বিশেষ সংবাদদাতা: ফের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে কড়া চিঠি দিলেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়। কলকাতা পুরসভায় প্রশাসক মণ্ডলী বসানো নিয়ে ওই চিঠির মাধ্যমে মুখ্যমন্ত্রীর জবাব তলব করেন রাজ্যপাল। আর তাতেই ফের শোরগোল পড়ে গিয়েছে পশ্চিমবাংলার রাজনীতিতে। মুখ্যমন্ত্রী অবশ্য এই চিঠি সম্পর্কে এখনও কোনও জবাব দেননি। তবে শাসক দলের তরফে সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং সরকারের পক্ষে মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক এদিন তীব্র সমালোচনা করেন রাজ্যপালের। জ্যোতিপ্রিয় তো রাজ্যপালকে ‘মিথ্যেবাদী’ বলেও উল্লেখ করেন। তবে একজন মন্ত্রী হয়ে তিনি রাজ্যপাল সম্পর্কে এমন মন্তব্য করতে পারেন কিনা, তা নিয়ে ইতিমধ্যেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
রাজ্যে রেশন দুর্নীতি নিয়ে আগেই মুখ খুলেছিলেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়। কখনও টুইট করে, কখনও বা ভিডিও বার্তায় রাজ্য সরকার এবং এমনকী, মুখ্যমন্ত্রীর ভূমিকার সমালোচনাও করেছিলেন তিনি। এবার কলকাতা পুরসভায় প্রশাসক বসানো নিয়ে ফের উষ্মা প্রকাশ করলেন তিনি। এদিন মুখ্যমন্ত্রীকে লেখা একটি চিঠিতে তিনি লেখেন, ‘আপনার কাছে ভারতের সংবিধানের ১৬৭ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুযায়ী ৬ মে কলকাতা পুরসভার একটি বিজ্ঞপ্তি সংক্রান্ত তথ্য চেয়েছিলাম। তার আগে এই তথ্য জানতে চেয়েছিলাম রাজ্যের মুখ্যসচিবের কাছে। কিন্তু তাঁর কাছ থেকে কোনও তথ্য পাওয়া যায়নি। আপনিও আমার চিঠির কোনও জবাব দেননি। তাই আবার আপনাকে চিঠি লিখছি। আমি আশা করি, আপনি সংবিধানের নির্দেশ অনুসরণ করবেন।’
তাৎপর্যপূর্ণ হল, রাজ্যপাল এদিন মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠিটি বাংলায় লিখেছেন। ওই চিঠির মাধ্যমে তিনি কলকাতা পুরসভা নিয়ে রাজ্য সরকারের দেওয়া বিজ্ঞপ্তির কারণ জানতে চান। উল্লেখ্য, ৬ মে রাজ্য সরকার কলকাতা পুরসভায় প্রশাসক মণ্ডলী বসানোর একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। ওই বিজ্ঞপ্তিতে রাজ্য সরকার কলকাতা পুরসভার ১৪ সদস্যের প্রশাসক মণ্ডলীর নামও ঘোষণা করে দেয়। তার পরই সেই বিজ্ঞপ্তিকে নিয়ে রাজ্যে শুরু হয় বিতর্ক। তথ্যাভিজ্ঞ মহলের মতে, আইনি মারপ্যাঁচে রাজ্যপাল এবার রাজ্য সরকারকে বিপাকে ফেলার জন্য এই চিঠি লিখে থাকতে পারেন।
রাজ্যপালের চিঠির পরই বিষয়টি নিয়ে মুখ খোলে রাজ্য সরকার ও শাসক দল তৃণমূল। এদিন রাজ্যপালকে এক হাত নেন তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি এদিন তীব্র ভাষায় রাজ্যপালকে আক্রমণ করে বলেন, ‘তাঁর যদি রাজনীতি করার এতই ইচ্ছে হয়, তা হলে তাঁর উচিত ভোটে দাঁড়ানো। আমি তাঁকে চ্যালেঞ্জ করছি, আমার সংসদীয় এলাকায় যে কোনও বিধানসভা কেন্দ্রে আগামী বিধানসভা নির্বাচনে তিনি বিজেপি প্রার্থী হয়ে প্রতিদ্বিন্দ্বিতা করুন। তার পর দেখি জিততে পারেন কিনা!’ রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়ের সমালোচনা করে বলেন, ‘রাজ্যপাল ভুল তথ্য দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করতে চাইছেন।’ এদিনের চিঠির আগে রাজ্যপাল এফসিআই ও নাফেডের পাঠানো চাল ও ডালের হিসেব তুলে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারকে তোপ দেগেছিলেন। সেই জবাব এদিন দেন জ্যোতিপ্রিয়।
তিনি বলেন, ‘খাদ্য দফতর সম্পর্কে রাজ্যপাল আজগুবি ও ভুল তথ্য দিচ্ছেন। আসলে তিনি যা মনে আসছে, রাজ্য সরকারের সমালোচনা করার জন্য সে কথাই বলে যাচ্ছেন। কিন্তু রেশন ব্যবস্থা নিয়ে তিনি কিছুই জানেন না। সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে তিনি যে সব কথা বলছেন, তার কিছুই সত্য নয়। তাই খাদ্য নিয়ে তিনি যেন রাজনীতি না করেন।’ তিনি রাজ্যপালকে ‘মিথ্যেবাদী’ বলেও উল্লেখ করেন। বলেন, ‘তিনি সত্যি কথা বলতে জানেন না।’ অবশ্য তাঁর এই কথা নিয়ে রাজ্যের বিভিন্ন মহলে ইতিমধ্যেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।