বিশেষ সংবাদদাতা,কলকাতা:
করোনা পরিস্থিতি নিয়ে ফের সরব হল সিপিএম। পশ্চিমবাংলায় করোনা আক্রান্ত এবং মৃত্যুর পরিসংখ্যান নিয়ে রাজ্য সরকারের দেওয়া তথ্যকে চ্যালেঞ্জ জানালেন সিপিএম তথা বাম পরিষদীয় দলের নেতা সুজন চক্রবর্তী। সোশ্যাল মিডিয়ায় বিষয়টি নিয়ে ফের প্রশ্ন তুলে তিনি জানিয়েছেন, মৃতের সংখ্যা ৫৭ নয়, এখনও বাকি রয়েছে।
আসলে সরকারের তথ্য গোপন করার বিষয়টি এখন ধরা পড়ে গিয়েছে। তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (হু) গাইড লাইন মেনে রাজ্যে করোনা আক্রান্ত মৃতদের মধ্যে কতজনের শেষকৃত্য হয়েছে, তা কি সরকার জানাবে?’ পাশাপাশি তিনি জেলা ভিত্তিক আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা এবং স্থানের নাম প্রকাশ করারও দাবি করেছেন। তাঁর কথায়, ‘তথ্য জানার অধিকার মানুষের রয়েছে। তাই এ ক্ষেত্রে কোনও রকম গোপনীয়তা অবলম্বন করা ঠিক নয়।’
উল্লেখ্য, করোনা আক্রান্ত এবং মৃত্যুর সংখ্যা নিয়ে রাজ্য সরকারের দেওয়া বিভিন্ন তথ্যের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকদিন ধরেই তিনি সরব হয়েছেন। কয়েকদিন আগে রাজ্যের এক ব্যক্তির মৃত্যুর জন্য দেওয়া ড্রাফ ডেথ সার্টিফিকেট নিয়ে প্রশ্ন তুলে তিনি টুইটারে লিখেছিলেন, ‘এটা তো নতুন শব্দবন্ধ। ড্রাফ ডেথ সার্টিফিকেট কী? এমন সার্টিফিকেট আবার হয় নাকি? অডিট কমিটি যদি খারিজ করে দেয়, সেইজন্যই কি এমন সার্টিফিকেট দেওয়া হয়েছে?’ তিনি পরিষ্কার বলেছিলেন, ‘তথ্য গোপন করা বা তার বিকৃতি করা রাজ্যকে বিপজ্জনক জায়গায় নিয়ে যাচ্ছে।’ প্রসঙ্গত, কিছুদিন ধরে এ ভাবে রাজ্য সরকারের সমালোচনা করে চলায় বিভিন্ন থানায় তাঁর বিরুদ্ধে কয়েকটি এফআইআরও দায়ের হয়েছে। কিন্তু সুজনবাবু নিজের অবস্থানে অনড় রয়েছেন।
তবে করোনা পরিস্থিতি নিয়ে ধারাবাহিক ভাবে রাজ্যের ভূমিকার সমালোচনা করে চলেছে বিরোধী দলগুলি। এর আগে ২ এপ্রিল রাজ্যে করোনায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৬ বলে জানিয়েছিল সরকারের গঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটি। সেদিন আরও একজন করোনা আক্রান্ত মারা যান। তার মানে মৃতের সংখ্যা হয় ৭।
কিন্তু বিশেষজ্ঞ কমিটির ঘোষণার দেড় ঘণ্টার মধ্যের রাজ্যের মুখ্যসচিব সাংবাদিক বৈঠক করে জানিয়ে দেন, মৃতের সংখ্যা ৩। এর পরই সরকারের পরস্পর বিরোধী দুই ভাষ্য নিয়ে রাজ্য জুড়ে চর্চা শুরু হয়ে যায়।
এরই মধ্যে সংবাদ মাধ্যমেও করোনা পরিস্থিতি নিয়ে যে খবর প্রকাশিত হচ্ছিল, তা নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা মুখোপাধ্যায়। করোনায় মৃত্যুর ব্যাখ্যা করে তিনি জানান, করোনা আক্রান্ত অবস্থায় মৃত্যু হলেও তার কারণ অন্য কিছু হতে পারে।
পাশাপাশি মানুষকে অযথা আতঙ্কিত করতে পারে, এমন ধরনের সংবাদ প্রকাশ করা নিয়ে সংবাদ মাধ্যমগুলির সমালোচনা করেন। তখনই মুখ খোলেন সিপিএম রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র। টুইট করে তিনি জানান, কারও মৃত্যু হলে তার কারণ–সহ মৃত্যুর সার্টিফিকেট দেন চিকিৎসক।
এখন মুখ্যমন্ত্রী যদি নিজেই সার্টিফিকেট দিতে শুরু করেন, তা হলে পরিস্থিতি তো ভয়ঙ্কর হয়ে যাবে। তখন থেকেই করোনা সংক্রান্ত তথ্য সরকার গোপন করছে বলে বিরোধী দলগুলি অভিযোগ করতে শুরু করে। যদিও বিরোধীদের অভিযোগ সরকার বারবার উড়িয়ে দিয়েছে।