নিজস্ব প্রতিনিধি: পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সাথে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপি এর মতবিনিময় সভা প্রধান কার্যালয়ের কর্ণফুলী সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত হয়েছে। উক্ত সভায় পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান (রাষ্ট্রদূত অবঃ) সুপ্রদীপ চাকমা এর সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপি।
(সোমবার) সকাল ১০টায় অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় চেয়ারম্যান (রাষ্ট্রদূত অবঃ) সুপ্রদীপ চাকমা স্বাগত বক্তব্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীকে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও কৃতজ্ঞতা জানান।
পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাবনা ফসল। ১৯৭৬ সালে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড সৃষ্টি। প্রতিষ্ঠানটি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর কারণে সৃষ্টি হয়েছে এবং বোর্ডের কর্মকর্তা/কর্মচারীগণ দীর্ঘদিন ধরে পশ্চাপদ ও দুর্গম পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকা উন্নয়নের জন্য সেবা দিয়ে আসছে। ইতোমধ্যে বোর্ডের কর্মকর্তা/কর্মচারী অনেকে মৃত্যুবরণ করেছেন এবং তাদের অবদান অনস্বীকার্য। কিন্তু চাকুরি শেষান্তে অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা/কর্মচারীগণকে খালি হাতে চলে যেতে হয়।
মতবিনিময় সভায় বোর্ডের কর্মকর্তা/কর্মচারীদের পক্ষ থেকে পেনশনের বিষয়ে এমন দাবি দাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় বোর্ডের কর্মকর্তা/কর্মচারীদের পেনশনের বিষয় নিয়ে অত্যন্ত গুরুত ¡সহকারে কাজ করছে। মন্ত্রণালয় বোর্ডের কর্মকর্তা/কর্মচারীদের পেনশন সুবিধা ভোগ করুক সেটা চায়। পার্বত্য চট্টগ্রামের যেকোন বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা অত্যন্ত আন্তরিক।
গত ০৩/০৪/২০১৪ ইং তারিখে অর্থমন্ত্রী’র সভাপতিত্বে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা/কর্মচারীদের সাধারণ ভবিষ্যত তহবিল এবং অবসরজনিত সুবিধা প্রদানের লক্ষ্যে গত ০৯/০৮/১৯৯৯ তারিখে ১৬৩ নং স্বারকের-২ এর (ক), (খ) ও (গ) শর্ত তিনটি শিথিল করা হয়। উক্ত শিথিলের সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা বিগত ১৩/০৪/২০১৪ তারিখে স্বাক্ষর করেন। অবশিষ্ট দুটি শর্ত পালন করে অর্থবিভাগে অনুমোদন নেয়ার কথা উল্লেখ ছিলো। উক্ত দুটি শর্তগুলি পূরণ সাপেক্ষে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে অর্থ বিভাগে প্রেরণ করা হলে অর্থ বিভাগ হতে অসম্মতি জ্ঞাপন করা হয়। এভাবে পরপর তিনবার অর্থ বিভাগ থেকে অসম্মতি জ্ঞাপন করা হয়েছে। বর্তমানে বোর্ডের কর্মকর্তা/কর্মচারীদের পেনশনের সুবিধা চালু করার বিষয়টি অর্থ বিভাগের অসম্মতির কারণে অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
এসময় মন্ত্রী বলেন যে,পেনশন সুবিধা চালু না হওয়া পর্যন্ত প্রশাসনিক কার্যক্রম চালিয়ে যেতে হবে। পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা/কর্মচারীদের জন্য পেনশন সুবিধা চালু হওয়া উচিত। পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা/কর্মচারীদের পেনশন সুবিধা পুরোপুরি চালু না হওয়া পর্যন্ত সর্বোচ্চ চেষ্টায় চালিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রæতি দেন এবং এবিষয়ে হতাশ না হওয়ার জন্য আশ^স্ত করেন।
তিনি আরও বলেন যে, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড সম্পর্কে একসময় মানুষ তেমন জানার সুযোগ ছিল না কারণ অন্যভাবে পরিচালিত ছিল। বর্তমানে বোর্ডের অবস্থান অনেক উপরে এবং বিভিন্ন দৃশ্যমান উন্নয়নের জন্য সবার কাছে গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্দি পেয়েছে। আগের তুলনায় বোর্ডের কাজের পরিধি অনেক বেড়েছে। তাই প্রকৌশল শাখাকে আরো শক্তিশালী করতে হবে এবং সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য জনবল বৃদ্ধি করা দরকার বলে দিক নির্দেশনা প্রদান করেন।
প্রধান অতিথি তাঁর বক্তব্যে জানান যে, টেকসই সামাজিক সেবা প্রদান প্রকল্প (এসএসএস-সিএইচটি) নতুন করে শুরু করার জন্য পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। মাননীয় মন্ত্রী’র ঐকান্তিক প্রচেষ্টার কারণে প্রকল্প অনুমোদনের কার্যক্রম অনেকদূর এগিয়েছে। তাই টেকসই সামাজিক সেবা প্রদান প্রকল্পের পক্ষ থেকে মন্ত্রীকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানানো হয়। আশা করা যাচ্ছে প্রকল্প কার্যক্রম শীঘ্রই শুরু করা যাবে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক এমন সুন্দর মতবিনিময় সভা আয়োজনের জন্য চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্ট সকল কর্মকর্তাও কর্মচারীগণের প্রতি তিনি কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানান।
সভায় পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান (রাষ্ট্রদূত অবঃ) সুপ্রদীপ চাকমা, ভাইস-চেয়ারম্যান মোহাম্মদ নুরুল আলম চৌধুরী (অতিরিক্ত সচিব) সদস্য বাস্তবায়ন মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ (যুগ্মসচিব), সদস্য সচিব ও সদস্য প্রশাসন মোঃ জসীম উদ্দিন (উপসচিব), উপপরিচালক মংছেনলাইন রাখাইন, রাঙ্গামাটি নির্বাহী প্রকৌশলী তুষিত চাকমা, টেকসই সামাজিক সেবা প্রদান প্রকল্পের সাবেক প্রকল্প ব্যবস্থাপক মোঃ এয়াছিনুল হক, কাইংওয়াই ম্রো গবেষণা কর্মকর্তা; মোঃ নুরুজ্জামান বাজেট ও অডিট অফিসার, কল্যানময় চাকমা হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা, সহকারী প্রকৌশলী মোঃ খোরশেদ আলম, সহকারী প্রকৌশলী মিজ্ ত্রয়া সরকার, তথ্য অফিসার মিজ্ ডজী ত্রিপুরা, প্রশাসনিক কর্মকর্তা সাগর পাল, মনতোষ চাকমা সহকারী পরিকল্পনা কর্মকর্তাসহ পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডসহ বোর্ডের বিভিন্ন পর্যায়ের ঊর্দ্ধতন কর্মকর্তা ও কর্মচারীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের সামাজিক সেবা প্রকল্প পাড়াকেন্দ্রের বিগত তিন মাস শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ার বিষয়ে কোন আলোচনা হয়নি।