ওয়েব ডেস্ক: ভারতের ফারাক্কা বাঁধের সব গেট খুলে দেওয়ার খবরে বন্যা আতঙ্কে আছেন রাজশাহীর চর খিদিরপুরের বাসিন্দারা। কেউ কেউ নদীর চর ছেড়ে অন্য স্থানে চলে যাচ্ছেন। এছাড়াও অনেকে আগেই গবাদিপশু চর এলাকা ও বাথানবাড়ি থেকে লোকালয়ে নিয়ে এসেছেন।
রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) বলছে, গত ১২ ঘণ্টায় রাজশাহীর পদ্মায় পানি বেড়েছে ৩ সেন্টিমিটার। সোমবার (২৬ আগস্ট) সন্ধ্যা ৬টায় রাজশাহীর দরগাপাড়া পয়েন্টে পানির উচ্চতা ছিল ১৬ দশমিক ৩০ সেন্টিমিটার। এছাড়া চলতি মৌসুমের ১৭ আগস্ট সর্বোচ্চ ১৬ দশমিক ৫৪ সেন্টিমিটার পানির উচ্চতা উঠেছিল।
এরে আগে রোববার (২৫ আগস্ট) সন্ধ্যা ৬টায় পদ্মা নদীর রাজশাহী সীমান্তে পানির উচ্চতা ছিল ১৬ দশমিক ২৭ সেন্টিমিটার। শনিবার (২৪ আগস্ট) সন্ধ্যা ৬টায় ছিল ১৬ দশমিক ২৪ সেন্টিমিটার। এ সময় নদীতে বিপৎসীমার ১ দশমিক ৭৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়। রাজশাহীতে পদ্মা নদীর বিপৎসীমা ১৮ দশমিক ০৫ সেন্টিমিটার (এসওবি মাপে)।
নদীপাড়ের বাসিন্দারা বলছেন, ভারতের বন্যার কারণে দেশটি ফারাক্কার গেট খুলে দিয়েছে। এ জন্য রাজশাহীতে পদ্মায় পানি বাড়ছে। পদ্মা নদীর চরখিদিরপুর এলাকায় বন্যার পানি ঢুকে গেছে। জেলার পবা, বাঘা ও গোদাগাড়ী অংশে নদীতে ভাঙনও দেখা দিয়েছে।
রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, জেলায় গত ২৪ ঘণ্টায় পানি বেড়েছে ৩ সেন্টিমিটার। এছাড়া সোমবার সকাল ৬টায় ছিল ১৬ দশমিক ২৭ সেন্টিমিটার। আর দুপুর ১২টায় ছিল ১৬ দশমিক ২৯ সেন্টিমিটার। এছাড়া গত শুক্রবার (২৩ আগস্ট) সন্ধ্যায় রাজশাহীর দরগাপাড়া পয়েন্টে পানির উচ্চতা একই ছিল (১৬ দশমিক ২৪ সেন্টিমিটার)। এছাড়া বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) ছিল ১৬ দশমিক ১৮ সেন্টিমিটার, বুধবার (২১ আগস্ট) ১৬ দশমিক ২৭ সেন্টিমিটার এবং গত ২০ আগস্ট (মঙ্গলবার) ছিল ১৬ দশমিক ৩৭ সেন্টিমিটার।
পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, রাজশাহীতে পদ্মার পানি আগস্ট মাস থেকে বাড়তে শুরু করেছে। পদ্মার পানি বৃদ্ধির ফলে অনেকে গবাদিপশু চর থেকে লোকালয়ে (শহর) নিয়ে এসেছেন। শুধু গবাদি পশু নয়, চরের বাথানবাড়ির বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ জিনিসপত্র নৌকায় করে লোকালয়ে নিয়ে আসছেন অনেকে।
চরের বাসিন্দা হুমায়ুন বলেন, পানি বৃদ্ধির ফলে চরবাসীর মধ্যে আতঙ্ক বাড়ছে। অনেকে গবাদিপশুগুলো লোকালয়ে নিয়ে এসেছেন। আর দেড় থেকে দুই ফুট পানি পদ্মায় বৃদ্ধি পেলে পুরো চর খিদিরপুর ডুবে যাবে। তাই আমাদের মধ্যে এক ধরনের আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
নদীর বাঁধের চর সাতবাড়িয়া এলাকার বাসিন্দা শারিউল ইসলাম বলেন, যদি ফারাক্কার সব গেট খুলে দেয় তাহলে আমাদের ক্ষতি হবে। পানির কারণে ঘরবাড়ি সব ভেঙে যেতে পারে। বর্ষা মৌসুমে স্বাভাবিক সময়ে পদ্মার পানি বাঁধের পাঁচটা ব্লক নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়। এখনও সেই ব্লক পর্যন্ত পানি ওঠেনি।
এই এলাকার আরেক বাসিন্দা মো. রজব আলী বলেন, পানি বাড়ার খবরে তারা (বাঁধের চর সাতবাড়িয়ার বাসিন্দারা) আতঙ্কিত। তাদের ঘরবাড়ির ক্ষতি হবে। চর খিদিরপুরে এখনও পানি ঢোকেনি। তবে যে খবর শুনছি, তারাও রাতের মধ্যে লোকালয়ে চলে আসবেন।
রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ডের গেজ রিডার এনামুল হক বলেন, ফারাক্কার বাঁধের গেট খুলে দেওয়ার বিষয়টি আমরাও শুনেছি। এই পদ্মায় এখনও সেই পানি আসেনি বলে ধারণা করছি। তবে স্বাভাবিকভাবে পদ্মার পানি বেড়েছে। গত ১২ ঘণ্টায় রাজশাহীর দরগাপাড়া পয়েন্টে পানির উচ্চতা বেড়েছে ৩ সেন্টিমিটার। সর্বশেষ সন্ধ্যা ৬টায় পানির উচ্চতা ছিল ১৬ দশমিক ৩০ সেন্টিমটার।
রাজশাহীর পবা উপজেলার ৮ নম্বর হরিয়ান ইউনিয়নের (চর খিদিপুর) মেম্বার সহিদুল ইসলাম বলেন, মধ্যচরে পদ্মার ভাঙন দেখা দিয়েছে। খিদিরপুর চরে বন্যার পানি ঢুকেছে। চরবাসীর মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। কেউ কেউ লোকালয়ে চলে আসছেন। গবাদিপশুসহ অন্য মালামালের জন্য অনেকেই আসতে পারছেন না।