সোমবার, ০৩ নভেম্বর ২০২৫, ১১:২৩ অপরাহ্ন
ওয়েব ডেস্ক: অসময়ের বৃষ্টিতে জয়পুরহাট জেলাজুড়ে আমন ধান, আগাম আলু, পেঁয়াজ ও শাক-সবজির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। তিন দিন ধরে থেমে থেমে, আবার মুষুলধারে হওয়া বৃষ্টিতে মাঠের ধানগাছ নুয়ে পড়েছে। এছাড়া নষ্ট হয়ে গেছে আগাম আলু ও পেঁয়াজের ক্ষেত। এতে কৃষকেরা চরম বিপাকে পড়েছেন।
কৃষকেরা বলছেন, মাঠে আমন ধান পাকতে শুরু করেছে, অনেক কৃষক ধান কাটা শুরু করেছেন। আবার অনেক কৃষক ধান কেটে জমিতে আলু রোপণ শুরু করেছেন। বিভিন্ন সবজিও চাষ করছেন কৃষকেরা। কিন্তু অসময়ের বৃষ্টিতে সেই ফসলও বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। কয়েক দিনের মধ্যে আবহাওয়া অনুকূলে না এলে আমন ধান ও আগাম আলু দুই ফসলেরই বড় ধরনের লোকসানের শঙ্কা তৈরি হবে। এতে কৃষি নির্ভর এ জেলার অর্থনীতিতেও প্রভাব পড়তে পারে বলে আশঙ্কা তাদের।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর উপ-পরিচালকের কার্যালয় ঝড় ও বৃষ্টিতে ফসলি জমির ক্ষয়ক্ষতির একটি প্রতিবেদন তৈরি করেছে। ওই প্রতিবেদনে দেখা যায়, জেলাজুড়ে ৩৩৭ হেক্টর জমির রোপা আমন ধান, ২৭ হেক্টর জমির শাক সবজি, ১৩ হেক্টর পেঁয়াজ (কন্দ), সাড়ে ৭ হেক্টর জমির মরিচ ও ৮৫ হেক্টর জমির আগাম আলুসহ মোট ৪৬৯ দশমিক ৫ হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে সদর উপজেলায় রোপা আমন ধান, শাক সবজি, পেঁয়াজ ও মরিচের বেশি ক্ষতি হয়েছে, আর আগাম আলুর বেশি ক্ষতি হয়েছে আক্কেলপুর উপজেলায়।
জেলার বিভিন্ন ফসলি মাঠ ঘুরে দেখা গেছে, অসময়ের বৃষ্টিতে বেশিরভাগ ফসলি মাঠের পাকা-আধা পাকা ধান গাছ হেলে পড়েছে। কৃষকেরা কোথাও কোথাও হেলে পড়া আধাপাকা ধানগাছ কেটে নিয়ে যাচ্ছেন। আগাম আলু ও পেঁয়াজের খেতে পানি জমেছে। কৃষকেরা বাধ্য হয়ে রোপণ করা সেই আলুর বীজ ও পেঁয়াজ বীজ তুলে নিচ্ছেন।
সদরের ধারকি গ্রামের কৃষক আব্দুল বাকি ৪৫ হাজার টাকা খরচ করে ২ বিঘা জমিতে স্টিক ও ক্যারেজ জাতের আলু বীজ রোপণ করেন। তিনি বলেন, অসময়ে বৃষ্টি হওয়ায় জমিতে পানি জমেছে। এতে আলু বীজ পচে নষ্ট হয়ে যাবে। এজন্য আলুর বীজগুলো আবার জমি থেকে তোলা হচ্ছে।
একই এলাকার কৃষক মশিউর রহমান বলেন, দুই বিঘা জমিতে আমন ধান আবাদ করেছি। ধান পেকেছে। কয়েক দিনের মধ্যে ধান কাটব। এজন্য শ্রমিক ঠিক করেছি। কিন্তু হঠাৎ বৃষ্টি হওয়ায় জমিতে ধান গাছ হেলে পড়েছে। জমিতে পানি জমে আছে। দ্রুত ধান কাটতে না পারলে পানিতে ধান নষ্ট হবে।
ক্ষেতলাল উপজেলার মিনিগাড়ী গ্রামের কৃষক হাফিজার বলেন, দেড় বিঘা জমিতে আগাম আলু রোপণ করেছিলাম। এখন সব জমি পানিতে তলিয়ে গেছে। যদি রোদ না ওঠে, একটা গাছও আর বাঁচবে না। আগের লোকসান পুষিয়ে নিতে এবার আলু দিয়েছিলাম। এখন আবার সব শেষ।
আক্কেলপুরের আওয়ালগাড়ী এলাকার কৃষক সাইফুল ইসলাম বলেন, কয়েকদিন ধরে আগাম জাতের আলু রোপণ করলাম। কিন্তু হঠাৎ বৃষ্টিতে সেগুলো ঢুবে গেছে। বছরের এই সময়ে এমন বৃষ্টি আগে কখনো দেখিনি। এছাড়া কিছু রসুন ও পেঁয়াজ বীজ রোপণ করেছি। সেগুলোও পঁচে যাবে।
জয়পুরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক (ডিডি) এ.কে.এম সাদিকুল ইসলাম বলেন, গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুক্রবার হিসেবে প্রায় ২০ মিলিমিটার, শনিবারে ৬৪.৪ মিলিমিটার এবং রোববারে ৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এই সময়ের ঝড় ও বৃষ্টিতে জেলায় রোপা আমন ধান, আগাম আলু, পেঁয়াজ, মরিচ ও শাক সবজির ক্ষতি হয়েছে। পরবর্তী করণীয় সম্পর্কে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।