ভোলা সংবাদদাতা: বীর মু্ক্তিযোদ্ধা গাজী আব্দুর রউফ ভোলা জেলার বোরহানউদ্দিন উপজেলার ৪নং কাচিয়া ইউনিয়নের সম্ভ্রান্ত পরিবারে ১৯৪৪ সালের ২৭ এপ্রিল জন্মগ্রহণ করেন। বাবা আব্দুল হাই, মাতা শামর্থ ভানু।
তারুণ্যে পদার্পণ করেই তিনি পূর্ব পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ইস্টবেংগল রেজিমেন্টে যোগ দেন। অকুতোভয় এ সাহসী সৈনিক তাঁর কর্মজীবনে নানা প্রতিকুলতার মাঝেও রেজিমেন্টের বিভিন্ন ইভেন্টে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখেন। এরমধ্যে, ২৯ বার হেলিকপ্টার হতে জাম্প উল্লেখযোগ্য। তাঁর কর্মজীবনে তিনি পাকিস্তান, রাওয়ালপিন্ডি, পেশোয়ার ও করাচিতে বীরত্বের সাথে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭১ সালের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে তিনি প্রথম যশোর সেনানিবাসে বিদ্রোহ করে মুক্তিযুদ্ধের বীর সেনানী হিসেবে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন।
গোপালগঞ্জের পাইককান্দিসহ পুরো জেলায় তাঁর সাহসী গেরিলাযুদ্ধে পাকহানাদার বাহিনী আতংকিত ও দিশেহারা হয়ে পড়ে।যুদ্ধ বিজয়ের শেষদিকে সাথী যোদ্ধাদের বাঁচাতে গিয়ে ডান হাতে পাঁচটি গুলিবিদ্ধ হন। এসময় শত্রু পক্ষের ছয়জন ঘটনাস্থলে মারা যান। অতঃপর বহু প্রতিকুল পথ পেরিয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রউফ চিকিৎসার জন্য ভারতে যান। তিনিই প্রথম ভোলা জেলার মুক্তিযোদ্ধা ভারতে প্রবেশ করেন। সেখানে তিনি মুক্তিযুদ্ধের সেনাপতি কর্ণেল এমএজি ওসমানী সহ দেশের বরেন্য রাজনীতিবিদের সান্নিধ্য পান।ত্রিশ লাখ শহীদ ও দু’লাখ মা-বোনের সম্মানের বিনিময়ে দেশ স্বাধীন হলো। জাতি পেল লাল সবুজের পতাকা এবং নিজস্ব মানচিত্র। মুক্তিযোদ্ধারা খেতাব পেল জাতির সর্বকালের শ্রেষ্ঠ সন্তান। বীর মুক্তিযোদ্ধা গাজী আব্দুর রউফের মতো সব মুক্তিযোদ্ধার মুখে স্বাধীনতার প্রাপ্তির হাসিই যেন একটি বাংলাদেশ!
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান, কর্ণেল এমএজি ওসমানীসহ স্বাধীনতা পরবর্তি শীর্ষস্থানীয় রাজনীতিবিদদের ভালোবাসা ও সান্নিধ্য অর্জন করেন তিনি।স্বাধীনতা পরবর্তি সেনাবাহিনী হতে সেনানায়েক হিসেবে অবসর নেন। এরপর সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে তিনি দীর্ঘদিন চাকরি করেন। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি সদালাপী , ধার্মিক,জনদরদি ও সত্যবাদী হিসেবে সর্বমহলে সমাদৃত ছিলেন।
মু্ক্তিযুদ্ধের ওয়েবসাইটের লাল মুক্তিবার্তায় ক্রমিক নং ০৬০৪০৬০০০৩৮/২০০১, বেসামরিক গেজেট ৩৩৫/১৭এপ্রিল২০০৫, সামরিক গেজেট সেনা ৩২১২ নথিতে তাঁর নাম অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
বীর মুক্তিযোদ্ধা গাজী আব্দুর রউফ ২০১৭ সালের ১২ মার্চ সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তাঁকে ভোলার নিজ বাড়িতে সেনাবাহিনীর গার্ড অব রেজিমেন্টের ক্যাপ্টেন তৌহিদের নেতৃত্বে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন করা হয়। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী আছিয়া বেগম, ৫ ছেলে ও ১ মেয়ে রেখে যান।তাঁর মৃত্যুতে এলাকায় একজন সাদামনের গুণি ব্যক্তিত্বের শুন্যতা অনুভুত হয়।
যতোদিন রবে পদ্মা, মেঘনা, যমুনা বহমান, যতোদিন মুক্তবাংলায় স্বাধীনতার লাল সবুজ পতাকা উড়বে ততোদিন দ্বীপজেলা ভোলার কৃতি সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধা মরহুম গাজী আব্দুর রউফ’র নাম বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে অম্লাণ হয়ে থাকবে।
রিপোর্ট:গাজী মো.তাহেরুল আলম।