শেখ সাখাওয়াত হোসেন পাবনা (জেলা) প্রতিনিধি:
আরবী ১৮ জিলহজ্ব ইসলামের ইতিহাসে একটি স্মরণীয় দিন। ঈদে গাদির নামে এ দিনটি পরিচিত। দশম হিজরীর এ দিনে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা:) যে ঐতিহাসিক ঘোষণা দেন তারই আলোকে এ দিনটি উদযাপিত হয় অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে।
এ উপলক্ষে পাবনার ভাঙ্গুড়ায় ঈদে গাদিরে ঘুমের আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়েছে। শুক্রবার (৭ জুলাই) ভাঙ্গুড়া পৌরসভার ০১ (এক) নং ওয়ার্ডের চৌবাড়ীয়া মাষ্টার পাড়া মহল্লার বাবা ইসমাইল খাঁ আল-কাদেরীর বাসভবনে বাদ মাগরিব থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত ঈদে গাদিরে ঘুমের বিস্তারিত আলোচনা করা হয়। আলোচনার মাঝে বিরতি দিয়ে এশার নামাজ জামাতের সাথে আদায় করা হয়। প্রতি বছর ১৮ জিলহজ্ব উপলক্ষে আলোচনা সভার আয়োজন করেন তিনি। উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে শতাধিক আসেকান জাকেরান উপস্থিত ছিলেন এ আলোচনা সভায়। উক্ত আলোচনা শেষে আসেকান জাকেরানদের মাঝে তাবারক বিতরণ করা হয়।
রাসূল পাকের (সা.) পার্থিব কর্মজীবনের পরিসমাপ্তি ঘটতে যাচ্ছে। এ অবস্থায় তার অবর্তমানে নবুয়্যতি কার্যক্রম পরিচালনার উপযুক্ত প্রতিনিধি দরকার। তাই হজরত আলীকে আল্লাহর প্রতিনিধি করার জন্য উপযুক্ত করে গড়ে তোলা হয়েছে। রিসালাতের কাজে রাসূল পাকের (সা.) পরে আলীই হলেন তার একমাত্র যোগ্য প্রতিনিধি। নবীজি বিদায় নিচ্ছেন। তিনি আল্লাহর প্রতিনিধি। তাই তার অবর্তমানে তার দায়িত্বে স্থলাভিষিক্ত হচ্ছেন আলী (রা.)। কেননা রাসূলে পাক (সা.) (জীবনে একবার মাত্র) পবিত্র হজব্রত সম্পন্ন করে প্রিয় জন্মভূমি মক্কা শহরকে চিরবিদায় দিয়েছেন বলে একে ‘বিদায় হজ’ বলা হয়। রাসূলে পাক (সা.) হজব্রত পালন করে মদিনার উদ্দেশে রওনা হন। পথে ১৮ জিলহজ তারিখে ‘গাদিরে খুমে’ (গাদির অর্থ জলাশয়, খুম-স্থানের নাম) অর্থাৎ খুমের জলাশয়ের কাছাকাছি হলে কোরআনের সর্বশেষ আয়াতের ঠিক আগের আয়াতটি নাজিল হয়।
আয়াতটি হল-
‘ইয়া আয়্যুহার রাসূল বাল্লিগ মা-উনজিলা ইলাইকা মির রব্বিকা। ওয়া ইললাম্ তাফআ’ল ফামা বাল্লাগতা রেসালাতাহু। আল্লাহু ইয়া সিমুকা মিনান্নাস। ইন্নাল্লাহা লা-ইয়াহদিল কাওমাল কাফিরিন।’
অর্থ : হে রাসূল, আপনার রব থেকে যা নাজিল করা হয়েছে তা পৌঁছিয়ে দিন। আর যদি তা না করেন তাহলে তাঁর (আল্লাহর) রিসালাত পৌঁছিয়ে দেয়া হল না। আল্লাহ আপনাকে মানবমণ্ডলী থেকে নিয়ে আসবেন। নিশ্চয় আল্লাহপাক কাফের দলকে হেদায়েত করেন না।
আয়াতটি আলীর মাওলাইয়াত ঘোষণা করার বিষয়ে অবতীর্ণ যা বাস্তবায়িত না করলে আল্লাহর রিসালাতই অপূর্ণ থেকে যায়। সুতরাং সঙ্গত কারণেই রাসূলে খোদা (সা.) গাদিরে খুমে থেমে গেলেন এবং এই অহির নির্দেশক্রমে প্রায় সোয়া লাখ সাহাবির উপস্থিতে অনাড়ম্বর পরিবেশে মোমিনে বা বিশ্বাসীদের প্রতিনিধি বা ‘মাওলা’ হিসেবে হজরত আলীকে তার স্থলাভিষিক্ত করে নেন। এরপর রাসূলে পাক (সা.) তার প্রার্থনায় বলেন :
‘মানকুনতুম মাওলাহু ফাহাজা আলীউন মাওলাহু।
আল্লাহুম্মা ওয়ালে মান ওয়ালাহু, আদামান আদাহু, অনসুর মান নাসারা, অখজুল মান্ খাজালা, ফাল্ইয়াস হাদিল, হাজিরুন খাইরা।’
অর্থাৎ আমি যার মাওলা এই আলী তার মাওলা। হে আল্লাহ, তুমি তাকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করো যে তাকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করে, যে তার সঙ্গে শত্রুতা করে লাঞ্ছনা দাও তাকে।
এরপর ‘মাওলাল মোমিনিন’ বা বিশ্বাসীগণের ‘মাওলা’ হিসেবে হজরত আলী ইবনে আবি তালিবকে রাসূলে পাক (সা.) তার স্থলাভিষিক্ত করে গাদিরে খুমে যে অভিষেক অনুষ্ঠান করেন, ইতিহাসে তা ‘গাদিরে খুম’ বা ‘ঈদে গাদির’ নামে পরিচিত।
ঐতিহাসিক গাদিরে খুমের এ ঘটনা স্বীকৃতি রয়েছে বিভিন্ন তফসির (কাশ্শাফ) ও হাদিস (বোখারি ও মেশকাত) গ্রন্থে। ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, ঢাকা থেকে প্রকাশিত গ্রন্থাদিতেও (যেমন হজরত আলীর (রা) জীবন ও খিলাফত) এই সত্যতার প্রমাণ রয়েছে।