স্পোর্টস ডেস্ক: বাংলাদেশের ঘরোয়া ফুটবলে বিদেশিদের দাপট চলে আসছে যুগ যুগ ধরে। এক সময়ের জমজমাট ঢাকা লিগ এবং ২০০৭ সাল থেকে হয়ে আসা পেশাদার ফুটবল বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে বেশিরভাগ ম্যাচের ভাগ্য নির্ধারণ করে আসছেন বিদেশিরা।
প্রতি মৌসুম শুরুর আগে বিদেশি কোটা কমানো-বাড়ানোর পক্ষে-বিপক্ষে অনেক আলোচনা হয়ে থাকে। যেমন হয়েছিল এবারও। তারপরও এবার একটি ক্লাবকে সর্বাধিক ৬ বিদেশি রেজিস্ট্রেশনের নিয়ম করেছে বাফুফে। যা গত মৌসুমের চেয়ে একজন বেশি। তবে মাঠে খেলতে পারবেন আগের মতো ৪ জনই।
১৮ অক্টোবর শেষ হয়েছে খেলোয়াড় নিবন্ধনের সময়। প্রিমিয়ার লিগে ১১ ক্লাব ছিল। একটি নাম প্রত্যাহার করে নেওয়ায় দলবদলে অংশ নিয়েছে ১০ টি।
প্রতি ক্লাব ৬ জন বিদেশি রেজিস্ট্রেশন করালে সংখ্যা হতো ৬০। কিন্তু এবার বিদেশি নিবন্ধন হয়েছে ৪৯ জন। ১০ ক্লাবের মধ্যে মাত্র চারটি ক্লাব বিদেশি কোটা পূরণ করেছে। বেশিরভাগ ক্লাবই এবার বিদেশি কোট পূরণ করেনি। ৬ বিদেশি নিবন্ধন করিয়ে কোটা পূরণ করেছে কেবল বসুন্ধরা কিংস, আবাহনী লিমিটেড, মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব লিমিটেড ও শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্র।
একজন বিদেশি কম রেজিস্ট্রেশন করিয়েছে বাংলাদেশ পুলিশ এফসি ও রহমতগঞ্জ এমএফএস। চার বিদেশি রেজিস্ট্রেশন করিয়েছে ফর্টিস এফসি, শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব ও প্রিমিয়ারে ফিরে আসা ব্রাদার্স ইউনিয়ন। সবচেয়ে কম মাত্র ৩ জন বিদেশি রেজিস্ট্রেশন করিয়েছে চট্টগ্রাম আবাহনী।
গত মৌসুমে বিদেশি রেজিস্ট্রেশনের কোটা ছিল ৫ জন। দল ছিল ১১ টি। প্রথম পর্বে ৫২ জন বিদেশি রেজিস্ট্রেশন হয়েছিল। কম ছিল মাত্র ৩ জন। এবার কম ১১ জন। অর্থাৎ গত আসরের চেয়ে এবার বিদেশি নিবন্ধনের হার কমে গেছে। এবার যে ৪৯ জন বিদেশি নিবন্ধন করেছে ১০ ক্লাব তার মধ্যে নতুন ২৯ জন। আগে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে খেলা ২০ বিদেশি এবার নাম লিখিয়েছেন বিভিন্ন ক্লাবে।
এক সময় ছিল বিদেশি ফুটবলার মানেই আফ্রিকানদের ছড়াছড়ি। বিশেষ করে নাইজেরিয়ান ফুটবলাররারই বেশি রাজত্ব করেছেন বাংলাদেশের ঘরোয়া ফুটবলে। সেই নাইজেরিয়ানদের সংখ্যা কমছে দিনদিন।
এবার নিবন্ধন হওয়া ৪৯ ফুটবলারের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ১১ জন উজবেকিস্তানের। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৮ জন নাইজেরিয়ান। এরপর ব্রাজিলের ৭ জন, গাম্বিয়ার ৪ জন, কিরগিজস্তানের ৩ জন, আইভরিকোস্ট, কলোম্বিয়া, ঘানা ও জাপানের ২ জন করে এবং একজন করে ফুটবলার ইরান, ভিনসেন্ট অ্যান্ড গ্রেনাডিনেস, ভেনেজুয়েলা, মালি, হাইতি, বুরুন্ডি, ইউক্রেন ও মিশরের।
বিদেশি কোটা পূরণ না করা নিয়ে ফর্টিস এফসির ম্যানেজার রাশেদুল ইসলাম বলেছেন, ‘মাঠে চারজন খেলতে পারবেন। তাই আমরা চারজনই রেজিস্ট্রেশন করিয়েছি। আমরা মনে করেছি, এর বেশি বিদেশি আমাদের দরকার নেই। আমরা স্থানীয় খেলোয়াড়দেরই প্রধান্য দিয়েছি।’
বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে ফিরে আসা ব্রাদার্স ইউনিয়নের ম্যানেজার আমের খান বলেছেন, ‘আসলে আমাদের বাজেট কম। তাই আমরা দুই জন বিদেশি কম রেজিস্ট্রেশন করিয়েছি। আমাদের অনেক হিসেব-নিকেশ করে দল তৈরি করতে হয়েছে। আমাদের লক্ষ্যতো রেলিগেশন এড়ানো। সামনে জাতীয় দলের অনেক খেলা আছে। ঘরোয়া ফুটবলে ঘনঘন বিরতি হবে। মৌসুমও হবে লম্বা। দীর্ঘদিন ক্যাম্প চালাতে অনেক খরচ দরকার। বিদেশি কম রেজিস্ট্রেশন করিয়ে আমরা ক্যাম্প চালানোর জন্য সে টাকা ব্যবহার করবো।’
আফ্রিকান খেলোয়াড় কমে আসার কারণ ব্যাখ্যা করে সাবেক ফুটবলার ও ফর্টিস এফসির ম্যানেজার রাশেদুল ইসলাম বলেন,‘আগে আফ্রিকানদের পাওয়া সহজ ছিল। সহজলভ্য, বেতনও কম। আগে সেভাবে কোয়ালিটিও মেইনটেইন করা হতে না। এখন যোগাযোগ মাধ্যম অনেকে বেড়েছে। অনেক এজেন্ট আছে। তাই ক্লাবের হাতে অনেক অপশন তৈরি হয়েছে। চাইলেই ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা থেকে খেলোয়াড় আনার চেষ্টা করতে পারে। এক কথায় কোয়ালিটি যাচাইয়ের সুযোগ এখন বেশি। তাই কোনো নির্দিষ্ট অঞ্চলের ওপর নির্ভরশীল থাকে না ক্লাবগুলো। খেলোয়াড় সংগ্রহের জন্য সব দেশের সঙ্গেই যোগাযোগ করতে পারে।’
এবার সবচেয়ে বেশি খেলোয়াড় ১১ জন উজবেকিস্তানের। এ প্রসঙ্গে রাশেদুল ইসলাম বলেন, ‘ফুটবলে এশিয়ার অন্যতম শীর্ষ দেশ উজবেকিস্তান। এই দেশের ফুটবলারদের পারিশ্রমিক তুলনামূলক কম। কিন্তু কোয়ালিটি ভালো। এক কথায় আমি বলবো ‘হ্যান্ডসাম স্যালারি, স্ট্যান্ডার্ড পারফরম্যান্স।’ যে কারণে এবার ক্লাবগুলো উজবেকিস্তানের খেলোয়াড়দের দিকে বেশি নজর দিয়েছে।’
এক নজরে এবারের বিদেশি
১১ জন : উজবেকিস্তান, ৮ জন : নাইজেরিয়া, ৭ জন : ব্রাজিল, ৪ জন : গাম্বিয়া, ৩ জন : কিরগিজস্তান, ২ জন : আইভরিকোস্ট, কলোম্বিয়া, জাপান, ঘানা, ১ জন : ইরান, ভিনসেন্ট অ্যান্ড গ্রেনাডিনেস, ভেনেজুয়েলা, মালি, হাইতি, বুরুন্ডি, ইউক্রেন মিশর।