আন্তর্জাতিক ডেস্ক: সামনেই ভারতের লোকসভা নির্বাচন। তার আগে আবার হাইভোল্টেজ ইস্যু হচ্ছে রামমন্দির উদ্বোধন। এমন পরিস্থিতির মধ্যেই বাংলার রাজনৈতিক চরিত্র ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’ রক্ষা করা বলে মনে করিয়ে দিলেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন। আর এই ধর্মনিরপেক্ষতা যে কোনো মূল্যে রক্ষা করাটাই যে কর্তব্য ও সেটা যেন কেউ ভুলে না যায় বলে সতর্ক করে দিয়েছেন তিনি।
শুক্রবার (১২ জানুয়ারি) বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সংগঠনের সভাপতি সুদীপ্ত ভট্টাচার্যকে পাঠানে ইমেইলে এসক কথা মনে করিয়ে দেন অমর্ত্য সেন। কিন্তু কেন এমন চিঠি পাঠালেন তিনি?
ইমেইলে অমর্ত্য সেন রাজনীতির কথা উল্লেখ করেননি। কিন্তু যা লিখেছেন, তাতে এটা স্পষ্ট যে বাংলার ধর্মনিরপেক্ষতার উপর আঘাত আসতে পারে। তবে এমন পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার উপক্রম হল ধর্মনিরপেক্ষতার সংস্কৃতিকে অটুট রাখার উপরেই জোর দিয়েছেন তিনি। এই একই প্রত্যয় প্রকাশ পায় পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জীর কণ্ঠেও।
অমর্ত্য সেন ঠিক কী লিখেছেন চিঠিতে? নোবেলজয়ী এই অর্থনীতিবিদ লিখেছেন, বাংলার প্রধান ইস্যু ধর্মনিরপেক্ষতা পক্ষে দাঁড়ানো। শক্তিশালী প্রতিরোধ প্রয়োজন। বাংলার ধর্মনিরপেক্ষতার দীর্ঘ ঐতিহ্য থাকা সত্ত্বেও সেটা সবসময় হয়ে ওঠে না। ধর্মভিত্তিক বিভাজন ছেড়ে নিরপেক্ষ রাজনীতির প্রয়োজন বাংলায়। ধর্মনিরপেক্ষ রাজনীতিকে পরাজিত হতে দেওয়া হবে বড় ভুল।
‘বাংলার একতার চরিত্র হারালে চলবে না। আমি আমার দাদু ক্ষিতিমোহন সেনের কথা ভাবছিলাম। তিনি বুঝিয়ে বলতেন, হিন্দু-মুসলিম ঐক্যের গুরুত্ব কেবল পরস্পরকে সহ্য করাই নয়। গুরুত্বটা তার থেকেও অনেক বেশি ও একসঙ্গে কাজ করার। যেটা ঐতিহাসিকভাবে হয়ে এসেছে প্রাচুর্যময় সাহিত্য, প্রধান স্থাপত্য, বিরল কারুকার্য ও অসংখ্য যৌথ সৃজনশীলতায়।’
গত বছর অমর্ত্য সেন যখন জমি নিয়ে সমস্যায় পড়েছিলেন, তখন পাশে এসে দাঁড়িয়েছিলেন মমতা ব্যানার্জী। তাই মুখ্যমন্ত্রীকে নিয় সদা ভাবনা রয়েছে তার। বিজেপি বিভাজনের এবং সাম্প্রদায়িক রাজনীতি করে বলে অভিযোগ তৃণমূল কংগ্রেসের। এখন দেশের সব বিরোধী দল একই কথা বলছে।
বিজেপির সাম্প্রদায়িক রাজনীতির পরিপ্রেক্ষিতে চিন্তিত হয়ে পাঠানো এই ইমেইল রাজ্য রাজনীতির জন্য তাৎপর্যপূর্ণ। আসলে পশ্চিমবঙ্গে প্রধান বিরোধী দল বিজেপি। বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকদের মতে, সাম্প্রদায়িকতা যাতে কদর্যভাবে মাথা তুলতে না পারে, সে জন্যই ধর্মনিরপেক্ষতার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন অধ্যাপক সেন।