নিজস্ব প্রতিনিধি: রাঙ্গামাটি জেলা শহরের ২২ শতাংশ বাসা-বাড়িতে ডেঙ্গু ও চিকনগুনিয়ার বাহক এডিস মশার লার্ভা মিলেছে। জেলা শহরের বিভিন্ন এলাকায় এডিসের উপস্থিতি নিশ্চিতের জন্য সার্ভের (জরিপ)কাজ শুরু করে জেলা সিভিল সার্জন (সিএস) কার্যালয়। সার্ভেতে শহরের ২২ শতাংশ বাসা-বাড়িতে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া গিয়েছে।
জরিপের তথ্যানুযায়ী, জেলা শহরে সবচেয়ে ডেঙ্গুর লার্ভা পাওয়া গেছে কল্যাণপুর এলাকায়। মশক নিধনে দেশব্যাপী কাজ করে থাকে পৌরসভা ও সিটি করপোরেশনসমূহ। তবে খোদ রাঙ্গামাটি পৌরসভা অফিসের সামনেই দুইটি টায়ারেও পাওয়া গিয়েছে এডিসের লার্ভা!
সিএস অফিসের এডিস মশার লার্ভা পরীক্ষার জরিপের তথ্য বলছে, ডেঙ্গু ও চিকনগুনিয়ার বাহক এডিস মশার লার্ভাপ্রাপ্ত বিভিন্ন এলাকার মধ্যে রয়েছে শহরের মাস্টার কলোনী, মসজিদ কলোনী, ওয়াপদা কলোনী, পুরাতন বাস স্টেশন, পাথর ঘাটা, মুসলিম পাড়া, চম্পকনগর, রাঙ্গামাটি পৌরসভা অফিস, কল্যানপুর ও রায় বাহাদুর সড়ক।
এদিকে, মশার বংশবিস্তার ধ্বংসে পৌরসভার মশক নিধন কার্যক্রমে পাশাপাশি জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে বিভিন্ন এলাকায় ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মাইকিং, লিফলেট বিতরণ করছে সিএস অফিস।
জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের কীটতত্ত্ববিদ বিশ্বজিৎ চৌধুরী বলেন,‘সারাদেশের মতো রাঙ্গামাটি জেলাতেও ডেঙ্গুর রোগী পাওয়া যাচ্ছে। দেশে জুনের চেয়ে জুলাই আগষ্ট এ ডেঙ্গু পরিস্থিতির অবনতির কারণে আমরা জুলাইয়ে দুই সপ্তাহব্যাপী জেলা শহরের পাড়া-মহল্লায় একটি সার্ভে শুরু করি। সার্ভে পরিচালনা করে আমরা দেখতে পেলাম শহরের ২২ শতাংশ বাসাবাড়িতেই এডিস মশার লার্ভা পাওয়া যাচ্ছে। জেলা শহরের কল্যানপুর, পাথরঘাটা, মসজিদ কলোনী, ওয়াপদা কলোনী, চম্পকনগর,ফরেষ্ট কলোনীসহ বিভিন্ন পাড়াতেই এডিসের লার্ভা পেয়েছি। তবে কল্যানপুরে এসিডের বিস্তার বেশি রয়েছে। রাঙ্গামাটি পৌরসভা অফিসের দুইটি টায়ারেও পাওয়া গেছে এডিসের লার্ভা। আমরা তড়িৎভাবে লার্ভা ধ্বংসের জন্য বলেছি।’
কীটতত্ত্ববিদ বিশ্বজিৎ চৌধুরী আরও জানান, ‘সাধারণত প্লাস্টিক ড্রাম, ফুলের টব, লোহার ড্রাম, রংয়ের কোটা, টায়ার, প্লাস্টিকের বালতিসহ ইত্যাদি ধরণের পাত্রে জমে থাকা পানিতে লার্ভা পাওয়া গেছে। অন্যান্য মশা প্রজননের ক্ষেত্রে পানির প্রয়োজনীয়তা অনেক থাকলেও এডিস মশা এক চামচ পানির মধ্যেও ডিম ফুটাতে বা প্রজনন করতে পারে। এক্ষেত্রে বাসাবাড়িতে যারা বসবাস করছেন তাদেরকেই প্রধান ভূমিকা রাখতে হবে। আমাদের পক্ষ থেকে ঘরে ঘরে গিয়ে লার্ভা ধ্বংস করার সুযোগ নেই। মানুষের মধ্যে জনসচেতনতা বৃদ্ধির কোনো বিকল্প নেই।’ উপজেলাসমূহের ডেঙ্গু পরিস্থিতি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ডেঙ্গুর মধ্যে বেশিরভাগ রোগী রাঙ্গামাটি শহরের। তবে উপজেলায় রোগী কম। তবে যাতায়াত ব্যবস্থার দুর্গমতার কারণে উপজেলাগুলোতে গিয়ে সার্ভে করা সম্ভব হয়ে উঠেনি।’
সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য বলছে, চলতি বছরে জেলায় মোট ১২৫ জন ডেঙ্গু রোগী পাওয়া গেছে। গত ২৪ ঘন্টায় হাসপাতালে ভর্তিসহ মোট ভর্তি আছেন ৮ জন। সর্বশেষ বুধবার (২৩ আগস্ট) বিকেল পর্যন্ত রাঙ্গামাটি জেলায় রোগীর সংখ্যা দাঁঁড়িয়েছে ১২৫ জনে। এরমধ্যে অধিকাংশ সদর উপজেলার। বাকী উপজেলাসমূহের মধ্যে বিলাইছড়িতে, নানিয়ারচর, কাউখালীতে,বাঘাইছড়িতে ,রাজস্থলীতে, লংগদুতে ও কাপ্তাই উপজেলায় একজন করে রোগী পাওয়া গেছে। ত তবে আশার কথা হলো জেলায় এখনো মৃত্যু নেই।
ডেঙ্গু আক্রান্তের পরিসংখ্যান বলছে, রাঙ্গামাটি জেলার মধ্যে জেলা সদর বা জেলা শহরেই হুহু করে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। এরমধ্যে বেশিরভাগ রোগীই পাওয়া গিয়েছে মূলত জুন-জুলাই- এই দুই মাসে। যেখানে ২২ শতাংশের ওপরে বাসাবাড়িতেই পাওয়া গেছে এডিসের লার্ভা।
জানতে চাইলে রাঙ্গামাটি জেনালের হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক (আরএমও) ডা.শওকত আকবর জানান,‘আজ বুধবার হাসপাতালে আটজন ডেঙ্গু রোগী রয়েছেন। এ পর্যন্ত রাঙ্গামাটি জেনারেল হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে সেবা নিয়েছেন ১২৫ জন। তবে জেলায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু নেই। ১১৭ জন সুস্থ হয়েছে হাসপাতালে ৮ জন ভর্তি রয়েছে।’
রাঙ্গামাটি জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ও জেলা সিভিল সার্জন (সিএস) ডা. নীহার রঞ্জন নন্দী প্রতিবেদককে বলেন, এই পর্যন্ত ১২৫জন সনাক্ত হয়েছে,তার মধ্যে ১১৭ জন সুস্থ, ৮ জন এখানো হাসাপাতালে সুস্থতার পথে। ‘রাঙ্গামাটিতে প্রথম দিকে যেসব রোগী পাওয়া গিয়েছিল বেশিরভাগ জেলার বাহিরে থেকে আক্রান্ত হয়ে এসেছিল। স্বাস্থ্য বিভাগ ডেঙ্গু প্রতিরোধে কাজ করে যাচ্ছে। আমাদের মশক নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির আওতায় আমরা এলাকায় এলাকায় মাইকিং, লিফলেট বিতরণ করা হচ্ছে। ডেঙ্গু মোকাবিলায় সচেতনতার বিকল্প নেই।’
এদিকে, এডিস মশার বিস্তার নিয়ে সার্ভে শেষে পৌর এলাকায় এডিস মশার বংশ বিস্তার রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য গত ২৪ এপ্রিল রাঙ্গামাটি পৌরসভাকে একটি প্রতিবেদন প্রেরণ করেছে সিভিল সার্জন (সিএস) কার্যালয়। প্রতিবেদনে এডিস মশা নিয়ন্ত্রণের জন্য লার্ভানাশক স্প্রে, ফগিং, পরিত্যক্ত পাত্র অপসারণে উদ্যোগ নেওয়ার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে।