নিজস্ব প্রতিবেদক: কৃষিপ্রধান বাংলাদেশে খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্প খাত অত্যন্ত সম্ভাবনাময়। কিন্তু বাজার চাহিদা নির্ভর শিল্প উন্নয়ন হয়নি। মূলত প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতা, দূরদর্শী উন্নয়ন ভাবনার সীমাবদ্ধতা, অবকাঠামো দুর্বলতা, দুর্বল আইনি ব্যবস্থা, সহায়ক প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সমন্বয়হীনতা শিল্পের উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত করে চলেছে। তবে এসব বাধা দূর করার প্রয়োজন সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে সমন্বিত উদ্যোগ, ভূমির উৎপাদন সক্ষমতা ও জলজ পরিবেশ নিশ্চিত করা ছাড়াও বেশ কিছু সুপারিশ রয়েছে। খোদ বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উল্লেখ করে সুপারিশ করা হয়েছে। কিন্তু সেই সুপারিশের বেশিরভাগ এখনও বাস্তবায়ন হয়নি বলে জানা গেছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাণিজ্য মন্ত্রণালয় পরিদর্শনকালে তিনি কৃষিজাত পণ্যের নতুন নতুন প্রক্রিয়াজাত পণ্য তৈরির কথা বলেছিলেন। একই সঙ্গে রফতানির উদ্যোগ নেওয়ারও নির্দেশনা দেন। পাশাপাশি কৃষিজাত পণ্যের সম্ভাবনা ও উন্নয়ন পরিকল্পনা নিয়ে একটি পথ নকশা তৈরির নির্দেশনা দিয়েছিলেন। এরই ভিত্তিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সেই পথ নকশা প্রতিবেদন তৈরি করে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী যেসব পণ্য প্রক্রিয়াজাত হিসেবে বাণিজ্যিক উপযোগিতা ও রফতানি সম্ভাবনা হিসেবে বিবেচনায় আনা হয়েছে তার তালিকা তৈরি করা হয়েছে। তালিকায় রয়েছে- শাকসবজি, আলু, মাশরুম, কলা, পেঁপে, আম, চিংড়ি, শৈবালজাত খাদ্য, কাঁকড়া, শামুক, কুমির, ডেইরি ও পোল্ট্রিজাত খাদ্য, বোতলজাত পানি, লবণ, মধু ইত্যাদি।
প্রতিবেদনে স্পষ্ট বলা হয়েছে, কৃষিজ খাদ্যসামগ্রীর ভ্যালু চেইনের স্তরগুলো তথা প্রাথমিক কৃষি পণ্যের প্রি ও পোস্ট হার্ভিস্ট পর্যায়, প্যাকেজিং থেকে শুরু করে পরিবহন, সংরক্ষণ ইত্যাদি সব পর্যায়ে ভোক্তার স্বাস্থ্যগত চাহিদাকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না। এসব প্রাথমিক কৃষিজ পণ্য উৎপাদনে ভালো কৃষির ভালো প্র্যাকটিস অনুসরণ না করার ফলে খাদ্য মানের বিষয়টি অবহেলিত থেকে যাচ্ছে। শুধু তাই নয়, প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো উপেক্ষিত। পচনশীল বা দ্রুত নষ্ট হয়ে যায় এমন প্রাথমিক কৃষি পণ্যের উন্নত পরিবহন ও সংরক্ষণ সম্পর্কে কৃষকেরা কোনোভাবেই সক্ষম নয় বলে বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে।
একই সঙ্গে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্পে উৎপাদিত কৃষিজ খাদ্যের মূল্য মূলত বেশ কয়েকটি বিষয়ের ওপর নির্ভরশীল। এর মধ্যে রয়েছে- বিপণনকারী প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা, বাণিজ্য সংগঠনের জোটবদ্ধ অবস্থা, সংযোগ পণ্যের বিপণন প্রক্রিয়ায় মধ্যস্বত্বভোগীদের অপতৎপরতা। বাংলাদেশে খাওয়ার জন্য প্রস্তুত পর্যায়ের খাদ্যের বাজার এখনও ব্যাপকতা লাভ করেনি। তবে তা ধীরে ধীরে সম্ভাবনার দ্বারে এসে পৌঁছাবে। শুধু তাই নয়, এ খাতের অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য পর্যাপ্ত পরিমাণ বাড়বে বলে প্রত্যাশা সংশ্লিষ্টদের।
প্রতিবেদনে বাংলাদেশে খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্পের উন্নয়ন ও কাক্সিক্ষত ফলাফল থেকে শুরু করে বাংলাদেশের সক্ষমতা, বাংলাদেশি খাদ্যসামগ্রীর রফতানি অবস্থা, খাদ্যসামগ্রীর বিশ^বাজার, শস্যজাত প্রাথমিক পণ্যের সমস্যা ও করণীয়, এ ক্ষেত্রে শাকসবজি, ফলমূল, আলু, মাশরুমের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এর পাশাপাশি প্রতিবেদনে চিংড়ি ও অন্যান্য মাছ, অপ্রচলিত জলজ প্রাথমিক খাদ্য, পোল্ট্রিজাত খাদ্য, মৎস্যজাত পণ্য, চিনিজাত পণ্য, খাবার পানি ও মধুর সমস্যা ও করণীয় বিষয়টি এর অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। আর বিশেষভাবে শিল্পের পর্যায়ে প্রক্রিয়াকরণের ক্ষেত্রে সমস্যা ও করণীয় সম্পর্কে সুপারিশ করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তা জানান, আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি মানের খাওয়ার জন্য তৈরি পর্যায়ের কৃষিজ খাদ্য উৎপাদনের মাধ্যমে ২০২১ সালের মধ্যে অভ্যন্তরীণ চাহিদা পূরণ করার পর ছয় বিলিয়ন মার্কিন ডলারের খাদ্যসামগ্রী রফতানি করা সম্ভব। আর ২০৪১ সালের মধ্যে এ খাতের রফতানির আয় ২৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত করা সম্ভব হবে। তবে এর জন্য প্রয়োজন হবে এই শিল্পের বিকাশের জন্য সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে সমন্বিত উদ্যোগ, খাদ্য শিল্প উৎপাদনে উৎসাহিত করা, স্বল্পসুদে ঋণ দেওয়া, কর অবকাশ সুযোগ দেওয়া, আগ্রাসী বিপণন কার্যক্রম গ্রহণ করা।