চৌধুরী হারুনুর রশীদ,রাঙামাটি: অন্তবর্তীকালীন পরিষদগুলোর নির্বাচন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে ? পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ প্রতিষ্টার পর পুনর্গঠিত হয়নি ! এসব সমস্যা নিয়ে কোন সরকার আন্তরীক নয়। ফলে ভিন্ন ভিন্ন ইস্যুতে সমস্যার গভীরতা দিন দিন বাড়ছে পার্বত্য চট্টগ্রামে।
এই দিকে শান্তি চুক্তির কিছু ধারা এবংএই বিষয়ে হাইকোর্টের এক রায়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদকে অবৈধ ঘোষনা করেছেন অনেক আগেই। এই বিষয়ে বর্তমানে মহামান্য সুপ্রীমকোর্টের আপিল বিভাগের বিচারধীন রয়েছে। আপিল বিভাগের রায় চুড়ান্ত না হওয়া পর্যন্ত পার্বত্য চ্ট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ নিয়ে ভবিষ্যতে কি হবে তা নিয়ে মুলতঃ নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। বিষয় নিয়ে সরকারের বক্তব্য সুস্পষ্ট নয়।
সরকারের অনিচ্ছার আনুকুল্যে পার্বত্য চট্টগ্রামের বর্তমান শাসন ব্যবস্থা পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা বহন করে। বিগত প্রায় তিন যুগ ধরে দেশে যখনই সরকার পরিবর্তন হয়, তখন কেবলই ক্ষমতাসীন সরকার জেলা পরিষদগুলো পূর্ণগঠন করে আসছে। অভিজ্ঞতা না থাকলেও এসব দলীয় লোকদের দিয়ে সাধারন মানুষের কোন কল্যাণ হচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। স্বজনপ্রীতি ঘুষ দুর্নীতি দিনে দিনে বাড়ছে !
এই কারণে বিগত প্রায় তিন যুগ ধরে জেলা পরিষদ গুলোর নির্বাচন হচ্ছে না। স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠার পর প্রথম নির্বাচন হয় ১৯৮৯ সালে।সেই সময়ে একজন চেয়ারম্যান ও বিভিন্ন সম্প্রদায়ের ৩০জন সদস্য নির্বাচিত হয়। বর্তমানে একজন চেয়ারম্যান চৌদ্দজন মনোনীত সদস্য নিয়ে ২২ টি বিভাগ পরিচালনা করে আসছে জেলা পরিষদগুলো। তার আগে দলীয় সরকারের চেয়ারম্যান ও চারজন মনোনীত সদস্য দিয়ে পরিচালনা করেছে। শান্তি চুক্তির আলোকে পুলিশ বিভাগ ও বনবিভাগসহ আরো কয়েকটি বিভাগ হস্তান্তর করার প্রক্রিয়া চলছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি তথা শান্তিচুক্তির এক পক্ষ পার্বত্যঞ্চলে পৃথক ভোটার তালিকা ইস্যুতে এখনো আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। তবে প্রসঙ্গে নির্বাচন কমিশনার সুত্রে বলা হয় সরকার আন্তরিক হলে জাতীয় ভোটার তালিকায় পার্বত্য জেলা পরিষদের নির্বাচন করা সম্ভব।
বর্তমান জেলা পষিদের বর্তমান মনোনীত চেয়ারম্যান বৃষকেতু চাকমা প্রতিবেদকে বলেন, জেলা পরিষদের নির্বাচন শতভাগ সমর্থন করবো । নির্বাচন হলে প্রতিটি উপজেলা থেকে যোগ্য প্রার্থীরা পরিষদে আসবে এবং শক্তিশালী হবে। তিনি আরো বলেন, চুক্তির আলোকে সংশোধন আইন ,১৯৯৮(১৯৯৮ সনের ১১নং)বর্ণিত ১ম তফসিল অনুযায়ী সরকার কর্তৃক পরিচালিত মাধ্যমিক শিক্ষার কার্যক্রম গ্রহন করিতে সম্মত হয়েছে। যেহেতু সরকার উক্ত আইনের ২৩(খ) ধারায় প্রদক্ত ক্ষমতা বলে রাঙামাটি জেলা পরিষদের সম্মতিক্রমে এই জেলা অবস্থিত সকল সরকারি ও বেসরকারী মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কর্ম ও বিষয়গুলি রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের ব্যবস্থাপনায় নিয়ন্ত্রনে শর্তাধীনে হস্তান্তর করেছে । পরিষদের চেয়ারম্যনদের এখনো পদ মর্যাদা নিধারণ করা হয়নি ।
বিভিন্ন সরকারের আমলে পার্বত্য তিনটি জেলা পরিষদে অন্তর্বর্তীকালিন পরিষদ রদবদল ও পুনর্গঠন করা হলেও পার্বত্য মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ও আঞ্চলিক পরিষদে কোন পরিবর্তন হয় না। পার্বত্য চট্টগ্রাম সংক্রান্ত এসব গুরুত্বপূর্ণ পরিষদে রদবদল বা পুনর্গঠন না হওয়ায় অনেক সময় বিভ্রান্তির সৃষ্টি হচ্ছে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের পূর্ণগঠনের দাবী ঊঠলে পার্বত্য এলাকার তথাকথিত নীতিনিধারক তথা একটি বিশেষ মহলের শীর্ষনেতারা আইনগত জটিলতা দেখিয়ে বিষয়টি বার বার এড়িয়ে যান। যেই আইনগত জটিলতা দেখিয়ে আঞ্চলিক চুক্তির (গ) অংশের ১ নং ধারায় পার্বত্য জেলাপরিষদে অধিকতর শক্তিশালী ও কার্যকর করার লক্ষ্যে স্থানীয় সরকার পরিষদ আইন, ১৯৮৯ সনের ১৯,২০ ও ২১ নং আইনের ধারা সংশোধন ও সংযোজন করে তিন পার্বত্য জেলা পরিষদ পূর্ণগঠন করা হয়। চুক্তির ২নং ৫নং ও ৬ নং ধারা যথাযথ প্রয়োগ হচ্ছে না বলে ব্যাপক অভিযোগ উঠেছে।
পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষ নির্বাচনের ভিত্তিতে পরবর্তী পরিষদ গঠিত না হওয়া পর্যন্ত সরকার অন্তবর্তীকালিন পরিষদের ওপর প্রদেয় দায়িত্ব দিতে পারবেন বলে উল্লেখ থাকলেও এ বিষয়ে সরকারের পরবর্তী সিদ্ধান্ত সুস্পষ্ট করা হয়নি বলে আলোচনার নামে কালক্ষেপন করে চলছে।