সম্পাদকীয়
ঈদ উল ফিতর হলো মুসলমানদের প্রধান একটি ধর্মীয় উৎসব । প্রতিটি স্বচ্ছল মানুষকে এ ঈদের আগে ফিতরা আদায় করতে হয় বলেই এর নামকরন করা হয়েছে ঈদ উল ফিতর। এটি আমাদের মহানবী (সা: ) এর একটি সুন্নত । ফিতরা র উদ্দেশ্য হলো এদিন অর্থাৎ ঈদের দিন গরীব অসহায় প্রতিটি মানুষের ঘরে খাবার যেন থাকে ।অর্থাৎ এদিন যেন কেও অনাহারে না কাটায়।ফিতরা আদায় , সকালে গোসল করা খুশবু বা আতর লাগানোর মতই এ ঈদের আরেকটি সুন্নত হলো মিষ্টি বা মিষ্টি জাতীয় কিছু খেয়ে তারপর নামাযে যাওয়া । আর এই সুন্নত কে প্রাধান্য দিয়ে ডাচ ভাষায় এর নামকরন করা হয় ছইকার ফেইস্ট ( suiker feest ) ।
ডাচ শব্দ ছইকার ( suiker ) মানে হলো চিনি আর ফেইস্ট মানে হলো উৎসব । সে হিসেবে ছইকার ফেইস্টের আক্ষরিক অর্থ দাড়ায় চিনির উৎসব । আর আভিধানিক অর্থ মিষ্টি র উৎসব অর্থাৎ যে অনুষ্টানে মিষ্টি বা মিষ্টি জাতীয় খাবার অবশ্যই খেতে হয় । আধুনিকতার ছোয়ায় ডায়েটিং এর কবলে পরে কেও যদি ঈদের দিন মিষ্টি খাওয়ার চিন্তা বাদ দিতে চান তবে তারা একবার ছইকার ফেইস্ট শব্দটা র কথা মনে করবেন তাহলে তা আর বাদ পরবে না মিষ্টি খাওয়া কারন অনুষ্টান টাই যে মিষ্টি র ।
এবার আসি অন্য আরেকটি প্রসংগে । ঈদ এর দিন আমরা সাধারণত কি করি …. আত্নীয় স্বজন বা বন্ধু বান্ধব বা পাড়া প্রতিবেশী কারো না কারো বাসায় দাওয়াত খাই বা ওদের কে দাওয়াত দেই । এটা ঈদের কোন সুন্নত না হলেও এমন একটু রেওয়াজ যে এটি ছারা আমরা ঈদ কে কল্পনা ই করতে পারি না । যার বাসায় মেহমান নেই তার ঈদ যেন বড়ই পানসে ।
মুসলমানদের ঈদের দিনের এই মেহমানদারি টা একসময় ডাচ দের কাছে খুব ভালো লেগে যায় । কিন্তু কর্মব্যস্ত ডাচদের পক্ষে আমাদের মত আট ঘাট বেঁধে মেহমানদারি করা প্রায় অসম্ভব । তাই তারা খুঁজে বের করলো similar একটা কিছু ।আর এর নাম দিল পটচা বিওর( potje buur)
ডাচ শব্দ পটচা মানে হলো ছোট হাড়ি বা পাত্র যেটি এসেছে পট( pot) থেকে । এখানে আরেকটা জিনিস বলে রাখি ডাচে সকল ছোট জিনিসের সাথে চা লাগানো হয় । যেমন বেবি থেকে বেবিচা …।আর বিওর ( Buur)মানে হলো প্রতিবেশি । আক্ষরিক অর্থ টা একটু হাস্যকর যা হল হাড়ি বা পট প্রতিবেশি। এবার একটু খোলাশা করে বলি । ডাচ বাসীরা আমাদের ঈদ ওল ফিতরের অতিথি আপ্যায়নে অনুপ্রানিত হয়ে আমাদের সাথে মিল রেখে এ অনুষ্ঠান প্রথা চালু করে । এদিন রান্না করে হাড়িসহ খাবার প্রতিবেশি কে দেওয়া হয়। উল্লেখ্য এদিন কেও আগে থেকে জানে না যে তার বাসায় কে বা কি খাবার নিয়ে আসবে । এক ধরনের সারপ্রাইজ বলা যায়। এক্ষেত্রে দুটো নিয়ম মানা হয় । সবচেয়ে নিকটতম প্রতিবেশি প্রাধান্য পায় আর খাবার শেষে খালি হাড়ি বা পট ফেরত দিতে হয়।
পটচা বিওর ডাচদের একটি ট্রেডিশনাল অনুষ্টান হলেও এখন বেশির ভাগ মানুষ ই আর এটা করে না । তবে কিছু কিছু বয়স্ক মানুষ তাদের অবসর সময় কাটানো বা ট্রেডিশান ধরে রাখতে পটচা বিওর ( potje buur) উদযাপন করে থাকেন ।
ফারহানা ববি মুক্তা,
সম্পাদীকা দৈনিক প্রত্যয়,বেলজিয়াম।