জওয়োরা সৈকতের এই মর্মান্তিক দৃশ্যটি আমাদেরকে সিরিয়া থেকে আসা ছোট্ট শিশু আইলান কুর্দির কথা মনে করিয়ে দেয়। পাচঁ বছর বয়সি কুর্দি নামের সিরিয়ার শিশুটি ২০১৫ সালে তুরস্কের একটি সৈকতে মারা গিয়েছিল।
এনজিও ওপেন আর্মসের প্রতিষ্ঠাতা অস্কার ক্যাম্পের ২৪ মে প্রকাশিত একটি টুইট থেকে সাম্প্রতিক ঘটনাটির ব্যাপারে জানা যায়। তিনি দেখিয়েছেন, জওয়োরা সৈকতে পড়ে আছে বেশ কিছু শিশুর মৃতদেহ। উল্লেখ্য, জওয়োরা উপকূলটি মূলত লিবিয়া থেকে ইউরোপ যাত্রার সবচেয়ে ব্যবহৃত পয়েন্ট হিসেবে পরিচিত।
মৃত শিশুগুলো সাম্প্রতিক সময়ে লিবিয়া থেকে ইউরোপ অভিমুখে ছেড়ে যাওয়া কোন একটি নৌকায় তাদের মা বাবার সাথে রওনা দিয়েছিল। ইটালিয়ান সাংবাদিক ন্যান্সি পরসিয়া টুইটারে লিখেছেন, “গত দুই সপ্তাহের মধ্যে অভিবাসীদের নিয়ে প্রায় ২০ টি নৌকা জোওয়ারা উপকূল ছেড়েছে। এর মধ্যে ডুবে যাওয়া অভিবাসীদের মৃতদেহ বিভিন্ন উপকূলে ভেসে উঠছে”।
আন্তর্জতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম)‘র মুখপাত্র ফাল্ভিও ডি গিয়াকামো ব্রিটিশ দৈনিক গার্ডিয়ানকে বলেছেন, “লিবিয়া ছেড়ে যাওয়া অনেক নৌকার কোন রেকর্ড এনজিও বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে থাকেনা। সৈকতে ভেসে উঠা লাশগুলো যে এরকম একটি অজানা যাত্রায় ডুবে গিয়েছে তা আমরা অস্বীকার করতে পারিনা৷”
মরদেহগুলো বেশ কিছুদিন সৈকতে পড়েছিল
ইটালিয়ান সাংবাদিক ন্যান্সি পরসিয়া জানান, ২২ মে সকালে স্থানীয় নাগরিক জোওয়ারা সমুদ্র সৈকতে পড়ে থাকা একটি মরদেহ দেখতে পান। পরবর্তীতে দিনের বেলা লাশটিকে লিবিয়ার সেনাবাহিনী উদ্ধার করে নিকটস্থ আবু কামাশ নামক কবরস্থানে দাফন করে।
অন্যদিকে ওপেন আর্মসের প্রতিষ্ঠাতা অস্কার ক্যাম্প এই সাংবাদিক কে নিশ্চিত করেন, “এই মৃতদেহগুলি তিন দিনেরও বেশি সময় ধরে পরিত্যক্ত অবস্থায় সৈকতে পড়ে ছিল৷” তার বক্তব্যের সমর্থনে তিনি ন্যান্সি পরসিয়াকে বেশ কিছু ছবি দেখান। যেখানে দেখা যায় সৈকতে বালির উপরে দুটি শিশুর মরদেহ পড়ে আছে।
অস্কার ক্যাম্প দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, “এই ছবিগুলো ভয়াবহতায় আমি শোকার্ত এবং বাকরুদ্ধ আছি। এই শিশুদের স্বপ্ন এবং আকাঙ্ক্ষা ছিল কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে তাদের নিয়ে কেউ চিন্তা করে না৷”
ব্রাসেলসে অভিবাসন বিষয়ক একটি সম্মেলনে ফরাসি রাষ্ট্রপতি এমানুয়েল মাক্রোঁর সাথে বৈঠককালে ইতালির প্রধানমন্ত্রী মারিও দ্রাগি, সৈকতে পড়ে থাকা মৃতদেহের ছবিগুলোকে “অগ্রহণযোগ্য” বলে মন্তব্য করেছিলেন।
আইওএমের পরিসংখ্যান অনুসারে, চলতি বছর এ পর্যন্ত কমপক্ষে ৬৮৫ জন অভিবাসী ইউরোপে প্রবেশের চেষ্টায় সমুদ্র মারা গিয়েছেন। তাদের মধ্যে বেশিরভাগ লোক টিউনিসিয়া এবং লিবিয়া উপকূল ছেড়ে মধ্য ভূমধ্যসাগরে প্রাণ হারিয়েছেন।
তবে এই সংখ্যাটি আরও বেশি হতে পারে কারণ মধ্য ভূমধ্যসাগরে অনেক জায়গায় কোন উদ্ধারকারী জাহাজ বা এনজিও’র কার্যক্রম নেই। বিশেষত এসএআর জোন বা উদ্ধারের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা হিসেবে চিহিত স্থানে মানবিক উদ্ধার অভিযানের তেমন কোন উপস্থিতি নেয়।
সুত্র :ইনফোমাইগ্রেন্টস