স্পোর্টস ডেস্ক: অনেক আগেই ম্যাচ থেকে ছিটকে যেতে পারত ভারত। কার্যত তাদের লড়াইয়ে টিকিয়ে রাখেন শুভমান গিল। তবে তার বিদায়ও বাংলাদেশের জয়ের পথের বাধা দূর করতে পারেনি। এরপর অক্ষর প্যাটেল ও শার্দুল ঠাকুর চোখ রাঙাতে থাকেন। সেই চোখে চোখ রেখে লড়াইয়ের লাগাম পুরোপুরি নিজেদের করে নিয়েছেন মুস্তাফিজ-সাকিবরা। রুদ্ধশ্বাস ম্যাচে ভারতকে ৬ রানে হারিয়েছে বাংলাদেশ।
শেষ ১২ বলে ভারতের দরকার ছিল মাত্র ১৭ রান। ডেথ ওভারে মুস্তাফিজুর রহমানের কার্যকারিতা সবারই জানা। ৪৮তম ওভারে আক্রমণে এসেই মুস্তাফিজ শার্দুলকে ফেরান। তবে স্বল্প পুঁজি তখনও বাংলাদেশকে স্বস্তিতে রাখতে দিচ্ছিল না। প্যাটেল চারের বাউন্ডারি মেরে আবারও পাল্টা হুমকি দিয়ে রাখেন। এরপরই ফের মুস্তা-র ঝলক। তাকে তুলে মারতে গিয়ে তানজিদ তামিমের তালুবন্দী হন প্যাটেল।
এরপর শেষ ওভারে টাইগারদের প্রয়োজন ছিল এক উইকেট, আর ভারতের সামনে সমীকরণ ৬ বলে ১২ রানের। আগেই দুই উইকেট নিয়ে অভিষেক রাঙানো তানজিম হাসান সাকিব প্রথম তিন বলই ডট দেন। এরপর চতুর্থ বলে মোহাম্মদ শামি চার হাঁকানোয় ম্যাচ প্রায় ফসকে যেতে বসে। এরপর চাপের মুহূর্তে ঝুঁকিপূর্ণ দুই রান নিতে গিয়ে রান আউট শামি। আর সেটাই শেষ হাসি এনে দিয়েছে সাকিব আল হাসানের দলের।
এশিয়া কাপে বাংলাদেশের আর তেমন কিছুই হারানোর ছিল না। কিন্তু আগেই বিদায় নিশ্চিত করা চোট জর্জরিত টাইগারদের জন্য একটি জয় কিছুটা হলেও ওষুধের কাজ দিতো। সাকিব ও তাওহীদ হৃদয়ের পর সেই কাজটা দলের টেল-এন্ডাররা ব্যাট হাতে সুগম করে দিয়েছেন। সেই ধারা বজায় ছিল বোলিংয়েও। শুরুতেই অভিষিক্ত পেসার তানজিম সাকিব উইকেটের সূচনা করেন। নিজের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার শুরুটা রোহিত শর্মার উইকেট দিয়ে করেন তিনি। এরপর ইনিংসে তৃতীয় ওভারেই আবারও তার দাপট। সেইসঙ্গে দারুণ নিয়ন্ত্রিত বল করতে থাকেন এই ম্যাচ দিয়ে একাদশে ফেরা মুস্তাফিজ।
পুরো আসর জুড়েই টপ অর্ডার ব্যর্থতায় ভুগেছে বাংলাদেশ। ব্যাতিক্রম কিছু হয়নি শেষ ম্যাচেও। লিটন-তামিমদের বাজে শুরুর পর অবশ্য দলের হাল ধরেন মিডল অর্ডার ব্যাটাররা। বিশেষ করে সাকিব-হৃদয়। এই দুই জনের ফিফটিতে ভারতের বিপক্ষে লড়াই করার পুঁজি পেল বাংলাদেশ। ২৬৬ রানের লড়াকু পুঁজির জবাবে ভারতকে শুরু থেকে তারা প্রচন্ড চাপের মুখে ফেলে।
অভিষিক্ত তানজিম সাকিবের হাতে প্রথম ওভারেই বল তুলে দেন অধিনায়ক সাকিব। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বল হাতে সাকিবের শুরুটা হল ওয়াইড দিয়ে। তবে ফিরতে খব বেশি সময় নেননি। ওভারের দ্বিতীয় বৈধ ডেলিভারিতেই উইকেটের দেখা পেলেন ২০ বছর বয়সী এই পেসার। রোহিত শর্মা কভার ড্রাইভ করতে গিয়ে পয়েন্টে ধরা পড়েন। ভারত অধিনায়ককে ফিরিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে উইকেটের খাতা খুলেছেন তানজিম সাকিব। এরপর সেই সাকিবের শিকার তিলক ভার্মা। এর আগে সর্বশেষ অনুর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের ফাইনালে তাকে আউট করেছিলেন সাকিব। ২০২০ সালের পর এবারও তার বলে অকৃতকার্য তিলক।
এরপর উইকেটে আসা লোকেশ রাহুল শুরু থেকেই ভুগছিলেন। একপাশে গিল সাবলীল থাকলেও খোলসবন্দি ছিলেন রাহুল। শেষ পর্যন্ত খোলস ছেড়ে বেরিয়ে এসে বড় শট খেলতে গিয়ে ধরা পড়েন। আর আঁটসাঁট বোলিংয়ের পুরস্কার পেলেন শেখ মেহেদী। রাহুল থামেন ৩৯ বলে ১৯ রানে। তার মতোই উইকেটে এসেই হাস-ফাঁস করছিলেন ইশান কিষাণও। বাউন্ডারির জন্য মিরাজকে রিভার্স সুইপের অপশন বেছে নিয়েছিলেন তিনি। আর তাতেই এলবিডব্লিউ’র ফাঁদে পড়েন। ১০০ রান তোলার আগেই টপ অর্ডারের চার উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে যায় ভারত।
সেই চাপ সামলে সূর্যকুমারের সঙ্গে জুটি বাঁধেন গিল। তবে মাঝপথে ধারাবাহিকভাবে সুইপ শট খেলার চেষ্টা করছিলেন সূর্য। সেটারই সুযোগ নিলেন সাকিব। লেংন্থে ফেলা মিডল-অফ স্টাম্পের মাঝামাঝি বলটা মিস করে যান সূর্য। আর তাতেই ২৬ রান (৩৪ বল) করা ডানহাতি এই ব্যাটারের স্টাম্প উড়ে যায়। এরপর ক্রিজে নেমে মুস্তার বলে স্টাম্প হারান জাদেজা। তবে এরই মধ্যে গিল ওয়ানডে ক্যারিয়ারের পঞ্চম সেঞ্চুরি তুলে নেন। এরপর আগ্রাসী হতে থাকা এই ব্যাটারকে ফেরান শেখ মেহেদী। শেষদিকে মুস্তাফিজ, মেহেদী ও তানজিম সাকিবরা আর ভারতীয়দের ম্যাচটি ছিনিয়ে নিতে চাননি।
বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ তিনটি উইকেট নিয়েছেন মুস্তাফিজ। চোট ও ফর্মহীন মুস্তার জন্য এটি অবশ্যই স্বস্তির। এছাড়া শেখ মেহেদী ও তানজিম সাকিব দুটি করে উইকেট নেন। সাকিব ও মিরাজের শিকার একটি করে।
এর আগে টস হেরে বাংলাদেশের ইনিংসের শুরুটা মোটেও ভালো হয়নি। জ্বর থেকে সেরে ওঠে তিন ম্যাচ খেলে ফেলেছেন লিটন দাস। কিন্তু এখনো স্বরূপে ফিরতে পারেননি। আগের দুই ম্যাচে ব্যর্থতার পর আজ তার সামনে সুযোগ ছিল ঘুরে দাঁড়ানোর। কিন্তু সেটা খানিকটা পায়ে ঠেললেন এই ওপেনার। শামির ইন সুইংয়ে বোকা বনে বোল্ড হয়েছেন। খুলতে পারেননি রানের খাতা।
অভিষেকে গোল্ডেন ডাকের দুঃস্মৃতি ভুলে শুরুটা ভালোই পেয়েছিলেন তানজিদ তামিম। শার্দুল ঠাকুরের পরপর দুই বলে দারুণ দুটি চেক শটে কাভার ও মিড অফের মাঝ দিয়ে দুটি চার মেরেছিলেন। কিন্তু পরের ওভারে বোল্ড তিনি। ক্রস সিম ডেলিভারি ছিল। যতটা ভেবেছিলেন, ততটা গতি ছিল না। পুল শটে ইনসাইড-এজে বোল্ড হয়েছেন তামিম। সাজঘরে ফেরার আগে ১২ বলে করেছেন ১৩ রান।
দীর্ঘদিন পর জাতীয় দলে ফিরে সুযোগ হয়েছিল একাদশেও। কিন্তু সেটার সিকি ভাগও কাজে লাগাতে পারলেন না এনামুল হক বিজয়। দ্রুত দুই উইকেট হারিয়ে দল যখন ধুঁকছে তখন দলের বিপদ আরও বাড়িয়েছেন এই টপ অর্ডার ব্যাটার। ১১ বলে ৪ রান করে আউট হয়েছেন তিনি। ফলে ২৮ রানের মধ্যে ৩ উইকেট হারিয়ে বিপদে পড়ে বাংলাদেশ।
দশম ওভারে শার্দুল ঠাকুরকে ফুললেংথ থেকে ফ্লিক করেছিলেন মিরাজ। সরাসরি ক্যাচ গিয়েছিল মিডউইকেটে থাকা অভিষিক্ত তিলকের কাছে। তার বাড়িয়ে দেওয়া হাতে পড়েছিল ক্যাচটি, তিলক রাখতে পারেননি সেটি। একই ওভারে, একই ব্যাটারের ক্যাচ ফেলেছেন সূর্যকুমার যাদবও। অফ স্টাম্পের বাইরের লেংথ বলে জোরের ওপর পাঞ্চ করতে চেয়েছিলেন মিরাজ। দ্বিতীয় স্লিপে থাকা সূর্যকুমার একটু ঝুঁকে ছিলেন। মাথার ওপরে হাত নিয়ে অবশ্য বলের নাগাল পেয়েছিলেন ভালোভাবেই। রাখতে পারেননি। ৩ ও ৫ রানে দুটি জীবন পান মিরাজ। তবে বেশি দূর এগোতে পারেননি। আনলাকি থার্টিনে গিয়ে ঠিকই ধরা পড়েছেন এই ব্যাটার। আক্ষর প্যাটেলকে খেলতে গিয়ে স্লিপে ক্যাচ দিয়েছেন তিনি।
টপ অর্ডারের চার ব্যাটারের দ্রুত বিদায়ে বেশ বিপদে পড়েছিল দল। সেখান থেকে টেনে তুললেন সাকিব। যাকে বলে, সামনে থেকে নেতৃত্ব দেওয়া। উইকেটে এসে দেখে-শুনে ঠান্ডা মাথায় ইনিংস গড়েছেন। তুলে নিয়েছেন ব্যাক্তিগত অর্ধশতক। এই মাইলফলকে পৌঁছাতে খেলেছেন ৬৫ বল।