সুমন,মোংলা(বাগেরহাট)সংবাদদাতাঃ মোংলায় ভাড়াটিয়ার হামলায় বাড়ীর মালিকসহ অন্তত ১০জন নারী-পুরুষ আহত হয়েছেন। এ সময় গুরুতর জখম ৫জনসহ ১৩জনকে ঘটনাস্থল ও হাসপাতাল থেকে পুলিশ আটক করেছেন। এরমধ্যে একজন স্কুল শিক্ষিকাও রয়েছেন। শুক্রবার (১০আগষ্ট) পৌর শহরের জয়বাংলা এলাকায় এ হামলার ঘটনায় শনিবার (১২আগষ্ট) দুপুরে আমড়াতলা গ্রামের নিজ বাড়ীতে সংবাদ সম্মেলন করে এই অভিযোগ করেন প্রকৃত বাড়ীর মালিক সাইফুজ্জামান প্রিন্সের ছোট ভাই টিপু হাওলাদার। টিপু হাওলাদার সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করে বলেন, ২০১৫ সালে পৌর শহরের জয়বাংলা এলাকার মজনিয়ার শেখ ও অহিদুলের কাছ থেকে তার বড় ভাই সাইফুজ্জামান প্রিন্স ৩৫দশমিক ৫৩শতক জমি ক্রয় করে বাড়ী করেন। এরপর সেই থেকে তার পরিবার নিয়ে সেখানে বসবাস করে আসছিলেন তিনি। এরপর গত কয়েক বছর আগে স্থানীয় সোহেল ও ফাতেমা দম্পতির কাছে বাড়ীটি ভাড়া দিয়ে তারা উপজেলার সোনাইলতলা ইউনিয়নের আমড়াতলা গ্রামের বাড়ীতে চলে যান। ভাড়া থাকার সুযোগে ওই বাড়ীর জাল কাগজপত্র তৈরি করে একটি দলিল করেন ভাড়াটিয়া সোহেল ও ফাতেমা। এছাড়া গত প্রায় দেড় বছর ধরে ভাড়ার টাকাও পরিশোধ করছিলেন না তারা। ভাড়ার বকেয়া টাকার জন্য ও জাল দলিলের বিষয়ে জানতে পেরে শুক্রবার (১১আগষ্ট) দুপুরে নিজ বাড়ীতে গেলে ভাড়াটিয়া সোহেল-ফাতেমা গং তাদের উপর দেশি অস্ত্র নিয়ে হামলা চালায়। এতে বাড়ীর মালিক সাইফুজ্জামান প্রিন্স (৪৫) ও নিকটাত্নীয় সোবাহান চৌকিদার (৩৮), রাসেল ফকির (২৭), সুমি আক্তার (২২), সবুজ (২০), রাসেল শেখ (২০), মিজান শিকদার (৩৫), তৈয়রব শেখ (৫০), শরিফুল শেখ (২২) ও টিপু হাওলাদার (৩৫) গুরুতর আহত হন।
এরমধ্যে গুরুতর জখম নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া সাইফুজ্জামান প্রিন্স (৪৫), রাসেল ফকির (৩৮) ও সবুজ (২৫)সহ ১৩ জনকে আটক করেন পুলিশ। আটকৃতদের মধ্যে ঘটনার সময় উপস্থিত না থাকলেও সাইফুজ্জামান প্রিন্সের মা শামসুন্নাহার বেগম, স্ত্রী ও আমড়াতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা ঝুমুর আক্তার এবং তার মেয়ে মারজিয়া আক্তারকে হাতকড়া পরিয়ে আটক করে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। এ ঘটনায় হামলার শিকার ১০জনসহ ১৫জনকে আসামী করে ভাড়াটিয়া শেখ সোহেলের দায়েরকৃত মামলায় ৯জনকে আটক করে শনিবার বাগেরহাট জেল হাজতে পাঠায় পুলিশ।
এদিকে বাড়ীর মালিক সাইফুজ্জামান প্রিন্সের ভাই টিপু হাওলাদার অভিযোগ করে সংবাদ সম্মেলনে আরো বলেন, নিজেদের বাড়ীতে উঠতে গিয়ে ভাড়াটিয়ার হামলার শিকার হলাম আমরা পরিবারসহ। এ ঘটনায় পুলিশ কোন সহযোগীতা না করে উল্টো তাদের লোকদেরকে গ্রেফতার করে জেল হাজতে প্রেরণ করেছেন। তিনি এ ঘটনায় পুলিশের বিরুদ্ধে পক্ষপাতের অভিযোগ করে আরো বলেন, আমাদের উপর হামলা চালিয়ে গুরুতর জখম করে মুল ঘটনা ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে সোহেল-ফাতেমা দম্পত্তি নিজেদের আহত করার নাটক সাজিয়ে থানায় মিথ্যা মামলা দায়ের করেছেন। এ ঘটনায় টিপুর স্ত্রী জান্নাত বেগম বাদী হয়ে মোংলা থানায় একটি অভিযোগও দিয়েছেন বলে সংবাদ সম্মেলনে জানান তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে আরো বলা হয়, ঘটনার সময় সন্ত্রাসীদের হামলায় গুরুতর জখম হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় ৩জনকে পুলিশ হাত কড়া পরিয়ে থানায় নিয়ে যায়। পরে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা পুলিশকে ফোন দিলে থানা থেকে আহতদের হাসপাতালে ফের চিকিৎসার জন্য ফেরত পাঠানো হয়।
এ বিষয়ে মোংলা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ মোঃ শাহীন বলেন, হাসপাতালে ভর্তিকৃত জখমী কোন রোগীকে তাদের অনুমতি ছাড়া পুলিশ এভাবে আটক করে থানায় নিয়ে যেতে পারেন না।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত সোহেল-ফাতেমা দম্পত্তি তাদের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ওই জমি নিয়ে আদালতে মামলা চলা অবস্থায় সাইফুজ্জামান প্রিন্স ও তার লোকজন বাড়ী দখল নিতে আসলে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে তারাসহ তাদের লোকজন আহন হন। এ ঘটনায় থানায় মামলা করেছেন তারা।
এ বিষয়ে মোংলা থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ সামসুদ্দীন মুঠোফোনে বলেন, আমি মিটিংয়ে আছি, এ ব্যাপারে পরে কথা বলবো।
এ ব্যাপারে মোংলা সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার মুশফিকুর রহমান তুষার বলেন, আদালতের রায়ে বাড়ীটি দখলে নেয়ার চেষ্টা চালায় প্রিন্স হাওলাদার। এনিয়ে সংঘর্ষের খবরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন ও প্রিন্সসহ ১ জনকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। এ ঘটনায় মামলা দায়েরের পর আটককৃতদের মধ্যে ৯জনকে আদালতে পেরণ করা হয় ও বাকীদের ছেড়ে দেয়া হয়েছে। এ ঘটনায় পুলিশের বিরুদ্ধে আনীত পক্ষপাতের অভিযোগ সঠিক নয় বলে দাবী করেন তিনি।