1. abrajib1980@gmail.com : মো: আবুল বাশার রাজীব : মো: আবুল বাশার রাজীব
  2. abrajib1980@yahoo.com : মো: আবুল বাশার : মো: আবুল বাশার
  3. farhana.boby87@icloud.com : Farhana Boby : Farhana Boby
  4. mdforhad121212@yahoo.com : মোহাম্মদ ফরহাদ : মোহাম্মদ ফরহাদ
  5. shanto.hasan000@gmail.com : রাকিবুল হাসান শান্ত : রাকিবুল হাসান শান্ত
  6. masum.shikder@icloud.com : Masum Shikder : Masum Shikder
  7. shikder81@gmail.com : Masum shikder : Masum Shikder
  8. riyadabc@gmail.com : Muhibul Haque :

যশোর মনিরামপুরের ভাসমান সেতু যেনো নয়, গ্রামের মানুষের জীবনের গল্প

  • Update Time : বুধবার, ১৪ অক্টোবর, ২০২০
  • ৫৭৯ Time View
প্রত্যয় ডেস্ক, গাজী মো. তাহেরুল আলম, ভোলা প্রতিনিধিঃ অসাধ্যকে জয় করলো নয় গ্রামের মানুষ। তাঁরা যে কাজটি করেছে সেটি শুধু বাংলাদেশ নয়, সারা পৃথিবীর মানুষের সামনে একটি সাহস ও ঐক্যের গল্প হয়ে থাকবে দীর্ঘদিন। পানির ওপর ভাসছে হাজার ফুট দীর্ঘ সেতুটি। আশপাশের নয় গ্রামের মানুষের যোগাযোগের নতুন দ্বার খুলে দিয়েছে এটি। এলাকার ৬০ ব্যক্তি মিলে নিজেদের টাকায় প্লাস্টিকের ড্রাম, লোহার অ্যাঙ্গেল ও শিট দিয়ে সেতুটি নির্মাণ করেছেন। নীল ও লাল রঙের দৃষ্টিনন্দন সেতুটি দেখতে দূরদূরান্ত থেকে প্রতিদিন প্রচুর মানুষ ভিড় করছেন। সেতুটি যশোরের মনিরামপুর উপজেলার রাজগঞ্জ এলাকায় ঝাঁপা বাঁওড়ে অবস্থিত।
উপজেলার ঝাঁপা গ্রাম উন্নয়ন ফাউন্ডেশন নামের সামাজিক একটি সংগঠনের ৬০ সদস্যের প্রতি মাসের জমানো টাকায় সেতুটি বানানো হয়েছে। এটি নির্মাণে খরচ হয়েছে ৫০ লাখ টাকা। সম্প্রতি, যশোরের জেলা প্রশাসক মোঃ আশরাফ উদ্দীন সেতুটি উদ্বোধন করেন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, মনিরামপুর উপজেলার রাজগঞ্জ এলাকায় নয় কিলোমিটার দীর্ঘ ও আধা কিলোমিটার চওড়া একটি বাঁওড় রয়েছে, যা ঝাঁপা বাঁওড় নামে পরিচিত। বাঁওড়ের চারপাশে নয়টি গ্রাম। গ্রামগুলোর মানুষ চলাচলের জন্য এত দিন নৌকা ও মাঝিদের ওপর ভরসা করত। বাঁওড়ের পশ্চিম তীরের ঝাঁপা, লক্ষ্মীকান্তপুর, বালিয়াডাঙ্গা ও ডুমুরখালী গ্রামের মানুষের স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা ও দৈনন্দিন হাটবাজারের জন্য নৌকায় করে পূর্ব তীরের রাজগঞ্জ বাজারে আসতে হয়। পূর্ব পাশের হানুয়ার, চণ্ডিপুর, মোবারকপুর, মনোহরপুর ও খালিয়া গ্রামের মানুষ ব্যবসা-বাণিজ্য, কৃষিকাজসহ বিভিন্ন প্রয়োজনে ওপারে যান। এই নয় গ্রামের মানুষের যোগাযোগে ভোগান্তির কথা ভেবে ভাসমান সেতুটি নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়।
ঝাঁপা গ্রামের জসিম উদ্দিন বলেন, ‘গত ক’দিন আগে আমার বাবা জ্বরে আক্রান্ত হয়। বাড়ি থেকে তাড়াহুড়ো করে ঘাটে এলাম। কিন্তু নৌকা পেলাম দুই ঘণ্টা পরে। এদিকে আমার বাবা অবস্থা ভালো নয়। তাঁর মতে, সেতুটি যদি আরও আগে করা হতো, তাহলে তাঁদের ভোগান্তি কমত।বাঁওড়ের মাঝামাঝি রাজগঞ্জ বাজার থেকে ঝাঁপা গ্রামের ঈদগাহ মাঠ পর্যন্ত এক হাজার ফুট দীর্ঘ ও আট ফুট চওড়া ভাসমান সেতুটি বানাতে চার মাস লাগে। প্লাস্টিকের ড্রামের ওপর লোহার অ্যাঙ্গেল ও শিট দিয়ে সেতুটি তৈরি হয়েছে। সেতুর দুই পাশে বাঁশ দিয়ে আরও ৩০০ ফুট সংযোগ সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। শুষ্ক মৌসুমে এই ৩০০ ফুটের পানি শুকিয়ে যায়।
ঝাঁপা গ্রাম উন্নয়ন ফাউন্ডেশনের সভাপতি মেহেদী হাসান বলেন, ‘নৌকা পেতে দেরি হওয়ায় আমার বাবা ও ভাই অনেকটা বিনা চিকিৎসায় মারা গেছেন। ২০১৪ সালে ঝাঁপা গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সমাপনী পরীক্ষার কেন্দ্র ছিল রাজগঞ্জ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিশুরা নৌকায় করে পরীক্ষা দিতে যাওয়ার সময় বাঁওড়ে নৌকা ডুবে যায়। অপর একটি দুর্ঘটনায় নৌকা থেকে এক শিশু পড়ে ডুবে মারা গেছে। এ রকম অসংখ্য দুর্ঘটনা ঘটত। এ কারণে ঝাঁপা গ্রাম উন্নয়ন ফাউন্ডেশন নামে একটি সামাজিক সংগঠন গত জানুয়ারি মাসে প্রতিষ্ঠা করে ভাসমান সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নিই। প্রতি মাসে সদস্যরা পাঁচ হাজার করে টাকা জমা দিতেন। সদস্যদের কেউ কেউ বেশি টাকাও দিয়েছেন।
ঝাঁপা ইউনিয়ন পরিষদের সুধিসমাজের ক’জন বলেন, ‘নিজেদের পকেটের টাকা খরচ করে স্থানীয় কয়েকজন সেতু নির্মাণের মতো একটি মহৎ কাজ করেছেন। এর জন্য আমরা তাঁদের সাধুবাদ জানাই। স্থায়ীভাবে সেতু নির্মাণের জন্য সরকারের কাছে দাবি রইলো।ভাসমানসেতুর ভাবনা কেন এলো ঝাঁপা গ্রামের ঈদগাহ মাঠ ভরাটের জন্য বাঁওড়ের পানির ওপর ছয়টি প্লাস্টিকের ড্রাম দিয়ে লোহার অ্যাঙ্গেলের ওপর দুটি শ্যালো মেশিন বসানো হয়। ওই ড্রামের কারণে শ্যালো মেশিন পানির ওপর ভেসে থাকত। এ দৃশ্য দেখে সংগঠনের সদস্য মো. আসাদুজ্জমান প্রথমে ভাসমান সেতুর কথা চিন্তা করেন। আসাদুজ্জামান বলেন, ‘বালু উত্তোলনের সময় দেখলাম, ছয়টি ড্রামের ওপরে দুটি শ্যালো মেশিনসহ পাঁচজন মানুষ উঠে কাজ করছেন। তাহলে নিশ্চয়ই ড্রাম ব্যবহার করে ভাসমান সেতু তৈরি করা কঠিন কিছু হবে না। সেই থেকে মাথা খাটানো শুরু করলাম।
সংগঠনের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিজ্জামান বলেন, ‘আসাদ ভাই প্রথমে ভাসমান সেতুর কথা চিন্তা করেন। এরপর আমরা কয়েকজন আইপিএম কৃষি ক্লাবে বসে এ বিষয়ে আলোচনা করি। সিদ্ধান্ত হয় গ্রামবাসীকে নিয়ে একটি বড় বৈঠক করার। ওই বৈঠকে বাঁওড়ে সেতু করার সিদ্ধান্ত হয়। পরীক্ষামূলকভাবে প্রথমে আমরা ১৬টি ড্রামের ওপর লোহার অ্যাঙ্গেল দিয়ে ২০ ফুট লম্বা একটি খাটের মতো বানিয়ে ৩২ জন মানুষ তার ওপর উঠে দেখি সেটি পানিতে ভাসে কি না। এ পরীক্ষা সফল হয়। তখন স্থানীয় বিশ্বাস ইঞ্জিনিয়ারিং নামের একটি লেদ মেশিন কারখানার মালিক রবিউল ইসলামকে সেতু তৈরির দায়িত্ব দেওয়া হয়।রবিউল ইসলাম বলেন, তাঁদের প্রকৌশলগত কোনো শিক্ষা নেই। তবে দেশীয় প্রযুক্তি ব্যবহার করে আট শ প্লাস্টিকের ড্রাম, আটশ মণ লোহার অ্যাঙ্গেল ও দুইশ পঞ্চাশটি লোহার শিট দিয়ে সেতুটি নির্মাণ করা হয়েছে। এই সেতুর ওপর দিয়ে মোটরসাইকেল, ভ্যান-রিকশাসহ ছোট যানবাহন চলাচল করতে পারবে।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ জানায়, এ এক বিস্ময়।! অনেক টাকা খরচ করে দেশীয় প্রযুক্তি ব্যবহার করে স্থানীয় মানুষ একটি সেতু নির্মাণ করেছেন, যার জন্য প্রশংসা করতেই হয়। তবে এ প্রযুক্তি দীর্ঘস্থায়ী নয়। বর্ষা মৌসুমে বাঁওড়ে ঢেউ থাকে। তখন ঝুঁকি থাকবে। এ জন্য দীর্ঘস্থায়ী সেতু করা যায় কি না, এ বিষয়ে যাচাই করে দেখা যেতে পারে। সেই পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে।যে দেশের মানুষ নয় মাসে দেশ স্বাধীন করতে পারে, সেই।দেশের মানুষ দেশ ও জাতির প্রয়োজনে যেকোনো অসম্ভবকে সম্ভব করতে পারবে, প্রয়োজন শুধু পৃষ্ঠপোষকতা।কিন্তু,সরকারের আমলা ও জনপ্রতিনিধিরা বেশিরভাগ সরকারি বরাদ্দ নিয়ে যাচ্ছে বিপরীত দিকে।

Please Share This Post in Your Social Media

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ দেখুন..