পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন আশা প্রকাশ করেছেন যে, রোহিঙ্গারা যেন নিরাপত্তা ও সম্মানের সাথে তাদের বাসভূমি রাখাইনে ফিরে যেতে পারে- সেই পরিবেশ সৃষ্টির জন্য যুক্তরাষ্ট্রের বাইডেন প্রশাসন মিয়ানমারের ওপর রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক চাপ বাড়াবে। তিনি রোহিঙ্গা সংকটের একটি টেকসই সমাধানের উপায় বের করতে দ্বিপক্ষীয় ও বহুপাক্ষীয় পর্যায়ে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে মার্কিন সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
শনিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রকাশিক এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, শুক্রবার ওয়াশিংটন ডিসিতে মার্কিন থিংক ট্যাংক ‘নিউলাইন্স ইনস্টিটিউট অন স্ট্র্যাটেজি অ্যান্ড পলিসির সাথে মতবিনিময়কালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ আহ্বান জানান।
ড. মোমেন আরও বলেন, বাংলাদেশ সরকার তার রোহিঙ্গাবিষয়ক একজন বিশেষ দূত নিয়োগের প্রস্তাব ও রোহিঙ্গা সংকটের একটি টেকসই সমাধান অর্জনসহ মার্কিন সরকারের সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ ও অগ্রণী ভূমিকায় দেখতে আগ্রহী।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ ব্যাপারেও মার্কিন প্রশাসনের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করবেন বলে আশা প্রকাশ করেন। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে অস্থায়ীভাবে আশ্রয় নেয়া এই ১১ লাখ বাস্তুচ্যুত মানুষকে তাদের নিজভূমি মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনই এই রোহিঙ্গা সংকটের একমাত্র সমাধান।
এ সময় মোমেন বাংলাদেশে সরকার কীভাবে কোভিড-১৯ মহামারিকালে রোহিঙ্গাদের কল্যাণে কাজ করেছে তাও তুলে ধরেন। রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে বাংলাদেশ সরকারের সময়োপযোগী পদক্ষেপ নেয়ায় কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়ে একজন রোহিঙ্গাও মারা যায়নি। তিনি অতিঘনবসতিপূর্ণ কুতুপালং শরণার্থী শিবির থেকে কিছু রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে স্থানান্তরের কারণও ব্যাখ্যা করেন।
ইনস্টিটিউটের পরিচালক ড. আজিম ইবরাহিম অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন। অন্যদের মধ্যে জাতিসংঘে সাবেক মার্কিন দূত, ধর্মীয় স্বাধীনতাবিষয়ক মার্কিন কংগ্রেসের কমিশনার এবং প্রখ্যাত সংবাদিক, কংগ্রেস সদস্য, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা, জাতিসংঘের কর্মকর্তা এবং ওআইসির সিনিয়র নেতারা অনুষ্ঠানে সশরীরে ও ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
পরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মর্যাদাপূর্ণ কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশনস (সিএফআর) আয়োজিত ‘বাংলাদেশ-মার্কিন দ্বিপাক্ষীয় সম্পর্ক ও রোহিঙ্গা ইস্যু’ শীর্ষক একটি ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে অংশ নেন। অধিবেশনটি অ্যাম্বাসেডর ইসোবেল কোলম্যান সঞ্চালনা করেন।
ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানটিতে ড. মোমেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিচক্ষণ নেতৃত্ব ও নির্দেশনায় কোভিড-১৯ মহামারি মোকাবিলা করে বাংলাদেশের আর্থসামাজিক উন্নয়ন এবং বাংলাদেশে চলমান কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন কর্মসূচি সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার কথা তুলে ধরেন।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে সাম্প্রতিক আলোচনার উদাহরণ টেনে তিনি দুই দেশের মধ্যকার বিদ্যমান দ্বিপাক্ষীয় অংশীদারিত্বে সন্তোষ প্রকাশ করে কৌশলগত স্তরে এটা আরও বৃদ্ধি পাবে বলে আশা প্রকাশ করেন।
একইদিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ভার্চুয়ালি ইলিনইসের কংগ্রেসওমেন জ্যান স্কাকোওস্কির সাথে বৈঠক করেন। এ সময় জ্যান বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেয়ায় বাংলাদেশের প্রশংসা করেন।
এই বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গা জনস্রোতকে আশ্রয় দিয়ে টিকে থাকতে বাংলাদেশকে মানবিক ও রাজনৈতিক সহযোগিতা করার জন্য ড. মোমেন মার্কিন সরকারকে ধন্যবাদ জানান।
মোমেন মার্কিন মিয়ানমারের ওপর অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপ ও জিএসপি সুবিধা প্রত্যাহারের মতো অধিকতর কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণে মার্কিন সরকারকে প্রভাবিত করতে মার্কিন আইনপ্রণেতা জ্যানের সমর্থন কামনা করেন।
এ সময় উভয়পক্ষ আগামী দিনগুলোতে দু’দেশের মধ্যে আরও সুগভীর সম্পর্ক স্থাপনে সম্মত হয়।
মোমেন গত মঙ্গলবার মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে বৈঠকের পর ফলোআপ হিসেবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার সাথে টেলিফোনে আলোচনা করেন।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও জোরদার এবং নতুন মার্কিন সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করার লক্ষ্যে বাংলাদেশের আগ্রহ ব্যক্ত করার বিষয়টি মার্কিন প্রশাসনকে অবহিত করার জন্য এক সরকারি সফরে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন।