নিজস্ব প্রতিবেদকঃ ঢাকার বনানী-গুলশান-বারিধারা-নিকেতন এলাকায় অত্যাধিক রিকশা ভাড়া নিয়ে চরম ভোগান্তিতে রয়েছেন যাত্রীরা। দূরত্ব অনুযায়ী রিকশাভাড়া নির্ধারণ করে দেওয়া হলেও মানে না কেউ। বনানী-গুলশানে চলাচলে অনুমোদিত বিশেষ নম্বর প্লেট দেওয়া প্রতিটি হলুদ রঙের রিকশায় সোসাইটির নির্ধারণ করে দেওয়া ভাড়ার তালিকা সাঁটিয়ে দেওয়া হয়েছিল। তবে রিকশাচালকেরা শুরু থেকেই ওই তালিকা মানছেন না। অতিরিক্ত ভাড়া দিতে রাজি না হলে তাঁরা যাত্রী পরিবহনে অপারগতা জানাচ্ছেন। এ অবস্থায় অনেকটা বাধ্য হয়েই যাত্রীরা চালকের দাবিকৃত ভাড়ায় চলাচল করছেন। এনিয়ে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন যাত্রীরা।
২০১৬ সালের জুলাইয়ে হোলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলার পর গুলশান-বনানী-বারিধারা-নিকেতন এলাকার নিরাপত্তার স্বার্থে গণপরিবহন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। পরে এসব এলাকায় সোসাইটিগুলো মিলে বিশেষ বাসসেবা চালুর পাশাপাশি হলুদ রঙের বিশেষ রিকশা নামানো হয়েছিল। উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) ও সংশ্লিষ্ট এলাকার সোসাইটিগুলোর পক্ষ থেকে বলা হয়, এসব বিশেষ রিকশা ছাড়া অন্য রিকশা এলাকায় প্রবেশ করবে না। হলুদ রঙের রিকশা চলাচলের শুরু থেকেই যাত্রীদের মধ্যে ভাড়া নিয়ে ক্ষোভ বিরাজ করছে। এসব এলাকায় রিকশাভাড়া বেড়ে যায় তিনগুণ। যা দিনে দিনে বেড়েই চলেছে। দেখার যেন কেউ নেই। সোসাইটিতে অভিযোগ করেও মিলছে না কোনো প্রতিকার।
বনানীর কড়াইল বিটিসিএল কলোনির বাসিন্দা হুমায়ূন অভিযোগ করেন, আগে কড়াইল থেকে যেখানে রিকশায় আমতলি যেতাম ৪০ টাকায়। এখন ৫ নম্বর গেট পর্যন্ত, মানে তার অর্ধেকের কম রাস্তা ৪০ টাকায় যাওয়া লাগছে।
বনানী ৪নং রোডের বাসিন্দা জামান হোসেন বলেন, এখানে তো রিকশায় উঠলে আর নামলেই সর্বনিম্ন ভাড়া ৩০ টাকা দেওয়া লাগে। অত্র এলাকায় রিকশাভাড়া বেশি হওয়ার কারণ হিসেবে তিনি স্থানীয় কাউন্সিলরকে দায়ী করেন। তার দেওয়া তথ্য মতে, বনানীতে চলাচলের জন্য হলুদ রঙের রিকশার নম্বর পেতে নাকি কাউন্সিলর অফিসে দুই-তিন লক্ষ টাকা দেওয়া লাগে। এমন অভিযোগ অবশ্য বেশ কয়েকজন রিকশা মালিকও করেছেন।
ভাড়া বেশি নেওয়ার বিষয়ে রিকশাচালক মো. জমির বলেন, ‘সোসাইটির পক্ষ থেকে রিকশার মালিকের জমা ঠিক করা ছিল ৩০০ টাকা। কিন্তু মালিক নেন ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা। এ জন্য যে ভাড়ার তালিকা দেওয়া আছে, সে অনুযায়ী গেলে আর চলা যাবে না। আমাদের কাছে কোনো টাকাই আসবে না। এছাড়া দ্রব্যমূল্যের দাম বেশি। এ জন্য বেশি ভাড়া নিতে হয়।’
অনুসন্ধানে জানা যায়, ঢাকায় নতুন একটি রিকশা কিনতে লাগে বড়জোর ২৫ হাজার টাকা। পুরোনো রিকশার দাম আরও কম, ১৫ হাজারেই পাওয়া যায়। তবে কেউ যদি রিকশা কিনে গুলশান, বনানী, নিকেতন ও বারিধারায় চালাতে চান, তাহলে ব্যয় করতে হবে তিন থেকে সাড়ে তিন লাখ টাকা। না, গুলশানের রিকশায় বিশেষ কিছু নেই। এতে যন্ত্র লাগানো নেই যে চালকের কষ্ট কম হবে। এর আসন, কাঠামো অন্য এলাকার রিকশার মতোই। তবে এসব এলাকায় রিকশার বিশেষ নিবন্ধন পেতে মালিকের খরচ করতে হয় দুই-তিন লাখ টাকা।
শুধু এই পরিমাণ টাকা দিতে পারলে গুলশান, বারিধারা, বনানী ও নিকেতনের বাসিন্দাদের সংগঠন বা সোসাইটি সিটি করপোরেশন নিবন্ধন বা লাইসেন্স (ব্লু-বুক) দেয়, এসব রিকশাকে তাদের নিজস্ব নিবন্ধনের আওতায় আনে। রিকশাগুলোকে একটি নম্বরপ্লেট দেওয়া হয়, যা রিকশার সামনে টাঙিয়ে রাখতে হয়। এ ছাড়া রিকশাচালকদের পরিচয়পত্র রয়েছে এবং তাঁদের বিশেষ কটি পরতে হয়। নিবন্ধন ছাড়া রিকশা এসব এলাকায় চলতে পারে না। নিবন্ধিত রিকশার সংখ্যাও সীমিত। সমস্যা হলো রিকশার দাম এত বেশি হওয়ার মাশুল দিতে হয় সাধারণ রিকশাচালক ও যাত্রীদের।
রিকশা নামানো এবং এর ভাড়ার বিষয়টি দেখভাল করার দায়িত্ব সোসাইটিগুলোর। কিন্তু তারা এখন অতিরিক্ত ভাড়া আদায় ঠেকাতে কোনো পদক্ষেপই নিচ্ছে না, বরং দায়িত্বে এড়ানো চেষ্টা করছে। বরং এখন বিশেষ রিকশা ছাড়া অন্য রিকশাও চলাচল করলে তারা দেখেনা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কড়াইলের একটি রিকশা গ্যারেজের মালিক জানান, পাঁচ বছর আগে পাঁচটি রিকশা বানাতে তার খরচ হয়েছিল মোট ১ লাখ টাকা। কিন্তু সেই পাঁচটি রিকশা বনানীতে চলাচলের জন্য বিশেষ নম্বর পেতে কাউন্সিলরের একজন ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিকে দিয়েছিলেন আট লাখ টাকা। এত টাকা খরচ করার কারনেই তিনি জমা বেশি নেন বলে জানান। তিনি আরও জানান, বিশেষ নম্বর প্লেটের একটি রিকশা পাঁচ লাখ টাকায়ও বিক্রি হয়। এছাড়া রিকশা প্রতি প্রতি মাসে পনেরো শো টাকা চাঁদা দেওয়া লাগে।
গুলশান-বনানীতে নিবন্ধিত রিকশা মালিকদের সমিতিও আছে। এই সমিতির সভাপতি মনিরুজ্জামান ফরাজী বলেন, নিবন্ধিত রিকশার সংখ্যা সীমিত। চাহিদাও বেশি। এসব কারণেই দাম বেশি। তিনি আরও বলেন, দাম পাঁচ লাখ হবে না, বড়জোর দুই-আড়াই লাখ টাকায় একটি রিকশা বিক্রি হয়।