আন্তর্জাতিক ডেস্ক: বাংলাদেশ তার সবচেয়ে উত্তাল সময়ের মুখোমুখি হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে শেখ হাসিনা বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে যাওয়ার পর দেশে বিরাজ করছে অস্থিরতা।
এমন অবস্থায় বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতার পাশাপাশি ভারতের সাথে বাংলাদেশের সমীকরণ নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক সংকট পুরোনো নানা দুর্দশা এবং নতুন বিদ্রোহের মিশ্রণের ওপর ভিত্তি করে সৃষ্টি হয়েছে।
শেখ হাসিনা বছরের পর বছর ধরে দুর্নীতি ও নির্বাচনী জালিয়াতির অভিযোগের সম্মুখীন হয়েছেন।
যদিও বাংলাদেশের অর্থনীতি ব্যাপকভাবে বেড়েছে, তবে সবাই সেই প্রবৃদ্ধিতে অংশ নেয়নি। ক্রমবর্ধমান জীবনযাত্রার ব্যয় এবং দুর্বল সামাজিক পরিষেবাগুলোর কারণে জনসাধারণের অসন্তোষ ছিল চরমে। বিরোধী দল ও নেতা-কর্মীদের ওপর হাসিনা সরকারের দমন-পীড়ন সংকটকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
হাসিনার পদত্যাগের পর বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) প্রধান বেগম খালেদা জিয়া মুক্তি পেয়েছেন। তার এই মুক্তি রাজনৈতিক স্বাভাবিক অবস্থা কিছুটা পুনরুদ্ধারের এবং বিরোধীদের আরও উত্তেজিত না করার চেষ্টা বলে মনে করা হয়।
অনেক ইসলামপন্থি দল — বিশেষ করে জামায়াতে ইসলামীর ভূমিকা ছিল গুরুত্বপূর্ণ। জামায়াতে ইসলামী ঐতিহ্যগতভাবে বিএনপিকে সমর্থন করে আসছে। এছাড়া নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস শান্তি ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। ড. ইউনূসের মতো ব্যক্তি এমন অস্থির সময়ে যে শান্তি ও সংলাপের আহ্বান জানাচ্ছেন এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
বাংলাদেশে চলমান পরিস্থিতি ও সংকট ভারতের জন্য ঠিক কোন চ্যালেঞ্জ সামনে এনেছে? ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশী এবং দীর্ঘস্থায়ী মিত্র হিসাবে বাংলাদেশের এসব ঘটনাপ্রবাহ ভবিষ্যতে ভারতের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে বিশাল প্রভাব ফেলবে।
আন্দোলনে ব্যাপক দমন-পীড়ন ও সহিংসতা স্বাভাবিক অর্থনৈতিক কার্যক্রম এবং বহির্বিশ্বের সঙ্গে যোগাযোগকে ব্যাহত করেছে। বাংলাদেশে থাকা বিনিয়োগ নিয়ে ভারতীয় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে।
অর্থনৈতিক আন্তঃনির্ভরতার স্তরের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশে যেকোনও ঝামেলা পশ্চিমবঙ্গ বা আসামের মতো সীমান্তবর্তী রাজ্যগুলোর সাথে ব্যবসা-বাণিজ্যে প্রভাব ফেলতে পারে।
বাংলাদেশে অস্থিতিশীলতা ভারতের জন্য নিরাপত্তা উদ্বেগের প্রধান কারণ। এছাড়া বাংলাদেশের ভেতরে অস্থিতিশীলতা আন্তঃসীমান্ত বিদ্রোহ এবং অবৈধ অভিবাসন বৃদ্ধির বিষয়েও নয়াদিল্লির উদ্বেগ বাড়ায়।
ভারতের নিরাপত্তা বাহিনীকে যেকোনও সম্ভাব্য স্পিলওভার (অন্য দেশে ঘটতে থাকা সম্পর্কহীন ঘটনা থেকে একটি দেশের অর্থনীতিতে যে প্রভাব পড়ে) প্রভাবের জন্য সতর্ক থাকতে হবে।
চলমান স্থিতিশীলতা এবং সহযোগিতা নিশ্চিত করার জন্য উদীয়মান নেতা এবং দলগুলোর সাথে সংশ্লিষ্ট হওয়াটা অপরিহার্য হবে।
জনগণকে (তাদের প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করে) সাহায্য করার জন্য ভারতকে প্রস্তুত থাকা উচিত। অস্থির এই সময়ে বাংলাদেশকে সমর্থন করার জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণ কৌশলগত এবং নৈতিক দায়িত্ব রয়েছে ভারতের।
এছাড়া গৃহহীনদের মানবিক সহায়তা, চিকিৎসা সেবা, খাদ্যের রেশন এবং আশ্রয় প্রদানের মতো পদক্ষেপ হবে অপরিহার্য।
এই সংকট দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে। এই অঞ্চলের বড় দেশ হিসেবে এই সংকটের শান্তিপূর্ণ সমাধান খোঁজার ক্ষেত্রে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে ভারতের ভূমিকার গুরুত্ব রয়েছে।
বর্তমান সময়টি বাংলাদেশের জন্য হিসেব চোকানোর মুহূর্ত এবং সম্ভবত পুনর্জন্মের সময়ও। ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক শুধু দ্বিপাক্ষিক নয়; এটি ইতিহাস, সংস্কৃতি এবং স্বার্থের ওপর ভিত্তি করে একটি অংশীদারিত্বও বটে।
বাংলাদেশের জন্য এই গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে প্রতিবেশী ও ঘনিষ্ঠ বন্ধু হিসেবে ভারতের তাৎপর্য আগের চেয়ে অনেক বেশি হবে। উভয় দেশেরই সেই বন্ধনগুলো মনে রাখা উচিত যা তাদের এই সংকটের সময়ে আগের চেয়ে আরও বেশি ঐক্যবদ্ধ করবে এবং একসঙ্গে কাজ করার সুযোগ দেবে।
এই নিবন্ধটি লিখেছেন কামাক্ষী ওয়াসন। তিনি তিলোত্তমা ফাউন্ডেশনের গ্লোবাল সিওও এবং একাডেমিক প্রোগ্রামের পরিচালক।
সূত্র : হিন্দুস্তান টাইমস