স্পোর্টস ডেস্ক: বিশ্বকাপ ক্রিকেটে নিউজিল্যান্ডের মতো আর এক দুর্ভাগার নাম দক্ষিণ আফ্রিকা। এক সময় কিউইরা যেমন সেমিফাইনালের বেড়াজালে আটকে থাকতো, দক্ষিণ আফ্রিকার অবস্থাও তেমন। সেমিফাইনালের বাধা তারা টপকাতে পারেনি কখনোই।
অন্য সব প্রতিষ্ঠিত ক্রিকেট দলগুলোর বিশ্বকাপের সঙ্গে রয়েছে দৃঢ় সম্পর্ক। দক্ষিণ আফ্রিকা অবশ্য তেমনটা নয়। বিশ্বকাপ অঙ্গনে তাদের পদচারণা অনেক পরে। ১৯৭৫ সালে বিশ্বকাপ শুরু হয়। ১৯৯২ সালে পঞ্চম আসর থেকে বিশ্বকাপ খেলা শুরু করে প্রোটিয়ারা।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ২২ বছর নির্বাসিত থাকায় প্রথম চারটি বিশ্বকাপে অংশ নিতে পারেনি তারা। নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে ফেরার পর প্রতিটা বিশ্বকাপে দক্ষতার পরিচয় দিয়ে চলেছে তারা। প্রথম আসরেই পৌঁছেছিলো সেমিফাইনালে। এ পর্যন্ত মোট আটটি বিশ্বকাপে খেলেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। এরমধ্যে চারটিতেই শেষ চারে পৌঁছানোর কৃতিত্ব দেখিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা।
বিশ্বকাপ এবং দক্ষিণ আফ্রিকার নাম- আলোচনায় উঠে আসলে ১৯৯২ সালের বিশ্বকাপের সেমিফাইনালের সেই দৃশ্য সবার সামনে চলে আসে। দক্ষিণ আফ্রিকা ও ইংল্যান্ডের মধ্যে অনুষ্ঠিত হয়েছিলো সেমিফাইনাল ম্যাচটি। দুর্দান্ত ফর্মে থাকা দক্ষিণ আফ্রিকা সেমিফাইনালে উঠে এসেছিল।
কিন্তু এখানে তারা ভাগ্যের নির্মম পরিহাসের শিকার হয়। সেমিফাইনালে ম্যাচ জিততে শেষ ১৩ বলে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রয়োজন ছিল ২২ রান। এ সময় বৃষ্টি নামে, বৃষ্টির পর যখন খেলা শুরু হয় তখন বৃষ্টি নিয়মে তাদের মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ার অবস্থা হয়। বৃষ্টির কারণে তাদের ২ ওভার কাটা পড়ে। কিন্তু রান কমেনি। অর্থাৎ ম্যাচ জিততে হলে তাদেরকে ১ বলে করতে হবে ২২ রান। অসম্ভব কাজটি সম্ভব হয়নি।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরেই তারা যে চমক দেখিয়েছিল এ ঘটনায় তা যেন এক ফুৎকারে মিইয়ে গেলো। ১৯৯৯ ও ২০০৩ বিশ্বকাপেও ঠিক এ ধরনের দুই থেকে তিনটি ঘটনার শিকার হয়েছিলো তারা। যে কারণে দক্ষিণ আফ্রিকার নামই হয়ে গেছে, চোকার্স।
ওয়ানডে ক্রিকেটে দক্ষিণ আফ্রিকার সেই জৌলুস এখন কিছুটা অনুপস্থিত। ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে দলে। দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে যে সব ক্রিকেটার ক্রিকেটাঙ্গন দাপিয়ে বেড়াতেন, বয়স আর সময়ের কারণে তাদের কেউই এখন দলে নেই। উপযুক্ত রিপ্লেসমেন্ট তারা এখনো পায়নি।
যে কারণে একটা সময়ে র্যাংকিংয়ের শীর্ষে থাকা দল প্রোটিয়ারা এখন ছয়ে। ১৯৯৬ সালে র্যাংকিংয়ের সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছিল তারা। বর্তমানে থাকা ছয় নম্বর অবস্থানটাও সুদৃঢ় নয়। যে কেনো সময় এ স্থানটিও হারাতে পারে তারা। কেননা একাধিক দল তাদের ঘাড়ের ওপর নিঃশ্বাস ফেলে চলেছে।
একটা সময় যে দক্ষিণ আফ্রিকা দাপটে প্রতিপক্ষ দলগুলো কম্পমান ছিল সেখানে যে কোনো দলের কাছে সিরিজ হারানোটা তাদের জন্য খুবই স্বাভাবিক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। সর্বশেষ দশটি ওয়ানডে সিরিজের দিকে তাকালে তা ভালোভাবে স্পষ্ট হবে। মাত্র তিনটি সিরিজে তারা সাফল্যের হাসি হেসেছে। চারটিতে হেরেছে, আর তিনটি ছিল অমীমাংসিত।
যে তিনটি সিরিজ তারা জিতেছে তার একটিতে প্রতিপক্ষের নাম নেদারল্যান্ডস। অন্য দুটো অবশ্য এ সময়ের দাপুটে দল ভারত ও ইংল্যান্ড। জয় পাওয়া তিনটি সিরিজই তারা নিজেদের মাটিতে খেলেছে। তাদের বিপক্ষে জয় পেয়েছে বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তান। শ্রীলঙ্কা নিজেদের মাটিতে জিতলেও বাংলাদেশ ও পাকিস্তান জিতেছে তাদের মাঠে গিয়ে।
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার এবারের বিশ্বকাপ মিশন শুরু হচ্ছে। ৭ অক্টোবর দিল্লিতে হবে এ ম্যাচটি। এরপর একে একে দক্ষিণ নিজেদের শক্তির পরিচয় দিতে মুখোমুখি হবে অস্ট্রেলিয়া, নেদারল্যান্ডস, ইংল্যান্ড, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, নিউজিল্যান্ড, ভারত ও আফগানিস্তানের। ১০ নভেম্বর তারা গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে মাঠে নামবে।
বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ সাফল্য না পেলেও ১৯৯৮ সালে প্রোটিয়ারা চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জয় করেছিল। আইসিসির অধীনে এটাই তাদের একমাত্র সাফল্য। কমনওয়েলথ গেমসেও তারা একবার সোনা জিতেছে।
বিশ্বকাপে সেমিফাইনাল পর্যন্ত দক্ষিণ আফ্রিকার দৌড় হলেও মোট ম্যাচ জয় বেশ ঈর্ষনীয়। বিশ্বকাপের আট আসরে এ পর্যন্ত তারা ৬৪টি ম্যাচ খেলেছে। ৩৮ ম্যাচ জয় তাদের, হেরেছে ২৩ ম্যাচ। শতকরা হিসেবে ম্যাচ জয়ের সংখ্যা ৬১.৯০।
১৯৯১ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট আসার পর এ পর্যন্ত তারা ৬৫৪টি ম্যাচ খেলেছে। জয় ৩৯৯ ম্যাচে, হার ২২৮ ম্যাচে। জয় পরাজয়ের শতকরা হিসেবে তারা সবার উপরে।
তাইতো কুইন্টন ডি কক, টেম্বা বাভুমা রাশি ফন ডার ডুসেন, এইডেন মার্করাম, হেনরিখ ক্লাসেনের ওপর আস্থা রাখা যায়। আবার লুঙ্গি এনগিদি, সিসান্দা মালাগা কিংবা আন্দিল পেহলুকাইয়ো বল হাতে যে কোনো সময় দলকে ম্যাচে ফিরিয়ে আনার সক্ষমতা রাখেন।