প্রত্যয় নিউজডেস্ক: প্রতিবাদ ও বিক্ষোভসহ প্রশাসনের নানা পদক্ষেপের মাঝেও কুমিল্লায় বাড়ছে যৌন হয়রানি, শ্লীলতাহানি ও ধর্ষণের মতো ঘটনা। প্রতিদিন ঘটে যাওয়া এসব ঘটনায় শিশু-কিশোরী, তরুণী, স্কুল-কলেজ মাদরাসা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী এবং কর্মজীবী নারীদের নিয়ে উদ্বিগ্ন প্রায় প্রতিটি পরিবার।
কুমিল্লায় চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৯ মাসে তিন শতাধিক নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। এসবের মধ্যে অধিকাংশই ধর্ষণজনিত ঘটনা।
এদিকে যৌন হয়রানি থেকে রক্ষা পেতে আত্মরক্ষার প্রশিক্ষণ নিচ্ছে কুমিল্লার মেয়েরা। তাদের মধ্যে অধিকাংশই স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ও মাদরাসায় পড়ুয়া ছাত্রী। এ ছাড়াও চাকরিজীবী এবং গৃহিণীরাও প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। প্রশিক্ষণের মাধ্যমে মানসিক মনোবল আর কিছু কৌশল আয়ত্ত করলে মেয়েরা যৌন হয়রানি থেকে রক্ষা পেতে পারেন বলে মনে করেন প্রশিক্ষক।
জান যায়, কুমিল্লা ড্রাগন কারাতে অ্যাসোসিয়েশনের উদ্যোগে কুমিল্লা নগরীর সালাউদ্দিন হোটেল এলাকার মেয়েদের আত্মরক্ষায় এক মাসের বিনামূল্যে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। কুমিল্লা জেলা ক্রীড়া সংস্থা ও কুমিল্লা ড্রাগন কারাতে অ্যাসোসিয়েশন আয়োজিত ‘ফ্রি সেল্ফ ডিফেন্স ওয়ার্কশপ’ শীর্ষক মাসব্যাপী এ প্রশিক্ষণের উদ্বোধন করেন কুমিল্লা জেলা প্রশাসক মো. আবুল ফজল মীর। শুক্রবার (১৬ অক্টোবর) দুপুরে কুমিল্লা শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত স্টেডিয়াম সংলগ্ন সুইমিংপুল লাগোয়া একটি হল রুমে এ প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত হয়।
এর আগে চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে এ প্রশিক্ষণ শুরু হয় কুমিল্লা নগরীর সালাউদ্দিন হোটেল এলাকার প্রশিক্ষণ সেন্টারে। এতে দুই শতাধিক মেয়ে অংশ নেয়। বাংলাদেশ কারাতে ফেডারেশনের কোচ এস ইসলাম শুভ তাদের আত্মরক্ষায় বিভিন্ন কৌশল সম্পর্কে ধারণা দেন।
প্রশিক্ষণ নিতে আসা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আঞ্জুমা বলেন, পথ চলতে আমাদের অনেক হয়রানির শিকার হতে হয়। এছাড়াও বর্তমানে ধর্ষণের ঘটনা বেড়েছে। তাই আত্মরক্ষার কৌশল শিখতে এখানে আসা। প্রথম দিকের আলোচনা ও শারীরিক কসরতে মনে হচ্ছে আমার আত্মবিশ্বাস বেড়েছে।
ইয়াসমিন নামে চাকরিজীবী এক নারী জানান, তিনি সন্ধ্যায় অফিস থেকে বাসায় ফেরেন। সঙ্গে কোনো পুরুষ সঙ্গী থাকে না। অনেক সময় তিনি বাজে আচরণের শিকার হন। প্রশিক্ষণে এসে নিজেকে রক্ষার কৌশল শেখার চেষ্টা করছেন।
কুমিল্লা ড্রাগন কারাতে অ্যাসোসিয়েশনের প্রশিক্ষক এস ইসলাম শুভ বলেন, দেশে ধর্ষণ,পথে ঘাটে যৌন হয়রানি ও শ্লীলতাহানি মহামারির মতো ছড়িয়ে পড়েছে। এ থেকে রক্ষা পেতে মেয়েদের আত্মরক্ষার কৌশল জানতে হবে। পথে চলতে গেলে তাদের হাত ধরে, ওড়না বা চুল ধরে টানাটানি করে বখাটেরা। বাসে, ট্রেনে বা সিএনজি অটোরিকশায়ও মেয়েদের হয়রানি করা হয়। মানসিক মনোবল আর কিছু কৌশল আয়ত্ত করলে তারা এসব হয়রানি থেকে রক্ষা পেতে পারেন।
তিনি আরও বলেন, কুমিল্লা ড্রাগন কারাতে অ্যাসোসিয়েশন ৪২ বছরের প্রাচীন সংগঠন। সংগঠনের উদ্যোগে মেয়েদের বিনামূল্যে এক মাসের আত্মরক্ষার প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রথম থেকেই মেয়েরা ভালো সাড়া দিচ্ছে। আগেও আমাদের সংগঠন থেকে পাঁচ শতাধিক মেয়ে কারাতে প্রশিক্ষণ নিয়েছে।
মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থা কুমিল্লা শাখার সভাপতি অ্যাডভোকেট নাজমুল আলম চৌধুরী নোমান বলেন, এস ইসলাম শুভ আন্তর্জাতিক মানের কারাতে প্রশিক্ষক। বিনামূল্যে তিনি নারীদের আত্মরক্ষার কৌশল শেখানোর উদ্যোগ নিয়েছেন, যা ব্যতিক্রম।
কুমিল্লা জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক নাজমুল আহসান ফারুক বলেন, সময়ের প্রয়োজনে নারীদের সুরক্ষা দিতে এমন প্রশিক্ষণ অত্যন্ত জরুরি। তাই কুমিল্লা ড্রাগন কারাতে অ্যাসোসিয়েশনের সহায়তায় আমরা বিনামূল্যে নারীদের আত্মরক্ষার প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছি।
নারীদের নিয়ে কাজ করেন জেলার দেবিদ্বার উপজেলার নারী নেত্রী শিরিন সুলতানা। তিনি উপজেলা মহিলা সংস্থার চেয়ারম্যান, জেলা পরিষদ সদস্য এবং কুমিল্লা (উত্তর) জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী। তিনি জানান, নারীদের নিয়ে কাজ করতে গিয়ে প্রায় প্রতিদিনই এমন অনেক সমস্যা আসছে। অনেক সময় নির্যাতিত হয়েও নারী আইনের আশ্রয় নিতে চায় না। নারী আজ ঘরে-বাইরে নির্যাতিত হচ্ছে সমানতালে। প্রধানমন্ত্রী নারীদের নিয়ে ভাবেন বলেই দ্রুততম সময়ে ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড করেছেন।
বেগম রোকেয়া পদকপ্রাপ্ত কুমিল্লার নারী নেত্রী পাপড়ি বসু বলেন, নারীদের নানা প্রলোভনে, প্রতারণার মাধ্যমে এবং নানা প্রযুক্তি ব্যবহার করে ছবি ও ভিডিও ধারণ করে ফাঁদে ফেলে ধর্ষণ করা হচ্ছে। কিছু নারী নির্যাতনের ঘটনা পারিবারিক কারণেও ঘটে থাকে। তবে পথে ঘাটে যাতায়াতসহ সকল ক্ষেত্রে সব বিষয়ে নারীদের পাশাপাশি তাদের অভিভাবকদেরও সতর্ক থাকা উচিত। শুধু আইন করে ধর্ষণ ও নারী নির্যাতন বন্ধ করা যাবে না। নারীদের নিজের কল্যাণেই সতর্ক থাকতে হবে।