প্রত্যয় ওয়েব ডেস্ক :
ফ্রান্স একটি ধর্মনিরপেক্ষ মহান দেশ , এই দেশে সকল ধর্ম বর্ণের মানুষ সুখ শান্তিতে বসবাস করছে। ফ্রান্সে বর্তমানে প্রায় পঞ্চাশ লক্ষের অধিক মুসলিম রয়েছে যা স্ক্যান্ডেনেভিয়ান একটি দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় সমান।
আজকে আপনাদের সামনে প্যারিসের জাতীয় মসজিদ Grande Mosquée de Paris সম্পর্কে কিছু তথ্য :
Grande Mosquée de Paris যাকে ইংলিশে The Great Mosque of Paris বলা হয়। এটি প্যারিস-৫ এ অবস্থিত এবং ফ্রান্সের সর্ব বৃহৎ মসজিদ।
ইসলাম মুসলমানদেরকে ব্যাপকভাবে মসজিদ নির্মাণে উৎসাহিত করেছে, তার জন্য বিশেষ ছাওয়াব ঘোষণা করেছে। মসজিদ তৈরি করার মর্যাদা কিংবা মসজিদ নির্মাণের ফযীলত বর্ণনা আমরা তিরমিযী শরীফের ২৯২ নাম্বার হাদিসে দেখতে পাই যেখানে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন- যে আল্লার সন্তুষ্টির উদ্দেশে মসজিদ তৈরি করলো আল্লাহ তাআলা তার জন্য জান্নাতে মসজিদের মত একটি ঘর তৈরি করে দিবেন। (সুবহানাল্লাহ )।
এই মসজিদের স্থাপনার পেছনে রয়েছে ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট।প্রথম বিশ্বযুদ্ধে ফ্রান্সের কলোনির পক্ষে প্রায় এক লক্ষ মুসলিম জার্মানির বিপক্ষে যুদ্ধ করে মৃত্যুবরণ করেন।তাই মুসলমানদের প্রতি কৃতজ্ঞতা স্বরূপ ১৯২৬ সালে এটি স্থাপন করা হয়. এই মসজিদের উদ্বোধন করা হয় ১৯২৬ সালের ১৫ জুলাই এবং উদ্বোধন করেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট Gaston Doumergue. মসজিদের প্রথম জামায়াতে ইমামতি করেন বিখ্যাত আলজেরিয়ান সুফী এবং আধুনিক সুফী মতবাদ Darqawiyya Alawiyya এর প্রবক্তা Ahmad al-Alawi.তখন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ও উপস্থিত ছিলেন।
পুরো মসজিদটি প্রায় আড়াই একর জায়গার উপরে প্রতিষ্ঠিত এবং এই মসজিদটি mudéjar স্টাইলে করা হয়েছে । মসজিদের যেই দীর্ঘ মিনারাত রয়েছে তাঁর উচ্চতা ৩৩ মিটার। চোখ ধাঁধানো কারুকার্য এবং পাথর দিয়ে সাজানো হয়েছে এই মসজিদটি। আপনি যদি এর ভেতরে প্রবেশ করেন তাহলে আধ্যাত্বিক একটা পরিবেশ অনুভব করতে পারবেন।
এই মসজিদ আরো একটি কারণে মুসলমানদের সন্মান পুরো পৃথিবীর সামনে বাড়িয়ে দিয়েছিলো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে।এই মসজিদের প্রতিষ্ঠাতা এবং তৎকালীন প্রধান Si Kaddour Benghabrit আলজেরিয়ান ও ইউরপিয়ান ইহুদিদের গোপনে আশ্রয় দিতেন এইখানে।তিনি তাঁদের গোপনে থাকা, বের হয়ে যাওয়া এবং নকল মুসলিম জন্মসনদ দিতেন যেন তাঁদেরকে মুসলিম মনে করে জার্মানরা হত্যা করতে না পারেন।মুসলমানদের এই অবদান আজও ফ্রান্সের মানুষ এবং ইহুদিরা মনে রেখেছেন।
প্রথমে এটাকে স্পনসর করেছিলেন মরোক্কোর রাজা কিন্তু পরবর্তীতে ১৯৫৭ সালে ফ্রান্সের ফরেন মিনিস্টার এর দায়িত্ব আলজেরিয়ার কাছে হস্তান্তর করেন।বর্তমানে এই মসজিদের প্রধান হিসেবে আছেন মুফতি Dalil Boubakeur.
এই মসজিদের ওয়ালগুলো মোজাইকের এবং ছাদ সাদা মার্বেলের। এছাড়া পুরো মসজিদ জুড়ে ঝর্ণা, পুল এবং ফুল দেখতে পাবেন।পর্যটকদের জন্যে ওপেন করা জায়গাগুলো যেকনো সময়ই তারা পরিদর্শন করতে পারবেন তবে মুসলমানদের ধর্মীয় রীতি যেমন নামাজ পড়া, জানাজা আদায় এবং কুরআন পড়ার জায়গা শুধু মুসলমানদের জন্যে। অন্য কারো প্রবেশ নিষেধ।
এই রমজানে চাইলে আপনিও এই ঐতিহাসিক মসজিদে সালাত আদায় করে নিতে পারেন এবং ইফতারীও করতে পারেন।
Grande Mosquée de Paris
ঠিকানা : 2 bis Place du Puits de l’Ermite ,75005 Paris .
যাতায়াত : মেট্রো লাইন ৭ , মেট্রো স্টেশন : Censier – Daubenton
বাস: ৮৯ ,স্টপেজ : Buffon – La Mosquée.
নোট : করোনা ভাইরাসের মহামারীর কারণে বর্তমানে সীমিত আকারে খোলা আছে
(ছবিও কিছু তথ্য অনলাইন থেকে সংগৃহীত)
সূত্র: Bangladesh Community in France – BCF
আরও পড়ুন :আয়ারল্যান্ডে ইসলামের প্রসার ঘটছে