৫ মে একটি বিচারিকসূত্রের বরাত দিয়ে এএফপি জানায়, গত সপ্তাহে মাগরেব থেকে অপ্রাপ্তবয়স্ক নাবালকদের শোষণকারী দুটি চক্রের সাথে জড়িত থাকার সন্দেহে গ্রেফতার হওয়া ছয়জন কে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নেয়া হয়েছে।
৩০ এপ্রিল শুক্রবার আদালত অভিযুক্ত পাঁচ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করার নির্দেশ দেয়। তাদেরকে মানবপাচার, সংগঠিত অপরাধ, গ্যাং ডাকাতির পাশাপাশি অর্থ পাচারের মতো ফৌজদারি অপরাধে অভিযুক্ত করা হয়েছে। অভিযুক্ত ষষ্ঠ ব্যক্তিকে অর্থ পাচার ও গ্যাং-এর প্রধান হিসেবে বিচারবিভাগীয় নজরদারীতে রাখা হয়েছে।
ফরাসি দৈনিক লো ফিগারো গত সপ্তাহে প্যারিস, সেইন-সেন্ট-ডেনিস এবং ভাল-দ্য-মার্ন ডিপার্টমেন্টে সাত জন মরোক্কান ও আলজেরিয়ান অভিবাসীকে গ্রেফতারের বিষয়টি প্রকাশ করে। গ্রেফতারকৃত সবাই প্রাপ্তবয়স্ক ও অনিয়মিত অভিবাসী।
ফিগারো জানায়, এই চক্রগুলি তরুণদের থাকার ব্যবস্থা করেছিল। এর পর, তাদের অপরাধমূলক কাজের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। যেমন, চুরি করার জন্য বা গয়না ছিঁড়ে পালিয়ে যাওয়ার জন্য কোন এলাকাগুলো সহজ, এমন নির্দেশনা দেয়া হতো। তরুণরা কোনো অপারেশনে সফল না হলে তাদের শাস্তি দেয়া হতো এবং তাদেরকে কোনো টাকা দেয়া হতো না। চুরি, ডাকাতি ও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড সফল হলে সেখান থেকে প্রাপ্ত টাকার একটা অংশ তাদের দেয়া হতো।
“অভিবাসন যাত্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া ১৬-১৭ বছর বয়েসি একজন মাগরেবিয়ান কিশোর”
অভিভাবকহীন নাবালকদের সংগঠিত অপরাধে যুকত থাকার বিষয়টি ব্যাপক বিতর্কিত। ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে বিচার মন্ত্রণালয় থেকে প্রাপ্ত দুই থেকে তিন হাজার অভিযোগকারীর দেওয়া তথ্যের ওপর ভিত্তি করে সাম্প্রতিক একটি সংসদীয় প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে।
সেই প্রতিবেদনে উঠে আসে, অভিযুক্তদের মধ্যে দশ শতাংশ অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ে এবং তার মধ্যে ৭৫% মাগরেব অঞ্চল থেকে আসা। বেশিরভাগই আলজেরিয়ান ও মরোক্কান নাগরিক এবং কয়েকজন লিবিয়া বা আইভরি কোস্ট থেকে আসা।
সংসদীয় মিশনটির সহকারী নির্দেশক এবং হেরল্ট শহরের সংসদ সদস্য জঁ ফ্রসোয়া এলিয়াও এএফপিকে বলেন, “গ্রেফতারকৃতদের ধরণ বুঝতে উদারহণস্বরূপ ১৬/১৭ বছর বয়েসি একজন মাগরেবিয়ান কিশোরের কথা বলতে পারি, সে তার দেশ ও পরিবার থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। তার অভিবাসন যাত্রাটি ছিল মাদকাসক্তি, জীবিকা নির্বাহে অপরাধে লিপ্ত হওয়াসহ নানা ভুল কাজে ভরা। সে এমন একটি গ্যাংয়ের সাথে ওতপ্রোতভাবে মিশে পড়ে, যা কিছুটা বিচ্ছিন্নভাবে কাজ করত।”
এই চক্রগুলি সাধারনত প্যারিসের পর্যটক এলাকা মোঁমারতের কাছাকাছি, বিশেষ করে ১৮ নং ডিসট্রিক্ট এবং আরো কিছু বড় শহরে, তাদের কার্যক্রম চালিয়ে থাকে। তারা মাদকের পাশাপাশি বিভিন্ন ধরণের ওষুধ মিশিয়ে এক ধরনের মিশ্রণ পান করে থাকে, যা তাদের মধ্যে অপরাধপ্রবণতা বাড়াতে সাহায্য করে। তারা চুরি, গণপরিবহনে ছিনতাইয়ের পাশাপাশি ওষুধের দোকানে ভাঙচুর করে লুট করে থাকে।
“অপরাধীরা সবসময় আছে এবং তারা জানে যে তরুণরা তাদের প্রলোভনের শিকার”
এই বহুল আলোচিত অপরাধের ধারাটি আলোচনায় আনেন শিশুদের অধিকারের জন্য ফ্রেঞ্চ কাউন্সিল অফ অ্যাসোসিয়েশন (কোফ্রাড) এর সভাপতি আর্মেল লো বিগো-মাকো। সম্প্রতি ইনফোমাইগ্রেন্টসকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি অভিভাবকহীন নাবালকদের অপরাধমূলক কাজে ব্যবহারের বিষয়টি উত্থাপন করেন।
তিনি জানান, “আমাদের আশঙ্কা, এই কিশোররা টিকে থাকার জন্য একেকজন প্রকৃত অপরাধী হয়ে উঠছে এবং সমাজকে পেছনে ফেলে এগিয়ে যাওয়ার প্রবণতা বাড়ছে। বর্তমানে ফ্রান্সে কয়েক হাজার নাবালক রাষ্ট্র থেকে কোনো সুবিধা পায় না। তারা কেবলমাত্র বিভিন্ন এনজিও এবং নাগরিক উদ্যোগের নানা সহায়তার উপর নির্ভরশীল।”
“অপরাধী গ্যাংগুলো শিকারির মতো উপস্থিত থাকে, কারণ তারা জানে যে, এই তরুণরা খুব সহজে প্রলোভনের শিকার হয়,” তিনি আরো যোগ করেন।
কোফ্রাড সহ বেশ কয়েকটি সংস্থা ফ্রান্সের অভিভাবকহীণ নাবালকদের পরিচালনায় অবহেলার অভিযোগের তদন্ত শুরু করতে জাতিসংঘের শিশু অধিকার সম্পর্কিত কমিটিতে আবেদন করেছে। এই অবহেলিত জনগোষ্ঠীকে সুরক্ষা দিতে ব্যর্থ হওয়ায় ফরাসি রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে “মারাত্মক মানবাধিকার লঙ্ঘন” করার অভিযোগ তুলেছেন অধিকার কর্মীরা।সূত্র : ইনফোমাইগ্রেন্টস