসুন, এক বিঘা জমিতে লাউ এবং চার বিঘা জমিতে আলুর আবাদ করার জন্য জমি প্রস্তুত করছি। এ চরে শুধু আমি না, আমার মতো অনেকেই অর্থকরী ফসলের পাশাপাশি সবজি চাষ করছেন। চকরাজাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আজিজুল আযম জানান, একসময় পদ্মার চরের জমিতে শুধু ধান, গম আর আখ চাষ করা হতো। কিন্তু এখন এ সকল জমিতে আমবাগান, পেঁয়ারা, বরই, কলা বাগানসহ নানা রকম সবজি চাষ হচ্ছে। শীত মৌসুমে অধিকাংশ বাড়ির আঙিনায় লাউসহ বিভিন্ন প্রকার সবজির আবাদ হচ্ছে।
বাঘা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শফিউল্লা সুলতান জানান, চরের জমি খুবই উর্বর। এ চরে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে যে কোনো ফসল বেশি হয়। তবে গত কয়েক বছর ধরে পদ্মার চরে নীরব বিপ্লব ঘটছে। উপজেলার সমতল এলাকায় যে, পরিমাণ সবজি চাষ হয়, তার চেয়ে বেশি সবজি হয় চকরাজাপুর ইউনিয়নের চরে।