শনিবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৫, ০৯:০৬ অপরাহ্ন
ওয়েব ডেস্ক: বেড়েই চলেছে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে লাগা আগুন। কালো ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে গেছে পুরো আকাশ। আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসের ৩৬টি ইউনিটের পাশাপাশি কাজ করছে নৌ ও বিমানবাহিনী।
শনিবার (১৮ অক্টোবর) দুপুর সোয়া ২টার দিকে এ অগ্নিকাণ্ড ঘটে। প্রায় দুই ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও আগুন নিয়ন্ত্রণে না আসায় বিমানবন্দরে ফ্লাইট ওঠানামা সাময়িক স্থগিত ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। এমনটিই জানিয়েছেন বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালকের মুখপাত্র মো. মাসুদুল হাসান মাসুদ।
ফায়ার সার্ভিসের সদর দপ্তরের মিডিয়া সেলের কর্মকর্তা তাহলা বিন জসিম বলেন, বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজের আগুন নিয়ন্ত্রণে এরই মধ্যে কাজ শুরু করেছে আমাদের ৩৬টি ইউনিট। প্রাথমিকভাবে আগুন লাগার কারণ ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানা যায়নি।
জানা গেছে, আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করার সময় ফায়ার সার্ভিসের সদস্যসহ বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
সূত্র জানায়, প্রথমে কার্গো ভিলেজের ভেতরে আগুন দেখা গেলেও মুহূর্তেই চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। আগুন নিয়ন্ত্রণে শুরুতে পাঁচটি ইউনিট কাজ শুরু করলেও পর্যায়ক্রমে যোগ দেয় আরও বেশ কয়েকটি ইউনিট। সবমিলিয়ে ঘটনাস্থলে এখন কাজ করছে ফায়ার সার্ভিসের ৩৬টি ইউনিট। পাশাপাশি যোগ দিয়েছেন নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী, সিভিল অ্যাভিয়েশন, দুই প্লাটুন বিজিবিসহ পুলিশ-আনসারের সদস্যরা। তবে এখনো নিয়ন্ত্রণে আসেনি। আগুনের কুণ্ডলী কেবলই বাড়ছে বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা।
ফ্লাইট চলাচল সাময়িক স্থগিত
নিরাপত্তাজনিত কারণে ঢাকাগামী কয়েকটি ফ্লাইট বিকল্প রুটে পাঠানো হয়েছে। একাধিক ফ্লাইট অবতরণ করেছে চট্টগ্রাম ও কলকাতায়। এ ছাড়া ঢাকা থেকে ছেড়ে যাওয়ার অপেক্ষায় থাকা কয়েকটি আন্তর্জাতিক ফ্লাইট আটকে রয়েছে ট্যাক্সিওয়েতে। আগুনের তীব্রতা বেড়ে যাওয়ায় সম্ভাব্য ক্ষতি এড়াতে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে হ্যাঙ্গারে থাকা সব বিমান।
বিমানবন্দর সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা থেকে কুয়ালালামপুরগামী বাটিক এয়ারের ওডি-১৬৩ ফ্লাইট এবং ঢাকা থেকে মুম্বাইগামী ইন্ডিগোর ৬ই-১১১৬ ফ্লাইট ট্যাক্সিওয়েতে অপেক্ষা করছে। ব্যাংকক থেকে ঢাকায় আসা ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের ফ্লাইটটি অবতরণ করেছে চট্টগ্রামে। দিল্লি থেকে ঢাকা আসা ইন্ডিগোর ফ্লাইট অবতরণ করেছে কলকাতায়। এয়ার এরাবিয়ার শারজাহ থেকে ঢাকা আসা ফ্লাইট চট্টগ্রামে অবতরণ করেছে। হংকং থেকে ঢাকা আসা ক্যাথে প্যাসিফিক এয়ারলাইন্সের বিমানটি অবতরণ না করতে পেরে চক্কর দিচ্ছে আকাশে। আগুনের পরিস্থিতি ও নিয়ন্ত্রণের অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ করে পরবর্তীতে উড্ডয়নের সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
এ ছাড়া বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের সৈয়দপুর থেকে ঢাকাগামী ফ্লাইটটি ঢাকায় না এসে চট্টগ্রামে অবতরণ করেছে। একইভাবে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের চট্টগ্রাম থেকে ঢাকাগামী একটি ফ্লাইট উড্ডয়নের পর পুনরায় ফিরে গেছে চট্টগ্রামে।
ভয়াবহ এ অগ্নিকাণ্ডের বিষয়ে একটি অডিও বার্তা দিয়েছেন বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন এসএম রাগীব সামাদ। তিনি বলেন, ‘আসসালামু আলাইকুম। শাহজালাল বিমানবন্দরে ঘটে যাওয়া অগ্নি দুর্ঘটনা নিবারণের জন্য আমাদের শাহজালাল বিমানবন্দরের ফায়ার সার্ভিসের লোক কাজ করছে। বিমানবাহিনী থেকে ফায়ার ইউনিট এসে তারা কাজ করছে। প্যারালালি ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের লোকজন এসেও কাজ করছে। আমি সাংবাদিক ভাইদেরকে বলব, আমরা এখন একটা ইমার্জেন্সি হ্যান্ডেল করছি। এই সময় আপনারা ফোন দিয়ে আমাদেরকে একটু মানে অন্যদিকে ডাইভার্ট করবেন না প্লিজ। আমাদেরকে সহযোগিতা করুন। একটা সমস্যা হয়েছে। আমরা সকলে মিলে এই সমস্যা উত্তরণের চেষ্টা করছি। আপনারা তথ্য পাবেন। সময় অনুযায়ী তথ্য পাবেন। আমাদেরকে এখন এই ইমার্জেন্সিটাকে নিরাপদে হ্যান্ডেল করার জন্য সুযোগ দিন প্লিজ। আসসালামু আলাইকুম।’
বিমানবন্দরের কার্যক্রম যেন ব্যাহত না হয়, সেজন্য বিকল্প ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিমানবন্দরের এক কর্মকর্তা। তিনি বলেন, মূলত কার্গো ভিলেজ এলাকায় আগুন লেগেছে। যাত্রী টার্মিনালে এর প্রভাব পড়েনি। তবে যাত্রীদের নিরাপত্তার কথা ভেবে বিমান চলাচল সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়েছে। আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে এলে ফ্লাইট চলাচল স্বাভাবিক করা হবে।