বৃহস্পতিবার, ০৬ নভেম্বর ২০২৫, ১২:৪৮ অপরাহ্ন
ওয়েব ডেস্ক: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ভাষাবিজ্ঞান বিভাগে মাস্টার্স প্রোগ্রাম পরিচালনার পদ্ধতি নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। তাদের অভিযোগ, ছয় মাসের সেমিস্টার মাত্র চার মাসে শেষ করার তাড়ায় ক্লাস, পরীক্ষা ও ফিল্ডওয়ার্ক এমনভাবে নেওয়া হচ্ছে যে শেখার সুযোগ উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে।
২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের ভাষাবিজ্ঞান বিভাগে মাস্টার্সে অধ্যানরত শিক্ষার্থীদের থেকে জানা যায়, তাদের ভর্তি কার্যক্রম শেষ হয়েছে ৪ নভেম্বর। আর এই ভর্তি শেষ হওয়ার ১ মাস পরেই শুরু হতে যাচ্ছে সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, পাঠ বোঝা, আলোচনা, বিশ্লেষণ বা গবেষণার সময় না দিয়ে ধারাবাহিকভাবে পরীক্ষা ও মূল্যায়নে ব্যস্ত রাখা হচ্ছে। ফলে জ্ঞান অর্জনের স্বাভাবিক প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়ে শিক্ষা কার্যক্রম পরিণত হয়েছে শুধু পরীক্ষাভিত্তিক চাপের এক ধারায়। এখানে শিক্ষা নয়, চলছে শুধু পরীক্ষা।
শিক্ষার্থীরা জানান, ৪র্থ বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষা শেষ হয় ৩০ জুলাই। এর ঠিক দুই সপ্তাহেরও কম সময়ের ব্যবধানে শুরু করা হয় মাস্টার্স প্রোগ্রাম। অন্যান্য বিভাগের সাথে সমন্বয় রেখে আগামী বছর থেকে মাস্টার্স শুরুর জন্য শিক্ষার্থীরা চেয়ারম্যান বরাবর আবেদন করলেও সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামত উপেক্ষা করে আবেদনটি নাকচ করা হয়।
এর আগে মিডটার্ম পরীক্ষার পরদিনই প্রস্তুতির সময় না দিয়ে শিক্ষার্থীদের রাজশাহীতে তিন দিনের ফিল্ডওয়ার্কে পাঠানো হয়। ফিল্ডওয়ার্ক শেষে বিভাগে ফিরে শিক্ষার্থীরা জানতে পারেন, সেমিস্টারের ফাইনাল পরীক্ষা ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহেই নেওয়া হবে অর্থাৎ ক্লাস শুরুর মাত্র সাড়ে তিন মাসের মাথায়।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, এত স্বল্প সময়ে সিলেবাস সম্পন্ন করা এবং বাস্তব শেখার পরিবেশ নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। আমরা শিক্ষার্থী থেকে পরীক্ষার্থী হয়ে যাচ্ছি। নতুন কিছু শেখার সুযোগ বা সময় কোনোটাই দেওয়া হচ্ছে না।
অর্থনৈতিক দিক থেকেও অনেক শিক্ষার্থী বিপাকে পড়েন। মাস্টার্সে ভর্তির জন্য মাত্র দুই সপ্তাহের মধ্যে বিভাগ, হল ও ফিল্ডওয়ার্ক মিলিয়ে প্রায় ১৬ হাজার টাকা সংগ্রহ করতে বাধ্য হন অনেকে, যা আর্থিকভাবে দুর্বল শিক্ষার্থীদের জন্য ছিল গুরুতর চাপের বিষয়।
এ ছাড়া প্রতিদিন প্রায় তিন থেকে চারটি ক্লাস থাকায় শিক্ষার্থীদের দুপুরের খাবারের সময় পর্যন্ত মিলছে না বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। সেমিস্টারের স্বল্প মেয়াদে ফাইনাল পরীক্ষা নেওয়ার তাড়াহুড়ার কারণে অফলাইনের পাশাপাশি অনলাইনেও ক্লাস নেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভাষাবিজ্ঞান বিভাগের মাস্টার্সের এক শিক্ষার্থী বলেন, “৪র্থ বর্ষের ফাইনাল শেষ হতে না হতেই দুই সপ্তাহের মধ্যে মাস্টার্স শুরু হলো। মাত্র দুই মাসের মাথায় মিডটার্ম, তার পরদিনই ফিল্ডওয়ার্ক, আর এখন সাড়ে তিন মাসের মধ্যেই ফাইনালের প্রস্তুতি নিতে হচ্ছে। এভাবে তড়িঘড়ি করে সেমিস্টার চালালে নতুন কিছু শেখার সুযোগই থাকে না। আমরা শিক্ষার্থী থেকে পরীক্ষার্থী হয়ে যাচ্ছি। তার ওপর ভর্তির অল্প সময়ে প্রায় ১৬ হাজার টাকা ম্যানেজ করতে গিয়ে অনেকে আর্থিক চাপের মধ্যেও পড়েছে।”
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নারী শিক্ষার্থী বলেন, “মিডটার্ম আর ফিল্ডওয়ার্কের জন্য পর্যাপ্ত সময় পাইনি। প্রতিদিন তিন-চারটি ক্লাস, তাড়াহুড়া পরীক্ষা, আর অফলাইন-অনলাইন ক্লাস মিলিয়ে মানসিক চাপ এমন বেড়ে গেছে যে এখন শুধু পরীক্ষার জন্যই যেন আমরা লড়ছি, শেখার জন্য নয়।”
নাম প্রকাশ না করার শর্তে আরেক শিক্ষার্থী বলেন, অনেকটা তড়িঘড়ি করেই শুরু ও শেষ করছে ভাষাবিজ্ঞান বিভাগের মাস্টার্স প্রোগ্রাম। মানসিক চাপ ও অশান্তিতে পড়ছে বিভাগের শিক্ষার্থীরা। ৪র্থ বর্ষের ফাইনাল শেষ হয় ৩০ জুলাই। তার ঠিক দু’সপ্তাহেরও কম সময়ে মধ্যে শুরু করা হয় মাস্টার্স প্রোগ্রাম। মাস্টার্স শুরু হওয়ার দুমাসের মাথাতেই মিডটার্ম পরীক্ষা নেওয়া হয়। পরীক্ষার পর দিনই রাজশাহীতে ফিল্ডওয়ার্কের জন্য নিয়ে যাওয়া হয়। তিন দিনের ফিল্ডওয়ার্ক শেষে ক্লাসে ফিরতেই বলা হয় যে তাদের ফাইনাল পরীক্ষা ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে নেওয়া হবে। এতে বিপাকে পড়েছি আমরা।
শিক্ষার্থীদের এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ভাষাবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান সহযোগী অধ্যাপক ড. মনিরা বেগম ঢাকা পোস্টকে বলেন, “ওদের পরীক্ষা সম্ভবত ডিসেম্বরের ১৭ বা ১৮ তারিখ থেকে শুরু হবে। ইংরেজি বিভাগ আমাদের চাইতেও এক মাস এগিয়ে আছে। আমাদের সিলেবাস শেষ না হলে আমরা কখনোই পরীক্ষা নেই না। তিন মাসে সেমিস্টার হলে তো বছরে চারটা সেমিস্টার শেষ হয়ে যেত! তাহলে আমরা এক বছর পিছিয়ে আছি কেন? আমাদের সেমিস্টারের ছয় মাসের মধ্যে প্রায় সাড়ে তিন মাস ক্লাস হয়।”
তিনি বলেন, “পরীক্ষা হয় এক মাস, আর রেজাল্ট প্রকাশ পায় ১৫ দিনের মধ্যে। প্রিপারেটরি লিভ থাকে আরও ১৫ দিন। এটা আমরা অনেক সময় দিই না, কিন্তু এই বছর ছেলেমেয়েরা চাওয়ায় আমরা প্রিপারেটরি লিভ দিচ্ছি। নিয়ম অনুযায়ী আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের সিস্টেমে সাড়ে তিন মাস ক্লাসই হয়। আমরা কখনোই সিলেবাস শেষ না করে পরীক্ষা নেই না।”
বিভাগীয় চেয়ারম্যান আরও বলেন, “শিক্ষার্থীরা যদি কোনো আবেদন করে, সেটা অবশ্যই বিবেচনা করা হয়। আমার খারাপ লাগছে যে আমার কাছে না এসে আপনাদের কাছে কেন জানাবে? ওদের তো সবসময় আমার সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগের সুযোগ থাকে। ‘ম্যাডাম, এমন হয়েছে’, বললেই আমি শুনি। আমরা সবসময় ওদের সমস্যাগুলো সমাধানের চেষ্টা করি।”
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. মামুন আহমেদ বলেন, শিক্ষার্থীরা এই ব্যাপারে কোনো অভিযোগ দেয়নি, যদি এমন কিছু হয়ে থাকে আমি যথাযথ ব্যবস্থা নেবো।