কলকাতা সংবাদদাতা:করোনা চিকিৎসার নামে বেসরকারি হাসপাতালগুলি যেন রীতিমতো ব্যবসা শুরু করে দিয়েছে পশ্চিমবাংলা জুড়ে। হাসপাতালগুলির তরফে রোগীদের হাতে বিশাল অঙ্কের বিল ধরিয়ে দেওয়া হচ্ছে বলে বেশ কিছুদিন ধরেই নানা জায়গা থেকে অজস্র অভিযোগ আসছে। এমনকী, কোনও কোনও রোগীর পরিবারের হাতে ৮–৯ লক্ষ টাকার (ভারতীয় মুদ্রায়) বিলও ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে অনেকেই অভিযোগ করেছেন।
বিষয়টি নিয়ে রাজ্য সরকারের তরফে বারবার বলা হয়েছে, করোনা চিকিৎসায় এত টাকা বিল হতে পারে না। চিকিৎসার জন্য রোগীদের নামে ন্যায্য বিলই যাতে করা হয়। এমনকী, করোনা টেস্টের মূল্য কত হতে পারে, তা–ও নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। রাজ্যের স্বাস্থ্য কমিশনও একের পর এক অ্যাডভাইসরি দিয়েছে। কিন্তু বেসরকারি হাসপাতালগুলি সেইসব অ্যাডভাইসরিকে কোনও গুরুত্বই দেয়নি। তাদের বিশাল অঙ্কের বিল করে চলার খেলা অব্যাহত রয়েছে। অবশেষে রাজ্য হেলথ রেগুলেটরি কমিশন স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে মামলা দায়ের করল কলকাতার ইস্টার্ন বাইপাসের ধারের একটি বেসরকারি হাসপাতালের বিরুদ্ধে। স্বাস্থ্য কমিশনের ইতিহাসে এই ঘটনা নজিরবিহীন।
উল্লেখ্য, শ্যামনগরের এক কোভিড আক্রান্ত চিকিৎসকের চিকিৎসার জন্য বাইপাসের ওই হাসপাতাল আকাশছোঁয়া বিল দেয়। সেই বিল বিবেচনা করে নতুন করে দেওয়ার জন্যেও নির্দেশ দিয়েছে স্বাস্থ্য কমিশন। এ ছাড়া চাহিদা মতো ২ লক্ষ টাকা দিতে না পারায় করোনা আক্রান্ত এক বৃদ্ধা এদিন ওই বেসরকারি হাসপাতালেরই জরুরি বিভাগের বাইরে অ্যাম্বুল্যান্সে পড়েছিলেন। চিকিৎসা দেরি করে শুরু হওয়ায় বৃদ্ধা মারা যান। তাঁর ছেলে জানান, তিনি অগ্রিম ৮০ হাজার টাকা দিয়েছিলেন। কিন্তু প্রথমেই ২ লক্ষ টাকার পুরোটা দিতে না পারায় বাইরে ফেলে রাখা হয় তাঁর মাকে। পরে পুরো টাকা জমা দিলে চিকিৎসা শুরু করে। কিন্তু তখন অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে।
এদিকে, করোনা মোকাবিলায় রাজ্যের তৃণমূল সরকার পুরোপুরি ব্যর্থ বলে অভিযোগ করেছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। লকডাউনের আনলক পর্যায়ে রাজ্য সরকারের নতুন করে সপ্তাহে ২ দিন সম্পূর্ণ লকডাউন ডাকার যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। বলেছেন, ‘এই লকডাউন যদি বিজ্ঞানসম্মত হয়, তা হলে রাজ্যে সংক্রমণ কেন হু হু করে বেড়ে চলেছে?’ রাজ্য সরকারের ‘এগিয়ে বাংলা’ স্লোগানকে কটাক্ষ করে তিনি বলেন, ‘করোনায় এগিয়ে বাংলা।’
পাশাপাশি ব্যাঙ্ক টানা চারদিন বন্ধ থাকবে বলে কারণ দেখিয়ে ২৮ আগস্টে সম্পূর্ণ লকডাউনের সিদ্ধান্ত বুধবারই প্রত্যাহার করে নিয়েছে রাজ্য সরকার। এই প্রসঙ্গে রাজ্য সরকারকে ‘অপদার্থ’ বলে কটাক্ষ করেছেন বিজেপির প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি রাহুল সিনহা। তিনি বলেছেন, ‘মুখ্যমন্ত্রী সাধারণ মানুষকে খুব বোকা ভাবেন। মানুষ কিন্তু সবই বুঝতে পারছেন। আসলে ব্যাঙ্ক বন্ধ থাকবে বলে নয়, তৃণমূল ছাত্র পরিষদের জন্মদিন বলেই ২৮ আগস্টের লকডাউন প্রত্যাহার করেছে রাজ্য।’