বিশেষ প্রতিবেদন,কলকাতা:
আমফান বিধ্বস্ত বাংলার কাজ ৮০ শতাংশই সম্পূর্ণ হয়েছে বলে সোমবার দাবি করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর সেই দাবি খারিজ করে দিয়েছেন বহরমপুরের সাংসদ তথা লোকসভায় কংগ্রেসের দলনেতা অধীর চৌধুরী। শুধু তাই নয়, মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে চিঠি লিখে জানিয়েছেন, ঝড়ের বিপর্যয় কাটানোর ক্ষমতা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেই। অবিলম্বে বাংলায় সেনা পাঠানো উচিত কেন্দ্রের। প্রধানমন্ত্রীকে অধীর চৌধুরীর এই চিঠি লেখা নিয়ে রাজ্য রাজনীতিতে তুমুল চাঞ্চল্য তৈরি হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত সপ্তাহে বুধবার রাতে ভয়ঙ্কর সুপার সাইক্লোন বয়ে যায় বাংলার ওপর দিয়ে। মারত্মক ক্ষতি হয়ে যায় গ্রামবাংলার। এমনকী, কলকাতারও অবস্থা রীতিমতো সঙ্গীন হয়ে পড়ে। প্রধানমন্ত্রীকে চিঠিতে অধীরবাবু লিখেছেন, ‘বিস্তীর্ণ এলাকায় সমুদ্রের নোনা জল ঢুকে গিয়েছে। ফলে পানীয় জলের তীব্র সঙ্কট দেখা দিয়েছে। সেখানকার মানুষ ভয়ঙ্কর অবস্থার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। শুধু তাই নয়, বাংলার উপকূল ভাগে বিস্তীর্ণ অংশ প্লাবিত। সেখানে ভাসছে মৃত পশুর মৃতদেহ। ফলে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। শুধু তাই নয়, কলকাতার বহু জায়গা এখনও বিদ্যুৎহীন হয়ে রয়েছে। এর ফলে কোটি কোটি মানুষ রীতিমতো দুর্বিষহ জীবন যাপন করছেন।’ আমফান তাণ্ডবের পর এক সপ্তাহ কেটে গিয়েছে। এখনও স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে পারেনি রাজ্য।
যদিও সোমবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এক বিবৃতিতে জানিয়ে দেন, ‘রাজ্যের ভয়াবহতম প্রাকৃতিক দুর্যোগের পর ৮০ শতাংশ এলাকায় জরুরি পরিষেবা স্বাভাবিক হয়ে গিয়েছে। অধিকাংশ শহর এলাকায় জরুরি পরিষেবা চালু হয়ে গিয়েছে।’ কিন্তু মঙ্গলবারও কলকাতা–সহ দক্ষিণবাংলার বিভিন্ন জায়গায় বিদ্যুৎ ও পানীয় জলের দাবিতে বিক্ষোভ দেখান সাধারণ মানুষ। তার মধ্যে চূড়ান্ত অপ্রীতিকর ঘটনাটি ঘটে কলকাতার দক্ষিণ শহরতলির নাদিয়াল থানার কাঞ্চনতলা এলাকায়। এখানে বিক্ষোভ দেখানোর সময় দুই পক্ষের মধ্যে সঙ্ঘর্ষ বেঁধে যায়। ইটবৃষ্টি শুরু হয়ে যায় তাদের মধ্যে। সেই সময় মেটিয়াবুরুজের তৃণমূল বিধায়ক আবদুল খালেক মোল্লা ঘটনাস্থলে গেলে তাঁর মাথায় ইট পড়ে ফেটে যায়। পরে অবশ্য বিশাল পুলিশ বাহিনী গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
রাজ্যের বর্তমান অবস্থা নিয়ে খুশি নন কংগ্রেস নেতা অধীর চৌধুরীও। রাজ্য সরকারের তীব্র সমালোচনা করে তিনি সরাসরি প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখেছেন। তাঁর বক্তব্য, ‘আমফান বিপর্যয়ের পরবর্তী পরিস্থিতির মোকাবিলায় পুরোপুরি ব্যর্থ রাজ্য প্রশাসন। বিপর্যস্ত এলাকায় এখনও খাদ্য ও ত্রাণ পৌঁছচ্ছে না। কেন্দ্রীয় সরকারের উচিত বিষয়টি নিয়ে রাজ্যের সঙ্গে কথা বলা। তার পর রাজ্য ও কলকাতার স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনতে আরও সেনা পাঠানো হোক। আর সেই সিদ্ধান্ত নিন প্রধানমন্ত্রী।’ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে অধীর চৌধুরীর এই চিঠি লেখার বিষয়ে রাজ্য সরকারের প্রতিক্রিয়া জানা যায়নি। তবে বিষয়টি যে রাজ্যের মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারকে বেশ অস্বস্তিতে ফেলবে, সে বিষয়ে নিশ্চিত রাজ্যের রাজনীতি বিশেষজ্ঞরা।