1. abrajib1980@gmail.com : মো: আবুল বাশার রাজীব : মো: আবুল বাশার রাজীব
  2. abrajib1980@yahoo.com : মো: আবুল বাশার : মো: আবুল বাশার
  3. farhana.boby87@icloud.com : Farhana Boby : Farhana Boby
  4. mdforhad121212@yahoo.com : মোহাম্মদ ফরহাদ : মোহাম্মদ ফরহাদ
  5. shanto.hasan000@gmail.com : Rakibul Hasan Shanto : Rakibul Hasan Shanto
  6. masum.shikder@icloud.com : Masum Shikder : Masum Shikder
  7. shikder81@gmail.com : Masum shikder : Masum Shikder
  8. riyadabc@gmail.com : Muhibul Haque :

সত্য ঘটনা অবল্মবনে লিখা “অড জব ছোট কাজ না বলা কাহিনী”

  • Update Time : বুধবার, ৯ সেপ্টেম্বর, ২০২০
  • ৪৪৭ Time View

কিছুটা লোভ, সামান্য ক্ষোভ,

কিঞ্চিত শোধ আর বাকিটা বোধ… সবটা মিলেই মনলোগ, তথা স্বগোক্তি। নিজের কথা।
বিশাল একখানা ঝাড়ু হাতে ফ্যাক্টরির এই মাথা থেকে টেনে ঐ মাথা পর্যন্ত আবর্জনাগুলো নিতে নিতে হঠাৎ চোখ পরলো পাশের চকচকে বড় পলিশড মেটালিক আয়নার মত একটা কিছুতে। থেমে দাঁড়িয়ে একটু নিজেকে দেখলাম। মাথায় মেটাল হ্যাট, পায়ে স্টিল টোড বুট, গায়ে সেফটি ভেস্ট, পরনে কার্গো প্যান্ট, বুকে লোগো দেওয়া টি শার্ট আর হাতে ঝাড়ু ! জ্বি, ঝাড়ু। বাহ্, অসাধারণ এক চিত্র। ভূবন ভোলানো না হলেও, ভুলে যাবার মত ভূবন এটা।
আজকে হলে, ছবিটা তুলে রাখতাম। তখন পারিনি। ক্ষতটা তখনো কাঁচা। গল্প নয় সত্যি। বাস্তবতা। তবে সপ্তাহখানেকের জন্যে।

অড জব। ছোট কাজ, না বলা কাহিনী। হৃদয়ে রক্তক্ষরণের ইতিহাস। কারো কাছে অকারণ লজ্জার, কারো কাছে পরাজয়ের গ্লানি। প্রবাস জীবনে যারা অভ্যস্ত নয়, তাদের বইয়ে এই চ্যাপ্টারটা হয়তো নেই। আমার আছে। আমি মহা গর্বিত কারণ অতি মূল্যবান একটা অধ্যায় আমি খুব দ্রুত পড়েছি যেটা কোন স্কুল কলেজে কোনদিনই শেখা যায় না। ওটা শিখতে হয় বাস্তবের পাঠশালায়।

দু’মাস ট্যাক্সিও চালিয়েছি রাতে। যেমন হেসেছি ঘোর মাতালের মজার কান্ডে, তেমনি আপ্লুত হয়েছি নিগৃহীত পতিতার দুঃখের কাহিনীতে। দেখেছি, বখে যাওয়া ধনীর দুলালের নষ্টামী, আবার মিষ্টি যুগোলের ভাড়া দেবার আর্থিক টানাটানি। ‘ক্যাবি’ বলে তাচ্ছিল্যে ভরা ডাক যেমন কষ্ট দিয়েছে, তেমনি খুশি হয়েছি টপ এক্সিকিউটিভের স্যার বলে সম্বোধনে আর সন্মান করে সামনের সিটে পাশে বসার উষ্ণতায়।

তীর্থের কাকের মত প্যাসেঞ্জারের অপেক্ষায় অন্ধকারে বসে থাকতে থাকতে ভাবতাম, এই আমিই সেই মানুষ, যাকে Sears Roebuck এর মত মার্কিন কোম্পানি সাউথ ইস্ট এশিয়ায় প্রথম সার্ভিস এয়ার্ড দিয়েছে, প্রথম বাংলাদেশি এমপ্লয়ি হিসেবে আমার নামটাই Sears Tower রেজিস্ট্রি করা হয়েছে, দু’চার হাজার লোকের মাঝে ওভারসিস পারফরম্যান্সের জন্যে আমাকেই শুধু ডাকা হয়েছিলো Samdo এর মত সুবিশাল কোরিয়ান কোম্পানির কর্ণধারের পাশের চেয়ারে বসতে মঞ্চে। কোম্পানির পয়সার বিজনেস ক্লাসে চড়ে দেশে দেশে মিটিং কনফারেন্সে হর হামেশা ঘুরে বেড়ানো সেই আমিই এখন গভীর রাতে একাকি ট্যাক্সির ড্রাইভিং সিটে বসে অপেক্ষা করছি, গুড ইভনিং বলে দরজা খুলে ধরে পিছনের সিটে বসিয়ে দেবার জন্যে কাস্টমারকে।
বড্ড বিচিত্র জীবন। প্রতিটা বাঁক কথা বলে। সাথে রেখে যায় কিছু অভিজ্ঞতা আর অল্প কিছু হাড় ভাঙ্গা হালাল পয়সা যেটা শত কোটি অসৎ পথে অর্জিত অর্থের চেয়েও বল আর বরকতে ঢেড় বেশি।

মাস দুয়েক গ্যাস স্টেশনেও কাজ করেছি আর তেল নিয়ে টাকা না দিয়ে পালিয়ে যাওয়া কৃষ্ণাঙ্গ যুবকের পিছে বোকার মত তাড়া করেছি। জানতাম না একটা বুলেটের মূল্য ঐ তেলের চেয়ে অনেক কম তার কাছে।

তবে সবচেয়ে বেশি সময় মহা আনন্দে কামলা দিয়েছি এয়ার ক্যানাডায়। কনকনে ঠান্ডায় মাইনাস ৩৯ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডে কনক্রিটের খোলা রানওয়তে না দাঁড়ালে কোনদিন ওটা লিখে বোঝানো যায় না। অনবরত পা না নাড়লে জুতোর সোল আটকে ধরে রানওয়ের ঝিরি ঝিরি বৃষ্টি বা জমে থাকা একটু পানিতে। অল্প পয়সার বিশাল দায়িত্বের কাজ। গোনা গোনা তেরোটা পরীক্ষায় পাশ করে যবে শিখলাম, কি করে 747 জাম্বো জেটের ইঞ্জিনের আগুন ককপিটে বসেই নেভাতে হয়, কিংবা দুই সিটের সেসনা প্লেনের প্রপেলারের এঙ্গেল বদলালে রিভার্স থ্রাসট হয় অথবা স্টার্ট দিতে কেন কি করে বাইরে থেকে বাতাস দিতে হয় বড় বড় প্লেনগুলোকে, আর কার্গোহলে ওজনের তারতম্যে হলে উড়তে গিয়ে কি সাংঘাতিক পরিণতি হতে পারে টেক অফের সময় পে লোড ডিস্ট্রিবিউশনের গড়মিলে, সেদিনই মিলেছিলো মজার কাঙ্খিত কাজটা। যদিও ট্রেনিং ভিডিওগুলো দেখে আঁতকে উঠেছিলাম, সচল ইঞ্জিনের আস্ত মানুষকে বেখেয়ালে হাঁটার কারনে টেনে নিয়ে দেড় সেকেন্ডের মধ্যে রক্তাক্ত ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র টুকরো করে বার করে দেবার বিভৎস দৃশ্যে। পাক্কা জাত কসাইয়ের মত আচরণ করতে জানে ইঞ্জিনগুলো, একচুল ভুল হলেই।

২০০৫ এ মলিন বদনে যেদিন ছাড়তে বাধ্য হলাম কাজটা, আমি নিশ্চিত মিটিমিটি হেসে স্রষ্টা সেদিন হয়তো বলেছিলেন,…. অপেক্ষা কর, তোর জন্যে আবারো নতুন করে আমি আরেকবার টাকশাল পাঠাবো দেশের মত। পাঠিয়েছেনও তিনি বিনা কৃপনতায়।

তবে ততদিনে ক্লান্ত আমি। সেই কুড়ি বছর বয়স থেকে ফুল টাইম কাজের শুরু আমার। টাকার পেছনে দৌড়াতে আমার মহা আলসেমি আর অনিহা। তাই অনাদরেই পরে আছে ‘মেশিনটা’ বলতে গেলে গত পনেরোটা বছর। আমাকে বাঁচিয়ে রাখবেন বলেই হয়তো মাঝে সাঝে নেড়ে চেড়ে ধুলোটা ঝেড়ে দেন তিনি নিজেই। আর তাতেই দিব্যি চলে যাচ্ছে দিন আমার।

তবে সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি,… আজন্ম গোলাম হয়েও এত অবজ্ঞা করলাম উপরওয়ালাকে, কিন্তু আমাকে অবাক করে দিয়ে, কোনদিনই উনি এতটুকুও অযত্ন করেলেন না আমায়।

কৃতজ্ঞতা কোনদিনই সম্পূর্ণ নয়,
তা যদি শুধুই সংগোপনে হয়।
হোক সে প্রাপক স্বয়ং স্রষ্টা,
কিংবা, কুলহারা নিতান্তই ভ্রষ্টা।

লেখক: রিয়াজ রব্বানী, টরেন্টো, ২০২০

Please Share This Post in Your Social Media

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ দেখুন..