প্রত্যয় নিউজ ডেস্ক: করোনাভাইরাস মোকাবিলায় গোটা বিশ্বে যেভাবে জরুরি পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষেত্রেও একই ধরনের পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন বলে মনে করছে আন্তর্জাতিক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব রেড ক্রস অ্যান্ড রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটিজ (আইএফআরসি)। সংস্থাটি বলেছে, বিশ্বব্যাপী উষ্ণায়ন করোনার চেয়ে মারাত্মক হুমকির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে।
বর্তমান মহামারির সময়েও বিশ্বে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ধ্বংসযজ্ঞ থামছে না বলেও উল্লেখ করা হয়েছে রেড ক্রসের ওই প্রতিবেদনে।
১৯৬০-এর দশক থেকে বৈশ্বিক বিপর্যয় নিয়ে করা এক প্রতিবেদনে জেনেভাভিত্তিক সংগঠনটি উল্লেখ করেছে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা মার্চে করোনাভাইরাসকে মহামারি ঘোষণার পর থেকে বিশ্বে শতাধিক প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঘটনা ঘটেছে, যার বেশিরভাগ জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কিত। এতে ৫০ কোটিরও বেশি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
আইএফআরসি মহাসচিব জাগান শাপাগেইন একটি ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘অবশ্যই, কোভিড-১৯ রয়েছে। এটা আমাদের পরিবার, বন্ধুবান্ধব ও স্বজনদের ওপর প্রভাব ফেলছে।’
মহামারি সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘বর্তমান বিশ্ব এক মারাত্মক সঙ্কট মোকাবিলা করছে। এতে ইতোমধ্যে ১৩ লাখের বেশি মানুষের প্রাণ গেছে।’
রেডক্রস আশঙ্কা করছে, জলবায়ু পরিবর্তন মানবজীবন ও পৃথিবীর ওপর আরও কঠিন মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব রেখে যাবে।
খুব শিগগিরই বিশ্ব হয়তো করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন পেয়ে যাবে, এ বিষয়টি উল্লেখ করে তিনি সবাইকে মনে করিয়ে দেন, দুর্ভাগ্যজনক হলো জলবায়ু পরিবর্তনের কোনো ভ্যাকসিন নেই।
এর আগে বিশ্ব উষ্ণায়নের বিষয়টি যখন আসে, তখন তিনি হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন, ‘পৃথিবীতে মানুষের জীবন রক্ষায় আরও অনেক বেশি টেকসই ব্যবস্থা এবং বিনিয়োগের প্রয়োজন হবে।’
কেবল ২০১৯ সালেই বিশ্ব ৩০৮টি প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলে পড়েছে, যার মধ্যে ৭৭ শতাংশ জলবায়ু বা আবহাওয়া সম্পর্কিত। এতে প্রায় ২৪ হাজার ৪০০ মানুষ মারা গেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত এক দশকে আবহাওয়া ও জলবায়ু সম্পর্কিত প্রাকৃতিক দুর্যোগে ৪ লাখ ১০ হাজারেরও বেশি মানুষ মারা গেছে, যাদের বেশিরভাগ দরিদ্র দেশগুলোতে বসবাস করতেন। দুর্যোগগুলোর মধ্যে দাবদাহ ও ঝড় সবচেয়ে মারাত্মক হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে সংস্থাটির প্রতিবেদনে।
আইএফআরসির অনুমান, আগামী এক দশকে ৫০টি উন্নয়নশীল দেশকে পরিবর্তিত জলবায়ুর সাথে খাপ খাইয়ে নিতে সহায়তা করতে প্রায় ৫০ বিলিয়ন ডলারের প্রয়োজন হবে।
সংগঠনটি দুঃখ প্রকাশ করে বলেছে, জলবায়ু পরিবর্তন প্রতিরোধ ও প্রশমন ব্যবস্থায় এখন পর্যন্ত যে পরিমাণ অর্থ ব্যয় করা হয়েছে, তার বেশিরভাগ ঝুঁকির মধ্যে থাকা উন্নয়নশীল দেশগুলোতে যায় না।
শাপাগেইন বলেন, আমাদের প্রথম দায়িত্ব হলো যেস সম্প্রদায় জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে তাদের রক্ষা করা। বিশ্ব সম্মিলিতভাবে এটি মোকাবিলা করতে ব্যর্থ হচ্ছে সেটা সংস্থার গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে বলেও সতর্ক করেন তিনি।
তিনি বলেন, যেখানে জলবায়ু ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি এবং যেখানে জলবায়ু সম্পর্কিত তহবিল যায় তার মধ্যে বিস্তর ফারাক রয়েছে। এই বিচ্ছিন্নতা অনেকের জীবন কেড়ে নিতে পারে।