বিশেষ প্রতিবেদন,কলকাতা:ফের করোনা সংক্রমণ বাড়ল পশ্চিমবাংলায়। শনিবার শেষ ২৪ ঘণ্টায় রাজ্যে সংক্রমিত হয়েছেন ২ হাজার ৪০৪ জন। শুক্রবার সংক্রমিত হয়েছিলেন ২ হাজার ২১৬ জন। বৃহস্পতিবার রাজ্যে সংক্রমিত হয়েছিলেন ২ হাজার ৪৩৬ জন। করোনা–কালে বৃহস্পতিবারই রাজ্যে ঘটেছিল রেকর্ড সংক্রমণ। সেদিনের তুলনায় ৩২ জন কম সংক্রমিত হয়েছেন এদিন। এখনও পর্যন্ত রাজ্যে সংক্রমিতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছেন ৫৬ হাজার ৩৭৭ জন। স্বাস্থ্য ভবনের বুলেটিন থেকে এই তথ্য পাওয়া গিয়েছে।
মোট সংক্রমিতদের মধ্যে অধিকাংশই কলকাতার। এখনও পর্যন্ত মহানগরীতে সংক্রমিত হয়েছেন ১৭ হাজার ৫৫৩ জন। এ ছাড়া উত্তর ২৪ পরগনায় ১১ হাজার ৮৬৬ জন, হাওড়ায় ৬ হাজার ৪৬২ জন, দক্ষিণ ২৪ পরগনায় ৪ হাজার ৩০৯ জন, হুগলিতে ২ হাজার ৭৫০ জন, মালদায় ২ হাজার ১৭ জন, দার্জিলিংয়ে ১ হাজার ৬৮২ জন, পূর্ব মেদিনীপুরে ১ হাজার ২৬৮ জন, জলপাইগুড়িতে ১ হাজার ৭২ জন, পশ্চিম মেদিনীপুরে ৯৬৬ জন, দক্ষিণ দিনাজপুরে ৯৬২ জন, উত্তর দিনাজপুরে ৮৪০ জন, নদিয়ায় ৭৪৪ জন, পশ্চিম বর্ধমানে ৬২৯ জন, মুর্শিদাবাদে ৬১৮ জন, পূর্ব বর্ধমানে ৫৮৮ জন, কোচবিহারে ৫৩৯ জন, বাঁকুড়ায় ৪৮৮ জন, বীরভূমে ৪৩৭ জন, আলিপুরদুয়ারে ২৪৪ জন, পুরুলিয়ায় ১৭২ জন সংক্রমিত হয়েছেন।
তবে রাজ্যে এখন মোট সংক্রমিতদের মধ্যে ১৯ হাজার ৩৯১ জনের শরীরে করোনা ভাইরাস সক্রিয় রয়েছে। শেষ ২৪ ঘণ্টায় কলকাতায় সংক্রমিত হয়েছেন ৭২৭ জন। দার্জিলিংয়ে সংক্রমিত হয়েছেন ৬১ জন। এদিন করোনা মুক্ত হয়ে সুস্থ হওয়ার সংখ্যা ২ হাজার ২১৫ জন। ফলে রাজ্যে মোট সুস্থ হয়ে ওঠার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩৫ হাজার ৬৫৪ জন। সুস্থতার হার এখন ৬৩.২৪ শতাংশ। এদিন সুস্থ হয়ে চিকিৎসক থেকে স্বাস্থ্যকর্মী, সকলের সমীহ আদায় করে নিয়েছেন ৯৩ বছরের বিমল রায়। কলকাতার উল্টোডাঙার বাসিন্দা বিমলবাবু বার্ধক্যজনিক অসুখের চিকিৎসা করানোর সময় করোনায় সংক্রমিত হন। ভর্তি ছিলেন কলকাতার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। এদিন সুস্থ হয়ে হাসপাতাল থেকে ছাড়া পান। শেষ ২৪ ঘণ্টায় ৪২ জন করোনা সংক্রমিতের মৃত্যু হয়েছে। ফলে রাজ্যে মোট করোনা সংক্রমিতের মৃত্যু সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৩৩২ জন।
মৃতদের মধ্যে কলকাতার রয়েছেন ৬৬৯ জন, এ ছাড়া উত্তর ২৪ পরগনায় ২৬৯ জন, হাওড়ায় ১৬৯ জন, দক্ষিণ ২৪ পরগনার ৬৯ জন, হুগলির ৫১ জন, দার্জিলিংয়ের ১৫ জন, পশ্চিম মেদিনীপুরের ১৩ জন, পূর্ব মেদিনীপুরের রয়েছেন ১১ জন। রাজ্যে করোনা সংক্রমণ বেড়ে চলায় সরকার সপ্তাহে দু’দিন পূর্ণ লকডাউনের কথা ঘোষণা করেছিল গত সোমবার। বৃহস্পতিবার ছিল প্রথম লকডাউনের দিন। পুলিশ ও প্রশাসনের সক্রিয়তায় রাজ্যে সেদিন লকডাউন ছিল সর্বাত্মক এবং সফল। শনিবার ছিল দ্বিতীয় লকডাউন। এদিনও কয়েকটি বিক্ষিপ্ত ঘটনা ছাড়া পুলিশ ও প্রশাসনের তৎপরতায় লকডাউন ছিল পুরোপুরি সফল। আগামী সপ্তাহে প্রথম লকডাউনটি হবে বুধবার। দ্বিতীয় লকডাউন কবে হবে, তা জানানো হবে আগামী সোমবার।
এদিকে, এই লকডাউন করে রাজ্যের কোনও লাভ হবে না বলে মন্তব্য করেছেন কংগ্রেসের সংসদীয় দলনেতা অধীর চৌধুরি। তিনি বলেছেন, ‘বাংলায় শুধু লকডাউনই হচ্ছে। কিন্তু করোনা সংক্রমণ রোখার জন্য বাকি কোনও ব্যবস্থাই নেওয়া হচ্ছে না। তাই এই লকডাউনে কোনও লাভই হবে না রাজ্যের।’ তিনি দাবি করেছেন, করোনার মোকাবিলায় যাঁরা সামনে দাঁড়িয়ে লড়াই করছেন, চিকিৎসক,স্বাস্থ্যকর্মীদের কিছুদিন ছুটি দেওয়া হোক। মাসের পর মাস কাজ করে তাঁরা অবসাদে ভুগতে পারেন। তিনি মনে করেন, অবসরপ্রাপ্ত চিকিৎসক,স্বাস্থ্যকর্মী এবং চিকিৎসা বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করেছেন, এমন ব্যক্তিদের এখন করোনা মোকাবিলার কাজে ব্যবহার করা যেতে পারে। কিন্তু রাজ্যে তেমন কিছু ভাবছে বলে কোনও ইঙ্গিত তিনি পাননি বলেও জানিয়েছেন।