মুহাম্মদ ইমাম-উল-জাননাহ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি: আফগানিস্তানে তালেবান বিদ্রোহীদের ক্ষমতা দখলের পর কাবুল বিমানবন্দরের দৃশ্যের সঙ্গে বাংলাদেশের তুলনা করে সামাজিকমাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল।
মঙ্গলবার (১৭ আগস্ট) নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এক পোস্টে তিনি বলেন, ‘সুষ্ঠু নির্বাচন হলে কাবুল বিমানবন্দর ধরনের দৃশ্য বাংলাদেশেও হতে পারে।’ এরপরেই তার বিরুদ্ধে সমালোচনার ঝড় ওঠে।
তার এই বক্তব্যের জবাবে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারি ব্যারিস্টার শাহ আলী ফরহাদ এক মন্তব্যে সময় নিউজকে বলেন , ‘আসিফ নজরুল কী শেষমেশ স্বীকার করলেন তার প্রিয় বিএনপি-জামায়াত আসলে বাংলাদেশের তালিবান?’
এদিকে, অধ্যাপক আসিফ নজরুলকে যেকোনো মূল্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিতাড়িত করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ।
বুধবার (১৮ আগস্ট) দুপুরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ‘১৭ আগস্ট সিরিজ বোমা হামলা দিবস’ উপলক্ষে আয়োজিত কর্মসূচিতে কালো পতাকা উত্তোলন ও এক মিনিট নীরবতা পালন শেষে তাঁর বিরুদ্ধে কঠোর কর্মসূচি গ্রহণ করারও হুঁশিয়ারি দেন তারা।
আসিফ নজরুলকে উদ্দেশ করে ছাত্রলীগ সভাপতি, আল নাহিয়ান খান জয় বলেন, ‘আমরা শিক্ষকদের সম্মান করি। কিন্তু আপনি (আসিফ নজরুল) বারবার সস্তা জনপ্রিয়তা পাওয়ার জন্য বাসায় বসে ষড়যন্ত্রমূলক বক্তব্য দেন। আপনার যদি পাকিস্তানে যাওয়ার ইচ্ছা থাকে, তাহলে পাসপোর্ট করে পাকিস্তান চলে যান।’
তিনি আরও বলেন, ‘দেশের উন্নয়নের বিপক্ষে অবস্থান না নিয়ে নুরু গং, শিবির গং ও জঙ্গিগোষ্ঠীর পক্ষে অবস্থান নেন, তাহলে মনে রাখবেন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ৫০ লাখ নেতাকর্মীর সংগঠন। বাংলাদেশে অবস্থান করে দেশের বিরুদ্ধে কোনো ষড়যন্ত্র বাংলাদেশ ছাত্রলীগ মেনে নেবে না। আমরা যদি ধাওয়া করি- তাহলে পাকিস্তান পালানোর জায়গা পাবেন না,’।
‘আপনারা জানেন, ২০০৫ সালের এই দিনে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে সারাদেশের প্রত্যেকটি জায়গায় একযোগে বোমা হামলা করেছিল জঙ্গিগোষ্ঠী। আজ আমরা সেই দিনের হামলার ধিক্কার জানিয়ে কালো পতাকা মিছিল করেছি। জঙ্গিরা কেউ বাংলাদেশের জনগণ নয়। তাদের বাড়ি পাকিস্তান, তারা তালেবানের বন্ধু’ বলেন ছাত্রলীগ সভাপতি।
বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক, লেখক ভট্টাচার্য তার বক্তৃতায় বলেন, ‘তিনি (আসিফ নজরুল) এর আগেও এক বক্তৃতায় বলেছেন, কেউ শিবির করলে কী হয়েছে? শিবির হলেই তাকে মারতে হবে? আমরা বলতে চাই, কোনো ধর্মীয় উগ্রবাদী গোষ্ঠী বাংলাদেশে রাজনীতি করার অধিকার রাখে না। শিবির করলেই তাকে মারতে হবে।’
ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘শিক্ষক জাতির বিবেক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের কাছে আমরা দেশপ্রেম, প্রগতিশীলতার চর্চা শিখেছি। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরাই অগণতান্ত্রিক সরকারকে হটিয়ে গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য ছাত্রলীগের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে রাজপথে থাকেন। কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক আসিফ নজরুল শিক্ষক নামের কলঙ্ক। তিনি বিভিন্ন সময় জামায়াত-শিবির এবং জঙ্গি বাহিনী নিয়ে উসকানিমূলক কথাবার্তা বলেন। তালেবানি আদর্শপুষ্ট বিএনপি-জামায়াতের দালালি করার জন্য এই শিক্ষক ফেসবুকে দুঃসাহস দেখিয়েছেন।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানিয়ে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘যেকোনো মূল্যে এই আসিফ নজরুলকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিতাড়িত করার ব্যবস্থা করুন। আপনারা যদি কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ না করেন, তাহলে আমরাই দায়িত্ব হাতে তুলে নেব। আমরা জানি কীভাবে এদের শায়েস্তা করতে হয়। এর থেকে অনেক বড় রাঘববোয়ালরা লেজ গুটিয়ে পালিয়েছেন। সুতরাং দুঃসাহস দেখানোর কোনো অবকাশ নেই। আমরাই তাদের রুখে দাঁড়াবো।’
কর্মসূচিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও ডাকসুর সাবেক এজিএস সাদ্দাম হোসেনসহ কেন্দ্রীয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকার কয়েকটি ইউনিটের নেতাকর্মীরা অংশ নেন।