টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, দ্রুত বর্ধনশীল বাজার গড়ে ওঠা বাংলাদেশ এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি লাভজনক গন্তব্যে পরিণত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ এখন বৈদেশিক সাহায্যনির্ভরতা কমিয়েছে। ফলে লাখ লাখ যুবকের কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগের প্রয়োজনীয়তাও বেড়েছে। ফলে বাংলাদেশের টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, দ্রুত বর্ধনশীল অভ্যন্তরীণ বাজার এবং ক্রমবর্ধমান কানেক্টিভিটির সঙ্গে চার বিলিয়ন মানুষের বিশাল আঞ্চলিক বাজার মার্কিন ব্যবসায়ী এবং বিনিয়োগকারীদের জন্য লাভজনক বিনিয়োগ গন্তব্য।’
মঙ্গলবার (৬ এপ্রিল) বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্র বিজনেস কাউন্সিলের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এক ভিডিও বার্তায় প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বাণিজ্য আরও সম্প্রসারণে পর্যাপ্ত নীতিগত সহায়তা গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন ‘আমরা যুক্তরাষ্ট্র থেকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ শিল্প কাঁচামাল, তুলা, সয়াবিন এবং গমসহ বিভিন্ন ভোগ্যপণ্য আমদানি করি। এসব পণ্যে যুক্তরাষ্ট্রের রফতানিকারকরা বাংলাদেশে শূন্য শুল্ক ভোগ করে। দুই দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য আরও সম্প্রসারণে পর্যাপ্ত নীতিগত সহায়তা গুরুত্বপূর্ণ।’
বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও উন্নয়নের যাত্রায় যুক্তরাষ্ট্র শক্তিশালী অংশীদার হয়ে দাঁড়িয়েছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র আমাদের রফতানির বৃহত্তম গন্তব্য, সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগের বৃহত্তম উৎস, দীর্ঘস্থায়ী উন্নয়ন অংশীদার এবং প্রযুক্তি ও প্রশিক্ষণের একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস।’
পণ্য উৎপাদনের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানিগুলোকে বাংলাদেশের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলো ব্যবহারের প্রস্তাব করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিদেশি বিনিয়োগের সুবিধার জন্য বাংলাদেশ প্রতিনিয়ত অবকাঠামো, আইনি এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর উন্নতি করে যাচ্ছে। আমাদের সরকার দ্রুত শিল্পায়নের লক্ষ্যে সারাদেশে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করছে।’
রাষ্ট্র পরিচালনায় স্বচ্ছতা এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নে প্রযুক্তির ব্যবহারে সক্ষম আধুনিক বাংলাদেশ গড়তে পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে সহায়তা করায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার তথ্য ও যোগাযোগবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়কে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ সরকারের ভিশন ২০২১-এর একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে।’
তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অগ্রগতির কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশ ৬০টিরও বেশি দেশে এক বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি আইসিটি পণ্য রফতানি করে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এর মধ্যে শীর্ষ রফতানি গন্তব্যে পরিণত হচ্ছে। বাংলাদেশের জন্য ইউএসএআইডি’র কমপ্রিনহেনসিভ প্রাইভেট সেক্টর মূল্যায়ন ২০১৯ অনুসারে, বাংলাদেশে আইসিটি শিল্প ২০২৫ সালের মধ্যে প্রায় পাঁচগুণ বৃদ্ধি পাবে এবং প্রায় পাঁচ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছবে।’
বাংলাদেশের হাইটেক পার্কগুলোতে মার্কিন কোম্পানিগুলোকে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘তথ্যপ্রযুক্তি সেক্টরে স্থানীয় ও বিদেশি বিনিয়োগের জন্য বাংলাদেশ ২৮টি হাইটেক পার্ক তৈরি করছে। এখানে উপযুক্ত বিনিয়োগের মাধ্যমে আমেরিকার প্রতিষ্ঠানগুলো সুসম্পর্ক আর বাড়াতে পারে।’
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দারিদ্র্য, শোষণ ও অর্থনৈতিক বৈষম্যমুক্ত সোনার বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন বাস্তবায়নের অসমাপ্ত কাজ করে যাচ্ছেন জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘গত এক দশকে আমরা আর্থ-সামাজিক সূচকগুলোতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করেছি। বাংলাদেশের অর্থনীতির শক্তি এখন বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত। কোভিড-১৯ মহামারির মধ্যেও বাংলাদেশের অর্থনীতি দুর্দান্ত স্থিতিশীলতা দেখিয়েছে।’
বাংলাদেশের এলডিসি থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তোরণের জন্য জাতিসংঘের চূড়ান্ত সুপারিশ লাভ করার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ এখন ২০৪১ সালের মধ্যে উচ্চআয়ের উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশ হওয়ার লক্ষ্য অর্জনের দিকে দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে।’